কলকাতা, 25 মে : নভেল কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ৷ এই অবস্থায় বহু অনলাইন সংস্থা মাস্ক বিক্রি করছে ৷ পাশাপাশি মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিক্রি করছে অনেকে ৷ কিন্তু অনলাইনে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হতে পারেন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা ৷
চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের এক চিকিৎসক সম্প্রতি অনলাইনে N95 মাস্কের বিজ্ঞাপন দেখেছিলেন ৷ বিজ্ঞাপনে একটি নাম্বার ছিল ৷ সেই নাম্বারে ফোন করে চিকিৎসক জানতে পারেন, সেটি মুম্বইয়ের একটি সংস্থা ৷ এরপর চিকিৎসককে বলা হয়, মাস্ক কিনতে গেলে অর্ধেক টাকা অগ্রিম দিতে হবে ৷ এর জন্য একটি অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেওয়া হয় ৷ একেকটি N95 মাস্কের দাম পড়বে 150 টাকা ৷ তবে এক হাজারটি মাস্ক কিনলে একেকটির দাম পড়বে 105 টাকা করে ৷ সব মিলিয়ে অগ্রিম হিসেবে 52 হাজার টাকা দিতে হবে চিকিৎসককে ৷ চিকিৎসক সেই অ্যাকাউন্টে অগ্রিম টাকা পাঠিয়ে দেন ৷ অভিযোগ, এরপর থেকেই আর কেউ ফোন ধরছেন না ৷ লালবাজার সূত্রে খবর, চিত্তরঞ্জনের চিকিৎসক যে নাম্বারে ফোন করেছিলেন, সেটির সূত্রে ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, জামতাড়া নামে একটি প্রতারণা চক্র এর পিছনে রয়েছে ৷ ব্যাঙ্ক প্রতারণার ক্ষেত্রে এদের নাম সবার প্রথমে রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ৷ ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় জাল বিছিয়ে রাখছে এই ধরনের চক্র ৷ সাইবার নিরাপত্তা ও হ্যাকিং বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “এখন মাস্ক বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে । সেটি না পরে বাইরে কেউই বের হতে পারবেন না । বিশেষ ধরনের মাস্ক সাধারণ দোকান কিংবা e-কমার্স সাইটে সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না । সেই সূত্র ধরেই গজিয়ে উঠেছে বহু ভুয়ো ওয়েবসাইট । তারা সুযোগ বুঝে লোক ঠকাচ্ছে ।’’
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন, “মাস্ক এখন সাইবার প্রতারকদের অস্ত্র হয়ে উঠেছে । প্রয়োজন না থাকলেও অনেক মানুষ সুরক্ষার কারণে N95 এর মতো বিশেষ ধরনের মাস্ক খুঁজছেন । তার খোঁজ করতে গিয়ে ঘটছে প্রতারণার ঘটনা । অনেক সময় ভুয়ো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই প্রতারণা করা হচ্ছে । আবার সোশালল সাইটে মাস্কের ছবি দিয়ে করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন । তাতে দেওয়া থাকছে ফোন নম্বর । সেই ফোন নম্বরে ফোন করলে প্রতারকদের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে । এই নিয়ে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে । তার তদন্ত চলছে । সাধারণ মানুষের কাছে আমার অনুরোধ, অচেনা কাউকে কোনওভাবেই টাকা পাঠাবেন না ।’’
প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি? প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘খেয়াল রাখতে হবে, যে e-কমার্স সাইটে আপনি অর্ডার করছেন সেটি সঠিক নাকি ভুয়ো? যখন অনলাইনে অর্ডার করবেন তখন দেখবেন ক্যাশ অন ডেলিভারি করা যাচ্ছে কিনা । যদি ক্যাশ অন ডেলিভারি করা যায়, তবে সেটি আসল ওয়েবসাইট । তা যদি না হয় তবে নিশ্চিতভাবেই সেটি ভুয়ো । ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেসে দেখবেন http আছে কিনা । অনলাইন টাকা দেওয়ার সময় দেখতে হবে কোন নামী গেটওয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা । যদি সাইটের মধ্যে পেমেন্ট চাওয়া হয়, তাহলে প্রতারণার সম্ভাবনা রয়েছে । এই বিষয়গুলো মেনে চললে এড়ানো যাবে সাইবার প্রতারণা ।’’
অনলাইনে মাস্ক কিনতে প্রতারণার ফাঁদ