কলকাতা, 28 অক্টোবর : মোট 24টি ঘাট । কলকাতায় সেই ঘাটগুলিতেই চলছে প্রতিমা নিরঞ্জন । বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিরঞ্জন হওয়ার কথা । কথা মতো বিসর্জনের ঘাটগুলোতে তৎপর রয়েছে কলকাতা পৌরনিগম এবং পুলিশ প্রশাসন । প্রতিমা নিরঞ্জনের পরেই জল থেকে কাঠামো তুলে নেওয়ার কথা পৌরনিগমের । ক্রেনের মাধ্যমে তা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছেও । কিন্তু তারপরেও গঙ্গায় ভাসতে দেখা যাচ্ছে কাঠামো । ফলে দূষণ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে ৷ প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ থেকে পরিবেশ কর্মীরা ।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দশমী এবং একাদশী মিলিয়ে প্রায় 3 হাজার প্রতিমা ইতিমধ্যে বিসর্জন হয়েছে গঙ্গায় । কোরোনা আবহে এবার বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল লালবাজার । বিসর্জনের ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘাটে করা হয়েছে মার্কিং । প্রতিটি ঘাটে থাকছেন DC পদমর্যাদার অফিসার । মোট 3 হাজার পুলিশকর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে বিসর্জন প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্বে । গঙ্গার ঘাটগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং রিভার ট্রাফিক গার্ড । সব মিলিয়ে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থাপনা পাকা । এছাড়াও প্রতিটি বিসর্জনের ঘাটে কাজ করছেন কলকাতা পৌর নিগমের কর্মীরা । তারাই মূলত প্রতিমা নিরঞ্জনের পর ক্রেনের ব্যবহারে কাঠামো তোলার কাজ করছেন । কিন্তু দ্বাদশীর দুপুরে দেখা গেল, 24টি ঘাটের প্রায় প্রতিটিতেই এখনও জলে ভাসছে বর্জ্য । বেশ কয়েকটি জায়গায় কাঠামো এমনভাবে পাড়ে তোলা হয়েছে যে জোয়ারের জলে তা ফের চলে যেতে পারে নদীতে ।
তথ্য বলছে, 2017 সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে গঙ্গা দূষণ রোধে মামলা করেছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত । সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত গঙ্গায় ভাষণ দেওয়া নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যকে । কারণ, গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনের কারণে জল দূষিত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের । কী ধরনের ক্ষতি ?
পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, প্রতিমায় যে রং দেওয়া হয় তাতে ক্রোমিয়াম, সিসাসহ ক্ষতিকর পদার্থ থাকে । প্রতিমা জলে পড়লেই সেই রং দ্রুত জলে মিশে যায় । যা জল দূষণের কারণ । এই সিসা জাতীয় পদার্থের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয় নদীর বাস্তুতন্ত্রের । এরফলেই সম্প্রতি 'ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা' জারি করেছে নির্দেশিকা । সেই নির্দেশিকায় NMCG পশ্চিমবঙ্গ সহ 11টি রাজ্যকে চিঠি দিয়ে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল । সেই নির্দেশিকা সূত্র ধরে উত্তরপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন নিষিদ্ধ করেছে । তবে সব রাজ্য এখনও পর্যন্ত সেই নির্দেশিকা মানেনি । কিন্তু যাতে সেই নির্দেশিকা মানা হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে পুজোর সময় সোশাল মিডিয়ায় চালায় 'নো পলিউশন দুর্গাপূজা' শীর্ষক প্রচার । সেই প্রচারে বলা হয়েছিল, নিরঞ্জনের আগে প্রতিমার গা থেকে পুজোর ফুল, সাজসজ্জা এমনকী প্রতিমার বসন খুলে নিতে হবে । কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, এই নিয়মও পালন করা হয় না ।
গঙ্গার পাড়ে বসে বরানগরের সুরেশ দাস বললেন, “ দেখাই যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত বিসর্জনের বর্জ্য জলে রয়েছে । প্রশাসনের কাঠামো তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা ঠিকমতো তোলা হয়নি । তার ফলে জলের ক্ষতি হচ্ছে । প্রশাসনের উচিত, এ বিষয়ে ব্যবস্থা করা ।"