কলকাতা, 24 অক্টোবর : আলোর উৎসব দীপাবলি ৷ কিন্তু উৎসবের আগেই প্রত্যেকের কাছে অন্যতম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আতশবাজির দূষণ ৷ কলকাতা ও হাওড়া সহ জনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে এই দূষণ কালীপুজোর রাতে মারাত্মক আকার নেয়, বলছেন বিশেষজ্ঞরাই ৷ বাজির দ্বারা শব্দ ও বায়ু দূষণ রুখতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করেন যে সবুজ আতশবাজি অন্যান্য বাজির তুলনায় অনেক কম ক্ষতিকর । তাই এবার বাজি বাজারে নতুন ধামাকা সবুজ বাজি বা 'গ্রিন ক্রাকারস'। কিন্তু কতটা সুরক্ষিত এগুলি?
বায়ু দূষণ কমাতে বাজারে চালু হয়েছে এই পরিবেশবান্ধব বাজি । কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (CSIR) তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে বাজিগুলি । সংস্থা জানাচ্ছে, সাধারণ বাজিতে যে রাসায়নিকগুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলি এই পরিবেশবান্ধব বাজিগুলিতে ব্যবহার করা হয় না৷ কোনও ক্ষেত্রে অনেকটাই কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয় দূষিত রাসায়নিক । তাই সাধারণ বাজির তুলনায় সবুজ বাজিতে দূষণের পরিমাণ প্রায় 30 শতাংশ কম । এই ধরনের বাজিগুলিতে কিউআর কোড বসানো থাকবে । ক্রেতা মোবাইল ফোনে এই কিউআর কোডটি স্ক্যান করে বাজিগুলির উপাদান-রাসায়নিক খুব সহজেই জানতে পারবেন ।
যদিও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. কল্যাণ রুদ্রর দাবি, ''পরিবেশবান্ধব বাজি সোনার পাথরবাটি । তিনি বলেন, "সব বাজিই কম বেশি দূষণ ছড়ায় । এখনও এমন কোনও বাজি তৈরি হয়নি, যা দূষণ ছড়ায় না। তাই আমি সবুজ বাজি ব্যাপারটিকে বিশ্বাস বা সমর্থন করি না । আমার মনে হয় সবুজ বাজিকেও যতটা সম্ভব বর্জন করে উচিত ।" তিনি আরও বলেন, "ইতিমধ্যেই আমরা এই সমস্ত বাজি তৈরির সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি । কিন্তু এখনও পর্যন্ত একজনও আমাদের কাছে বাজির রাসায়নিকের নাম-উপাদান বা এই বাজি নিয়ে আসেননি।"
কল্যাণ বাবুর মত, যে কোনও বাজিতেই সাধারণত বারুদ ও পটাশিয়াম নাইট্রেটের ব্যবহার হয় । সবুজ রঙের জন্য বেরিয়াম ক্লোরাইডের মতো অন্যান্য দাহ্য পদার্থ ব্যবহার হয় । তাই অনেকগুলি রাসায়নিক সরিয়ে নিলেও বারুদ বা সালফার থেকেই যায় । তাই বাজি পোড়ালেই ধোয়া দূষণ ছড়াতে বাধ্য । সবুজ সংঘের আহ্বায়ক নব দত্ত বলেন, " সবুজ বাজি ঠিক কতটা পরিবেশবান্ধব তার প্রমাণ এখনও আমাদের হাতে আসেনি । এই ধরনের বাজি সত্যিই কত পরিমাণে দূষণ ছড়ায় সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না ।"
23 অক্টোবর 2018 সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, 65 ডেসিবেল শব্দ মাত্রার মধ্যে যে বাজিগুলি থাকবে সেগুলি বিক্রি ও ব্যবহার করা যাবে । কিন্তু অভিযোগ কালীপূজার সময় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন নজর দিলেও তা মানা হয় না । শব্দদূষণের সঙ্গে রয়েছে মারাত্মক রকমের বায়ু দূষণও । বিশেষজ্ঞরা বলছেন চড়কি, তুবড়ি, সাপ বাজি, ফুলঝুরি, রংমশাল এই ধরনের শব্দহীন বাজি বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ৷