কলকাতা, 6 জুলাই :অন্দরের রক্তক্ষরণ বাড়ার আশঙ্কাতেই কি অতি তৎপর শুভেন্দু-দিলীপ ? আর সেই কারণেই কি করতে হল রুদ্ধদ্বার বৈঠক ? সংগঠন অটুট রাখতে বিজেপি বিধায়কদের শোনাতে হল পাশে থাকার আশ্বাসবাণী ? মঙ্গলবার বিধানসভাতেই বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ও শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায়ের (Syama Prasad Mukherjee) জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান দিলীপ ও শুভেন্দু ৷ কিন্তু, অন্দরের খবর অন্য ৷ শোনা যাচ্ছে, মমতা সরকারের হ্য়াট্রিকে বিজেপি ছাড়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন গেরুয়াশিবিরের অনেকেই ৷ আর সেই ভাঙন রুখতেই এদিন বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে তাঁদের নিয়ে বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী ৷
আরও পড়ুন :বিধানসভাতে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগে ওয়াকআউট বিজেপির
বিজেপি সূত্রে খবর, দলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক গোপনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগযোগ করছেন ৷ পদ্ম ছেড়ে হাতে ঘাসফুল তুলে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাঁরা ৷ সেই দলে রয়েছেন মুকুল রায়ের (Mukul Roy) ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বিধায়ক ৷ যাঁদের নাম নিয়ে জল্পনা চলছে, তাঁদের মধ্যে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় অন্যতম ৷ এঁরা তিনজনই মুকুলের কাছের লোক হিসাবে পরিচিত ৷ এমনকী, সোমবার বিজেপির কলকাতা পৌরনিগম অভিযান চলাকালীনই বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ৷ যা নিয়ে ইতিমধ্যেই কানাঘুষো শুরু হয়েছে ৷ যদিও বিশ্বজিতের দাবি, এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই ৷
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার গভীর রাতে বিধায়ক হস্টলে হাজির হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ দলের তরফে জানানো হয়, পৌরনিগম অভিযানে আহত হয়েছিলেন নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী ৷ তাঁকে দেখতেই বিধায়ক হস্টেলে যান শুভেন্দু ৷ যদিও সূত্রের দাবি, আসলে দলের বিধায়কদের মন বুঝতেই শুভেন্দুর এই নৈশ অভিযান ৷ বিধায়কদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাঁদের দাবি-দাওয়া জানতে চান শুভেন্দু ৷ বিধায়কদের জানান, স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও নিয়মিত বাংলার বিজেপি বিধায়কদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন ৷ তাই তাঁরা যেন কেউই দল ছাড়ার কথা না ভাবেন ৷
আরও পড়ুন :বিজেপির কর্মসূচিতে শুভেন্দু-সৌমিত্রর অনুপস্থিতি ঘিরে প্রশ্ন
এরপর মঙ্গলবারও বিধানসভায় আসেন শুভেন্দু ৷ ছিলেন দিলীপ ঘোষও ৷ দু’জনেই প্রথমে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন ৷ তারপরই দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন তাঁরা ৷ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে রুদ্ধদ্বার আলোচনা ৷ সূত্রের খবর, এই বৈঠকে দলীয় বিধায়কদের আশ্বস্ত করেন দিলীপ ও শুভেন্দু ৷ তৃণমূলে যোগদান করার জন্য তাঁদের উপর কোনও চাপ আসছে কিনা, তা জানতে চান তাঁরা ৷ পুলিশ প্রশাসনের তরফে কোনও হুমকি দেওয়া হচ্ছে কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয় এদিনের এই বৈঠকে ৷ পাশাপাশি, শুভেন্দু ও দিলীপ দু’জনেই বিধায়কদের বোঝান, দল তাঁদের সকলের পাশে আছে ৷ কোনওরকম সমস্য়া হলে প্রয়োজনে কেন্দ্রর পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে ৷ দরকার হলে বিধায়কদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পর্যন্ত দেওয়া হবে ৷ শুভেন্দু নিজে জানিয়েছেন, তাঁর মোবাইল 24 ঘণ্টা খোলা ৷ বিধায়করা যখন ইচ্ছা তাঁকে ফোন করতে পারেন ৷
সূত্র বলছে, একুশের ভোটপর্ব শুরু হওয়ার আগে যেভাবে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছিল, এখন ঠিক তার উল্টো স্রোতে হাওয়া বইছে ৷ অর্থাৎ, বিজেপি ত্য়াগ করে অনেকেই তৃণমূলে ফেরার কথা ভাবছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে বিজেপি ৷ সোমবার কলকাতা পৌরনিগম অভিযানেও বিজেপির ছন্নছাড়া চেহারা স্পষ্ট ছিল ৷ পরে এই বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য গোটা বিষয়টিই অস্বীকার করেন ৷ বলেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আশীর্বাদে আজ বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কের সংখ্যা তিন থেকে বেড়ে 75 হয়েছে ৷ আজ বিধানসভায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তী পালনে করা হয় ৷ আমরা তাতে অংশগ্রহণ করি ৷ বিজেপির বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকও করেছি ৷’’ কিন্তু দলের ভাঙন আটকাতেই এই বৈঠক কিনা, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দিলীপ ৷