কলকাতা, 12 জুন : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল গোটা ভারত ৷ এই দফায় যে বিষয়টা মানুষকে সবথেকে বেশি হয়রান করেছে, তা হল অক্সিজেনের আকাল ৷ আক্রান্তদের একটা বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে ৷ যাঁদের পরিণতি ততটাও ভয়ঙ্কর হয়নি, তাঁদেরও ভুগিয়েছে নিদারুণ শ্বাসকষ্ট ৷ আর এখানেই স্বস্তির কথা শোনাচ্ছেন হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা রমেন্দ্রলাল মুখোপাধ্য়ায় ৷ তিনি তৈরি করেছেন সুলভ পকেট ভেন্টিলেটর ৷
প্রৌঢ় রমেন্দ্রলাল পেশায় ইলেকট্রনিক্সের ইঞ্জিনিয়র হলেও তাঁর নেশা আবিষ্কার ৷ মানুষের কাজে আসবে, এমন জিনিস আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন তিনি ৷ সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন রমেন্দ্রলাল ৷ শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা একটা সময় এতটাই কমে গিয়েছিল, যে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর কথা ভাবতে হয়েছিল পরিজনদের ৷
তবে শেষমেশ বিপদ কেটে গিয়েছে ৷ করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন রমেন্দ্রলাল ৷ আর তারপর থেকেই শুরু করে দিয়েছেন তাঁর নতুন প্রোজেক্টের কাজ ৷ যার নিট ফল, আস্ত একটা পকেট ভেন্টিলেটর ৷ রমেন্দ্রলালের দাবি, পোর্টেবল এই যন্ত্র করোনা আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট দূর করবে ৷ বাড়াবে অক্সিজেনের মাত্রা ৷ এমনকী, অন্যান্য় মাস্কের বদলে তাঁর এই যন্ত্র ব্য়বহার করলে করোনার ভাইরাস দূরে থাকবে বলেই দাবি তাঁর ৷
রমেন্দ্রলাল মুখোপাধ্য়ায়ের তৈরি পকেট ভেন্টিলেটর ৷ আরও পড়ুন :ব্ল্যাক ফাংগাসের ওষুধে সম্পূর্ণ কর ছাড়, জিএসটি কমল করোনা চিকিৎসার সামগ্রীতেও
রমেন্দ্রলাল জানিয়েছেন, যন্ত্র বানানোর সরঞ্জাম একেবারেই সাদামাটা ৷ সেসব অনলাইনে মাত্র 10 দিনেই জোগাড় করেছেন তিনি ৷ তাঁর যন্ত্র দেখতে একটা ছোট সাদা রঙের বাক্সের মতো ৷ যার ভিতরে রয়েছে একাধিক চেম্বার এবং বায়ু শোধনকারী ফিল্টার ৷ যার মধ্যে একটি ইউভি ফিল্টার পর্যন্ত রয়েছে ৷
ভাইরাস মোকাবিলায় সুলভ পকেট ভেন্টিলেটর আবিষ্কার শিবপুরের করোনাজয়ী ইঞ্জিনিয়রের ব্য়াটারিচালিত এই যন্ত্র স্মার্টফোনের চার্জার দিয়েই চার্জ দেওয়া যায় ৷ দিনে মাত্র দু’ঘণ্টা চার্জ দিলেই টানা 12-13 ঘণ্টা এটি ব্যবহার করা যায় ৷ যন্ত্রটি চালু করার জন্য একটি সুইচ রয়েছে ৷ সেটিতে চাপ দিলেই সবুজ রঙের একটি জ্বলে ৷ পাশে রয়েছে একটি রেগুলেটর ৷ সেটি দিয়ে যতটা পরিমাণ অক্সিজেনের সরবরাহ দরকার, তা নির্দিষ্ট করা যায় ৷ এছাড়াও রয়েছে একটি সকেট ৷ যেটির মাধ্যমে একটি জ্য়াক গুঁজে সেটিকে একটি প্লাস্টিকের মাস্কের সঙ্গে যুক্ত করা যায় ৷
রমেন্দ্রলালের দাবি, মেশিন চালু হলেই তার চেম্বার ও ফিল্টারগুলি সচল হয়ে যায় ৷ সংশ্লিষ্ট ব্য়ক্তি যন্ত্রের সঙ্গে লাগানো মাস্কের মাধ্যমে যে বায়ু গ্রহণ করেন, তা সম্পূর্ণ পরিশোধিত হয়ে শরীরে ঢোকে ৷ আর তিনি যে কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করেন, তাও পরিশোধিত হওয়ার পরই পরিবেশে ফেরত আসে ৷ ফলে যিনি এই যন্ত্র ব্য়বহার করছেন, তাঁর অন্যদের থেকে বা অন্যদের তাঁর থেকে সংক্রমিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই ৷
আরও পড়ুন :COVID-19 Guidelines for Children : রেমডিসিভিরে না, ছয় মিনিট হাঁটা; শিশুদের জন্য করোনা গাইডলাইন
করোনায় আক্রান্ত হয়ে রোগীকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া, চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া, কোভিড আবহে এমন ঘটনা বারবার ঘটেছে ৷ রমেন্দ্রলালের দাবি, তাঁর আবিষ্কার করা খুদে ভেন্টিলেটর ছবিটা বদলে দেবে অনেকটাই ৷ উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এই যন্ত্র বাজারজাত করা হলে তা থাকবে অধিকাংশ মানুষেরই নাগালে ৷ তার উপর আকারে ছোট ও হালকা হওয়ায় যে কেউ, যেখানে ইচ্ছা এটি ব্যবহার করতে পারবেন ৷