কলকাতা, 10 অগস্ট : পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের (Partha Chatterjee) গ্রেফতারি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) ৷ বুধবার তিনি বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় অপরাধ করেছে মানে আমরা সবাই চোর এমনটা নয় ।’’
স্বাভাবিক ভাবেই কলকাতার মেয়রের এই মন্তব্য শোরগোল ফেলে দিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে ৷ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে তাহলে কি তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) মেনে নিচ্ছে যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (Bengal SSC Scam) মামলায় জড়িত পার্থ চট্টোপাধ্যায় ? অনৈতিক ভাবে চাকরি দিয়ে তিনি অপরাধ করেছেন ?
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (Bengal Recruitment Scam) মামলায় এখনও তদন্ত করছে দু’টি কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই (CBI) ও ইডি (ED) ৷ সেই মামলার তদন্তে গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee) ৷ অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় 50 কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে ৷ মিলেছে কয়েক কোটি টাকার সোনার গয়না, সম্পত্তি-সহ আরও অনেক নথি ৷ সেই নথিতে কোথাও মালিক হিসেবে রয়েছে অর্পিতার নাম ৷ আবার কোথাও পার্থ-অর্পিতার যৌথ মালিকানা বলে উল্লেখ রয়েছে ৷
এই পরিস্থিতি পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তাঁকে দলের সব থেকে সরানোর ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ৷ একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে ফের সক্রিয় ভাবে তৃণমূলে ফিরতে পারবেন পার্থ ৷
ফলে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক আদৌ দোষী নাকি নির্দোষ, তা আদালতে বিচার সাপেক্ষ বিষয় ৷ তাই তার আগে কী করে ফিরহাদ এমন মন্তব্য করলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে ৷
এদিন বিধানসভায় তৃণমূলের তরফে ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু-সহ বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা সাংবাদিক বৈঠক করেন ৷ সেখানে তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে মামলা নিয়ে তাঁরা কথা বলেন ৷ এই নিয়ে একতরফা ভাবে তৃণমূলকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন ৷
আর এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই পার্থর প্রসঙ্গ টানেন পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ৷ তিনি বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় অপরাধ করেছে মানে আমরা সবাই চোর এমনটা নয় । পার্থ চট্টোপাধ্যায় যা করেছেন, তাঁকে আমরা সমর্থন করি না । কিন্তু এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে আমাদের বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না ।’’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘‘উপার্জন করা বা উপার্জন বৃদ্ধি করা কোনও অপরাধ নয় । পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিছু করেছে মানে বাকি সকলেই চোর, সকলকে একতালিকায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এটা মেনে নিতে পারছি না ।’’ এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি লজ্জিত পার্থ চট্টোপাধ্যায় যা করেছেন, তা নিয়ে ৷ আমি এই পার্থ চ্যাটার্জিকে চিনতাম না । এই আচরণ তৃণমূল কংগ্রেস কখনোই সমর্থন করে না, সে কথা আমরা বারবার বলেছি । অর্থাৎ এর অর্থ এই নয় তৃণমূল কংগ্রেস করা মানে সবাই চোর হয়ে গেলাম ।’’
এই নিয়ে সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন তিনি ৷ বলেন, ‘‘আমি সূর্যকান্তবাবুকে বলি আপনি অনেকগুলো কথা বললেন আমাদের সম্বন্ধে ৷ সুযোগ পেয়েছেন সবাই অপমান করছেন । রোজগার করাটা কোনও অন্যায় নয় । রোজগার বাড়ানো বা সম্পত্তি কেনাটা অন্যায় নয় । অমিত শাহ (Amit Shah) ছেলে জয় শাহ এবং নিতিন গডকরির মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা কারবার করছেন, সম্পত্তি কিনেছেন । তা নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই । প্রধানমন্ত্রীর নিজের আয় বেড়েছে ৷ আজ আমরা কাগজে দেখেছি । কিন্তু এটাকে নিয়ে নোংরামি করা মেনে নেওয়া যায় না ।’’
আরেক সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সুজনবাবুকে বলছি আপনার সিপিএমের ছেলেদের দিয়ে খোঁজ নিন, ববি হাকিম কোনও দিন কোনও অন্যায় করেছে কি না ! কোনওদিন ব্যক্তিগতভাবে কারও কাছে কোনও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে কি না ! আমরা সবাই স্বচ্ছ ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছি । মানুষের কাজ করছি । বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছি । সিপিএমের হাঁটু ভেঙে গিয়েছে । তারা পারছে না । তাই এখন বিজেপির বিটিম হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে । সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে এটাই, অর্ধেকটা বললেন ৷ অর্ধেকটা বললেন না কেন ?’’
আরও পড়ুন :সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলায় একতরফাভাবে তৃণমূলকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, দাবি ফিরহাদ-ব্রাত্যদের