পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে হাত খরচের বদলে মহিলাদের প্রশিক্ষণের পক্ষে মত বিশেষজ্ঞদের

গত বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের মহিলাদের টাকা দেবে রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু এর বদলে যদি মহিলাদের স্বনির্ভর করা হত, তাহলে লাভ হত বলে মত বিশেষজ্ঞদের ৷

experts-are-preferring-self-empowerment-of-woman-than-laxmi-bhandar-scheme-of-west-bengal-government
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে হাত খরচের বদলে মহিলাদের প্রশিক্ষণের পক্ষে মত বিশেষজ্ঞদের

By

Published : Jul 24, 2021, 1:52 PM IST

কলকাতা, 24 জুলাই : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মতো বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নামে একটি নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন । এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের 1.6 কোটি পরিবারের মহিলারা পাবেন মাসিক হাতখরচ । জেনারেল ক্যাটেগরির মহিলারা পাবেন মাসিক 500 টাকা এবং সংরক্ষিত ক্যাটেগরির মহিলারা পাবে মাসিক 1000 টাকা ।

কিন্তু স্বনির্ভর প্রকল্প দ্বারা মহিলাদের স্বাবলম্বী না করে তাঁদের হাতখরচ দেওয়ার এই প্রকল্প কতটা যুক্তিযুক্ত ? একই সঙ্গে বিপুল ধারের বোঝা মাথায় নিয়ে এই দান প্রকল্প কতদিনই বা চালানো যাবে ? উঠছে প্রশ্ন ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে কেউ পক্ষে, আবার কেউ বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন ৷

আরও পড়ুন :মেধাতালিকায় প্রথম হওয়াটা মেধার ভিত্তিতে, ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই; উষ্মা প্রকাশ ফিরহাদের

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আসলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারের মধ্যে উপঢৌকন দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়ানোর কৌশল লক্ষ্য করা যাচ্ছে । অতীতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে হালফিলের রাজ্য সরকার সবক্ষেত্রেই এই প্রয়াস স্পষ্ট । যদিও এই প্রকল্পগুলি সহজেই সাধারণ মানুষের নজর কেড়ে নেয় ৷ তাই বিভিন্ন সরকারের এই উদ্যোগ আসলে ভোটব্যাঙ্ক পাকা করার কৌশল । এক্ষেত্রে মহিলাদের ভোটব্যাঙ্ক পাকা করতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal Government) শুরু করতে চলেছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামের এই প্রকল্পটি ।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক শান্তনু সান্যাল বলেন, ‘‘সরকারতো এই ধরনের প্রকল্প ঘোষণা করে দিয়েই খালাস । কিন্তু বাস্তবে এই প্রকল্পগুলির লাভ কতটা সরাসরি মানুষের পৌঁছচ্ছে, সে বিষয়ে সন্দেহ থাকছে । সবচেয়ে বড় কথা পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা রাজ্য, যাদের মাথায় 15 লক্ষ কোটি টাকার মতো দেনা, তাদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত বিলাসিতা ছাড়া আর কিইবা হতে পারে ।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘উপঢৌকন দিয়ে যাই হোক মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার উন্নয়ন করা যায় না । কাজেই এই প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের মা-বোনেদের জন্য খুব লাভদায়ক হবে বলে আমি মনে করি না ।’’

আরও পড়ুন :Mamata's visit to Delhi : মমতার জোরালো মোদি বিরোধিতার পাশে প্রচ্ছন্ন মিঠে সুর, কোন সমীকরণের ইঙ্গিত...

পেশায় ইঞ্জিনিয়র এবং গজল শিল্পী অনিন্দিতা মৈত্র দাস মনে করেন, ‘‘এই সমস্ত প্রকল্প হচ্ছে শুধুমাত্র অলংকার । আমার নিজের ইঞ্জিনিয়রিং সংস্থা আমি শুরু করেছিলাম সমস্ত মহিলা কর্মী নিয়ে । এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে হয়তো কিছু মহিলা কিছু টাকা হাতে পাবেন । কিন্তু তাতে তাঁদের সার্বিক উন্নতি হবে কি ?’’

এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তাঁর প্রস্তাব, ‘‘এর চেয়ে যদি স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে সরকার যদি মেয়েদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার প্রচেষ্টা করত, তাহলে সেটা আরও ভালো হত । মেয়েরা স্বনির্ভর হত এবং কোনও সরকারি দানের উপর তাদের আর ভরসা করতে হত না । মেয়েদের আলাদা করে মেয়ে ভাবার দরকার নেই । সরকার শুধু যেন তাদের সমান সুযোগ দেয় ৷’’

আরও পড়ুন :Mamata Banerjee : মমতাকে চেয়ারপার্সন করে 24-এর লড়াইয়ে গতি আনার লক্ষ্য তৃণমূলের

পেশায় অ্যাকাডেমিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুচিস্মিতা বাগচী সেন মনে করেন, ‘‘এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পরিকল্পনাটি হয়তো সেই সমস্ত মহিলাদের কাজে আসবে, যাঁদের কাছে মাসে একশো টাকা আসায় বিশাল ব্যাপার । সেই দিক থেকে দেখতে গেলে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ভালো ৷ সেই নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই ।’’

যদিও এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন অন্য জায়গায় রয়েছে বলে তিনি মনে করেন । তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের উচিত রাজ্যের মেয়েদের রোজগারের পথ সুগম করার জন্য প্রথমে তাদের বিভিন্ন কাজের ট্রেনিং দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে তাদের কাজে লাগানো । একই সঙ্গে এই মেয়েদের তৈরি বিভিন্ন জিনিস যাতে তাঁরা সঠিকভাবে এবং সঠিক জায়গায় মার্কেটিং করতে পারে । সেই কাজটা যদি সরকার ঠিকমতো করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে হয় এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আর দরকারই পড়বে না ৷’’

আরও পড়ুন :ফের ‘মমতা’র পরশ, ১ সেপ্টেম্বর থেকে মেয়েদের 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে' 500 টাকা

অর্থনীতির শিক্ষক প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায় মনে করেন, এই সমস্ত প্রকল্প ঘোষণা এবং শুরু করার একটা সুবিধা হল যে যখন খুশি এই সমস্ত প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়া যায় । তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই সব প্রকল্প মূলত দানধ্যানমূলক । তাই হঠাৎ করে গুটিয়ে নিলেও কারো কিছু বলার থাকবে না । তার উপর সরকার মাথায় যে পরিমাণ ধারের বোঝা এবং যে পরিমাণ বোঝা আরও বাড়তে চলেছে আগামিদিনে, তাতে কতদিন এই সমস্ত প্রকল্প টানতে পারবে তার কোনও স্থিরতা নেই । কারণ, আবগারি ছাড়া এই সরকারের আয়ের আর কোনও উৎসও নেই ৷’’

এদিকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য অনন্যা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য । আমি তাকে স্বাগত জানাই । কিন্তু সরাসরি টাকা দেওয়ার বদলে বাংলার গ্রামের মা-বোনেদের যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করতেন, রাজ্য সরকার তাতে আরও ভালো হত । আসলে এই ধরনের উপহার যাদের প্রয়োজন এমন মহিলাদের কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে নিয়ে যাবে । তাই এই প্রকল্প সাধুবাদ জানালেও, আমার মনে হয় এর থেকে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করলে আরও বেশি লাভ হত ।’’

আরও পড়ুন :21 July-CPM : একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে সিপিএমের সমালোচনা করতেই ভুলে গেলেন মমতা !

ABOUT THE AUTHOR

...view details