কলকাতা, 2 জুন : মুম্বইতে কেকে-র শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে (KK Death) । সতীর্থর শেষযাত্রায় হাজির অলকা ইয়াগনিক, শ্রেয়া ঘোষাল থেকে শুরু করে বলিউডের নামী দামী ব্যক্তিত্ব । শোকে বিহ্বল সকলেই । কলকাতাও কাঁদছে তাঁর বেদনায় । এর মাঝে তাঁর মৃত্যু ঘিরে তর্ক বিতর্কও কম নয় ।
প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন কিংবা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের উপসর্গ অনুভব করছিলেন ? নাকি স্টেজে উঠেই অসুস্থ হন তিনি ? এই অসুস্থতার আসল কারণ কি অসম্ভব ভিড়ে মঞ্চে অনুকূল পরিস্থিতি না পাওয়া ? তা সে যে কারণেই হোক, নেই কে কে । এটাই সবথেকে বড় সত্য ।
এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘিরে ঘুরে ফিরে প্রকট হচ্ছে উদ্যোক্তাদের গাফিলতির কথা । তাঁরা তো চোখের সামনে দেখছিলেন শিল্পী অস্বস্তি বোধ করছেন, ঘামছেন, গান চালিয়ে যেতে পারছেন না । তাঁরা কি একবার শিল্পীকে বিশ্রাম দিতে পারতেন না ? একবার তাঁর ব্লাড প্রেশারটা চেক করাতে পারতেন না ? তার উপরে ভিড় আটকাতে অগ্নিনির্বাপক গ্যাস ছড়ানো হয় অডিটোরিয়াম চত্বরে । সেটিও স্বাস্থ্যকর নয় মোটেও... ৷
এই ব্যাপারে ড. কুণাল সরকার (Kunal Sarkar on KK Death) বলেন, "অনেককিছুই হতে পারে । কিন্তু যে জিনিসটা হয়নি, সেটা অত্যন্ত প্রকট । হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে একজন প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টা ধরে অসুস্থ হচ্ছেন, তিনি তাঁর পারফরম্যান্স চালিয়ে যেতে পারছেন না । তো এইটুকু বোঝার মতো তৎপরতা বা সংবেদনশীলতা আমরা দেখতে পেলাম না, সবচেয়ে বড় কথা এটাই । আমরা যারা গায়ক-গায়িকা, খেলোয়াড় কিংবা অন্যান্য পারফরম্যান্স করি কিংবা সাধারণ মানুষ যাঁরা আমরা নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করি, কেউ নিজের শরীরের সবটা জানি কেউ বা জানি না ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কিন্তু একজন মানুষ দৃশ্যত অসুস্থ হচ্ছেন, দরদর করে ঘামছেন, তিনি পারছেন না, বোঝা যাচ্ছে পরিস্থিতি ঠিক নেই, একটা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে এয়ার কন্ডিশন ছাড়া গরমে, ওভার ক্রাউডেড-এ একজন প্রথিতযশা গায়ক গান গাইতে গিয়ে রীতিমতো স্ট্রাগল করছেন, শুধুমাত্র পেশাদারিত্বের দায়ে নিজের পারফরম্যান্সটা শেষও করলেন তিনি ।’’
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তাঁর (কে কে) প্রতি কি সংগঠকের কোনও দায় ছিল না ? সংগঠকদের দায়িত্ব তো ছিলই, তা ছাড়াও দায়িত্ব ছিল তাঁর নিজের টিমের । তারা তো প্রতি মুহূর্তে মানুষটির সঙ্গে থাকে । তারা কী দায়িত্বশীলতা দেখাল? কেউ বুঝতে পারল না উনি কোলাপ্স করছেন !’’
কলকাতার এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘ক্লান্ত হওয়া এক জিনিস, অসুস্থ হওয়া আরেক জিনিস । যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে তার থেকে হাঁটা রাস্তায় ইডিএফ আর আমরি, ঢাকুরিয়া । তাদের বুকের উপর দিয়ে 11 কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে গ্র্যান্ড হোটেলে ফেরা হল । সেখানে গিয়ে এক সেট ড্রামা হল । সেখান থেকে আবার 8-9 কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে তাঁকে সিএমআরআই-তে নিয়ে আসা হল । তো আজকের এই একুশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের এক প্রধান মেট্রোপলিটন শহরে একটা কার্ডিয়াক প্রবলেমে একজন 50 বছর বয়সি মানুষ কার্ডিয়াক প্রবলেমে কোলাপ্স করছেন এবং শহর একবার তাঁর ব্লাড প্রেসার চেক করাতে পারলো না !’’
তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ডাক্তার হিসেবে এই দুঃখটা ভুলতে আমাদের নিশ্চয়ই অনেক সময় লাগবে ৷ আজ 40 বছরের ঊর্ধে মানুষের মধ্যে 15-20 শতাংশের কার্ডিয়াক প্রবলেম থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে । হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে সাডেন ডেথও হয় । কিন্তু চোখের সামনে সেদিন তিন ঘণ্টা ধরে যেটা ঘটছে, সেটা কি সাডেন ? ছেলেমেয়েরা হুল্লোড় করতেই পারে । এটা তো 25 শে বৈশাখের একাকী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীর অনুষ্ঠান নয় । এই শিল্পীরা তো দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় । কে কে'র টিম কী করল ? তাদের সেন্স অফ রেসপন্সিবিলিটি দেখা গেল না এতটুকুও ।"
এই ঘটনার নিরিখে তিনি আরও বলেন, "আমি নাগপুরে একটা ডাক্তারি মিটিং-এ এসেছি । লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না ৷ মাস্ক টা নাকে না পরে এবার মুখে পরে ঘুরে বেড়াতে হবে বলে মনে হচ্ছে । আমার শহরের এই অবস্থা ৷ আমরা বন্য প্রাণীদের মতো হুল্লোড় করতে পারি, এতটুকু বুদ্ধি বা দায়িত্বশীলতা আমরা দেখাতে পারি না । এটা তো হ্যাজাক জ্বালিয়ে কোনও যাত্রানুষ্ঠান ছিল না । বাঙালির অনেক লজ্জাই হয়েছে। কিন্তু এই লজ্জাটা ঘোচাতে সময় লাগবে ।"
আরও পড়ুন :KK Last Rites : কেকে'র শেষযাত্রায় শ্রেয়া, হরিহরণ, অলকারা ; দূরেই রইল অভিনয় জগৎ