কলকাতা,26 জুন : সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনের (CBSE) তরফ থেকে পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে । দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির 1 থেকে 15 জুলাইয়ের সমস্ত পরীক্ষা বাতিল করেছে CBSE । একই পথে হেঁটে ICSE ও ISC অর্থাৎ, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বাকি থাকা পরীক্ষাগুলি বাতিল করেছে কাউন্সিল ফর দ্যা ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজামিনেশন (CISCE)। দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতি, তারপরে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে এবার বাতিল হয়ে যাওয়া । সবমিলিয়ে কী বলছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ? অধিকাংশ বোর্ড পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুই বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমানে কোরোনা ভাইরাস নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে পরীক্ষার থেকে প্রাণটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে, একাংশের মতে, পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হলেও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নেওয়া উচিত।
দুই বোর্ডের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছেন অধিকাংশ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। CBSE অ্যাফিলিয়েট দিল্লি পাবলিক স্কুল রুবি পার্কের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থী ইশান সেনগুপ্ত বলেন, "আমার দুটো পরীক্ষা বাকি ছিল। কোর বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স ও একটা সিক্সথ সাবজেক্ট ইনফর্মেটিকস প্রাকটিসেসের পরীক্ষা বাকি ছিল। আমার বেশিরভাগ সহপাঠীদের একটা পরীক্ষা বাকি ছিল। আমরা অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছিলাম যে কী হবে, কী হবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে মোটামুটি সবাই খুশি। কারণ, একটা রিস্ক আছে। আমাদের ভয় ছিল। বিশেষত, কয়েকটা স্কুলে খুব ভিড় হয়, কিছু স্কুলে যেতে গেলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে হতো অনেককে। এটা নিয়ে আমরা খুশি যে আপাতত পরীক্ষাটা হবে না। কিন্তু, একই সময়ে দুটো সমস্যা আছে। প্রথমত, ওরা কী করে মূল্যায়ন করবে সেটা পরিষ্কার করেনি। কী করে আমরা পরীক্ষা দেব, কী দেব না সেটা কখন চ্যুজ করতে পারব সেটা জানা যায়নি। দ্বিতীয়ত, JEE, NEET নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। আপাতত সিদ্ধান্তটা মেনে নিচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে কোরোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে তাতে বেশিরভাগই খুশি এই সিদ্ধান্তটা নিয়ে। এটা আইডিয়াল নয়। তবে কিছু করার নেই এখন।"DPS রুবি পার্কের আর এক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থী কিঞ্জল আজমেরা বলেন, "আমি CBSE যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাকে আমি সমর্থন করছি। CBSE সব সময় পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেয়। আমার মতে, CBSE ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদেরকে পরীক্ষায় বসার অপশনও দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি ইন্টার্নাল মূল্যায়নের ভিত্তিতে পাওয়া নম্বরে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে পরবর্তীকালে পরীক্ষায় বসতে পারবে। আমার মনে হয় এটা সবথেকে ভালো।" এই বছর CBSE-তে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিচ্ছেন সুমন দাসের ছেলে। তিনি আজকের সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেন, "দুশ্চিন্তা যেমন পড়ুয়াদের মধ্যে রয়েছে, তেমনি অভিভাবক হিসেবে আমাদের মধ্যেও রয়েছে। কিন্তু, পরিস্থিতি এখন এমন সারা বিশ্বজুড়ে এখানে আমাদের আলাদাভাবে কিছু করণীয় নেই। দেশের কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার যেভাবে চিন্তা-ভাবনা করবে আমাদের এই পরিস্থিতিতে সেটা মেনে নিতে হবে। আমাদের নিজস্ব বক্তব্যটা খুব একটা থাকছে না। পরিস্থিতি এমন যে আমাদের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এর বিকল্প তো আর কারও কাছে নেই।"এই বছর ICSE পরীক্ষা দিচ্ছেন মৌসুমী মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে। তিনি বলেন, "আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সিদ্ধান্তে ভীষণ খুশি। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বাতিল করা পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবক উভয়ের জন্যই ভালো। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ণের মাধ্যমে নম্বরটা যদি ঠিক করে দেয় তাহলে কোনও অসুবিধাই নেই। কারণ, ওদের সুস্থ থাকাটা সবার আগে দরকার।" অ্যাসেম্বলি অফ অ্যাঞ্জেলস সেকেন্ডারি স্কুলের অভিভাবিকা ঈপ্সিতা রায় চক্রবর্তী। তাঁর মেয়ে ICSE-র পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, "কিছুদিন আগেই পরীক্ষা দেওয়াটা অপশনাল করা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা দেব না বলেই ঠিক করেছিলাম। স্কুলে বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়ুয়ারা আসেন। সেখানে একটা লাইফ রিস্ক থেকেই যায়। তাই আমরা পরীক্ষা দেব না বলেই জানিয়েছিলাম। আমাদের স্কুলে 90 শতাংশই পরীক্ষা দেবে না বলে জানিয়েছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে বাতিলের সিদ্ধান্ত আমি সমর্থন করছি। আমার কাছে আমার সন্তান সবার আগে। একটা বছর নষ্ট হলেও তাতে ক্ষতি নেই। পরীক্ষার আগে তো প্রাণটা।" তবে, অধিকাংশ অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তে খুশি হলেও , একাংশ মতে পরীক্ষা হলেই ভালো হতো। এখন না হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষেই মত দিচ্ছেন তাঁরা। ধর্মতলার লরেটো ডে স্কুলের ছাত্রী অলিভিয়া দত্ত। এই বছর ISC অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। তাঁর আরও তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। তিনি বলেন, "আমার 19 মার্চ সোশিওলজির পরীক্ষা ছিল। ওইদিন পরীক্ষার দুই ঘন্টা আগে আমরা জানতে পারি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। কবে আবার হবে, হবে কি হবে না, সবকিছুই অনিশ্চিত ছিল। তারপরে পরীক্ষার দিন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, তারপরেও কোভিড কেস বেড়ে যাচ্ছিল, জানি জমায়েত হলে লাইফ রিস্ক আছে। আবার অন্যদিকে আমরা এতদিন ধরে পড়েছি, অনেক রাত জেগে, অনেক খেটে, মার্কস পাওয়ার জন্য। এখন কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরীক্ষা হবে না সেটা খুব ভালো করেছে। কিন্তু, আমার মনে হয় কোভিড পরবর্তী সময়ে কাউন্সিলের পরীক্ষা নেওয়া উচিত।" একই বক্তব্য অভিভাবিকা মহুয়া দত্তের। তিনি বলেন, "অ্যাভারেজ নম্বর দেওয়ার থেকে পরীক্ষা নেওয়াটা বেশি দরকার। তা নাহলে ওরা যে এতদিন ধরে খেটেছে তার প্রাপ্যটা ওরা পাবে না। পরীক্ষাটা হওয়াটা দরকার। সেফটির বিষয়টা স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে দেখা উচিত।"