পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Apr 22, 2020, 8:59 PM IST

ETV Bharat / city

ক্রেতা নয় শুধুই নিস্তব্ধতা ঘিরে রেখেছে ফলের বাজার

মেছুয়া ফলপট্টি ৷ এখানে আগে সারাবছরই থিক থিক ভিড় থাকত ৷ ক্রেতাদের চাহিদা যোগানে কলকাতার মেছুয়া কার্যত 24 ঘণ্টা খোলা থাকত । সেই ব্যস্ততম ফলেরবাজারে এখন নীরবতা । ফলের গাড়ির লাইন নেই, বিক্রেতার ফোন-ব্যস্ততা নেই, মুটেদের ফলের গাড়ি লোডিং আনলোডিং এর দৌড়ঝাঁপ নেই । গত এক মাস ধরে মেছুয়া ফলপট্টিতে শুধুই হাহাকার ।

image
ফল

কলকাতা, 22 এপ্রিল : দেশজুড়ে চলছে লকডাউন ৷ কোরোনার আতঙ্কে গৃহবন্দী মানুষ ৷ কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিস হিসাবে খোলা আছে ফলের দোকান ৷ রকমারি ফলের সম্ভার সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা ৷ কিন্তু দেখা নেই ক্রেতাদের ৷ সুনসান রাস্তা-ঘাট নির্জন বাজারে ফল কেনার কেউ নেই ৷ ফলে হাহাকার ফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৷ আগেই দেখিয়েছি উত্তরবঙ্গের ছবিটা ৷ এবার দেখব দক্ষিণবঙ্গের হাল-হকিকত ৷

কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ওপর মেছুয়া ফলপট্টি ৷ এখানে আগে সারাবছরই থিক থিক ভিড় থাকত ৷ ক্রেতাদের চাহিদা যোগানে কলকাতার মেছুয়া কার্যত 24 ঘণ্টা খোলা থাকত । সেই ব্যস্ততম ফলেরবাজারে এখন শ্মশানের নীরবতা । ফলের গাড়ির লাইন নেই, বিক্রেতার ফোন-ব্যস্ততা নেই, মুটেদের ফলের গাড়ি লোডিং আনলোডিং এর দৌড়ঝাঁপ নেই । গত এক মাস ধরে মেছুয়া ফলপট্টিতে শুধুই হাহাকার । বড় থেকে মেজ, ছোট সব ফল বিক্রেতা এখন ক্ষতির অঙ্ক মিলিয়ে চলেছেন ।

মেছুয়া পট্টি থেকে বাংলাদেশে ফল রপ্তানি করেন পার্থসারথি দাস । দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার নিরিখে এইরকম অবস্থা দেখেননি তিনি । জনতা কারফিউয়ের আগের দিন থেকেই বড় বিপদের আশঙ্কা করেছিলেন । এই সময়টা মোটের ওপর ফলের চাহিদা বেশি থাকে । রসালো ফলের মরশুম । একই সঙ্গে বিভিন্ন পূজা পার্বণে ফলের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে । এবছরও সেভাবেই অঙ্ক কষেছিলেন ।

"আমি কী করব বুঝতে পারছি না । বিক্রি কমে তলানিতে বললেও কম বলা হয় । এই ক্ষতি আগামী দু’বছরে পূরণ করা যাবে কি, না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে,"বলছিলেন পার্থসারথি বাবু ।

আম,তরমুজ, মুসম্বির মত ফলের মরশুম । তরমুজ বাজারে চলে এসেছে । আরও নানান ফল নিয়ম মতো বাজারে আসছে । ফল দ্রুত পচনশীল । ফলে হিমঘরে রেখে সুদিনের অপেক্ষায় থাকার অবকাশ নেই মেছুয়া পট্টির ।

"আমরা তিন হাজার টাকা কার্টুন মানে কুড়ি কেজি আপেল বিক্রি করতাম । এখন তা 1600টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে । অর্ধেক দামে ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি,"আক্ষেপ করছিলেন পার্থসারথি দাস ।

এইসময় গোলাপখাস, তোতাপুরি, বেগুনফুলি আম আসে অন্ধ্রপ্রদেশ, হায়দরাবাদ, বিজয়ওয়াড়া থেকে । লকডাউনের আগে তার বরাত দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু এখন সেই সব গাড়ি রওনা দিয়েও বর্ডারে এসে আটকে । ফলে ফল নষ্ট হওয়াই ভবিতব্য । যে গাড়িগুলো বাজারে ঢুকতে পেরেছে তার দাম পাওয়া কঠিন । যা স্বাভাবিক সময়ে আম পাঁচশো টাকা কার্টুন বিক্রি হত তা এখন 250 টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে । অর্থাৎ বিরাট ক্ষতি । নাসিক থেকে আঙুরের গাড়ি আসে । তার অবস্থাও একই ।

"আপনারা অবস্থা জানতে চাইছেন? আমি কী করে মুখ দেখাব বাড়িতে, তাই ভাবছি । এই ক্ষতি কীভাবে, কতদিনে মিটবে জানা নেই । কিছু ভালো লাগছে না,"অসহায় শোনায় ফল ব্যবসায়ীদের গলা ।

পূজা পার্বন,রমজানে দোকান জমে রতন সাহার । তিনি ফলের ব্যাপারী । মেছুয়া সহ বিভিন্ন জায়গার আড়ত থেকে ফল কিনে বিক্রি করেন । আপাতত চললেও ভবিষ্যৎ কোন পথে জানেন না । মানুষ ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না । ফল শুকিয়ে যাচ্ছে । কেনা দামে বিক্রির সুযোগ থাকছে না ।

সঙ্কটে দক্ষিণবঙ্গের ফল বিক্রিতারা

সংক্রমণের নাম কোরোনা ভাইরাস ৷ আর এই কোরোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে দাপট দেখাচ্ছে গোটা পৃথিবীতে । সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে লকডাউনের আওতায় ভারত ৷ আর এতেই ফাঁপরে পড়েছেন ফল বিক্রেতারা । লকডাউনে ছাড় দেওয়া হয়েছে সবজি বিক্রেতা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ফল বিক্রেতাদের ৷ কিন্তু লকডাউনে ব্যবসায়ীদের সাধারণ দিনের চেয়ে বাণিজ্যিক হারে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ফল ৷ সেই ফল বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা । কারণ দোকান তো খোলা কিন্তু লকডাউনে মানুষ আগের মতন বেরোচ্ছে না । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি মানুষ । তারা যা কিনছে তার পরিমাণও কম । রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়েছে । রাতের বেলা তো বটেই দিনের বেলায়ও থাকছে না মানুষজন ।

চারদিক খাঁ খাঁ করছে । একসময় যে ফল দোকানগুলোতে দেদার ভিড় জমাতো জেলার মানুষজন । ফল কিনতে লম্বা লাইন পড়ে যেত । সেখানে জনশূন্য বিরাজ করেছে । ফলে পাকা ফল প্রতিদিন কেজি কেজি নষ্ট হচ্ছে । পচা ফল ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা । নিজের কেনা দাম তো উঠছেই না উলটে খেসারত দিতে হচ্ছে । মেদিনীপুর শহরের খোদ ব্যবসায়ীরাই শুনিয়েছে সেই আতঙ্কের কথা ।

শহরের ফল ব্যবসায়ী পলাশ দাস, রাজীব রায়রা বলছেন, ‘‘কোরোনার ভয়ে মানুষ এখন বাড়িতে ৷ ফল কী করে বিক্রি হবে । রাস্তায় তো মানুষই নেই । ভয়ে বেরোচ্ছে না ৷ ব্যবসার খুব লোকসান হচ্ছে ।’’ রাজাবাজারে ব্যবসা করতে আসা সঞ্জয় দাস,নিমাই করেরও একই বক্তব্য, ‘‘রাস্তা সকাল থেকেই জনশূন্য । তাছাড়া মানুষের হাতে টাকাও নেই, ফল কিনবে কীভাবে । এইরকম চলতে থাকলে আমাদের না খেতে পেয়ে মরতে হবে । সমস্যা আছে আরও ৷ লকডাউনে মিলছে না গাড়ি ৷ তাই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গাড়িতে ফল আনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ৷ পয়সা দিয়ে কেনা ফল পচে যাওয়ায় ফেলে দিতে হচ্ছে ৷

এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক শংকর দাসের বক্তব্য,‘‘ টাটকা ফল এনে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা । সরকারকে বলব ফল ব্যবসায়ীদের দিকেও একটু নজর দিন ৷ কারণ তাঁদেরও পরিবার-পরিজন রয়েছে । এরকম চলতে থাকলে তাঁরা চরম লোকসানের সম্মুখীন হবেন ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details