কলকাতা, 3 জানুয়ারি: হাইকোর্টের নির্দেশে অবস্থানে বসার প্রথম দিনেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ৷ জানিয়েছিলেন স্কুল কামাই করে আন্দোলন করলে বিধি মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাঁদের বিরুদ্ধে । তারপরেও বহুদিন ধরে অনশন-আন্দোলন চলে ৷ পরে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চ অনশন প্রত্যাহার করলেও শিক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্যি হল ৷ রাজ্যজুড়ে কাটা হল অধিকাংশ পার্শ্বশিক্ষকের ভাতা । জানা গেছে, ঐক্য মঞ্চের আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র একদিনের বেতন পেয়েছেন ৷ পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষের 21 দিনের বেতন কাটা হয়েছে ।
গত বছর নভেম্বর মাসে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের মেলার মাঠের সামনে অবস্থানে বসেন পার্শ্বশিক্ষকরা । কয়েকদিন অবস্থানের পরও শিক্ষা দপ্তর থেকে কোনও ইতিবাচক বার্তা না পেয়ে অনশন শুরু করেন তাঁরা । তাঁদের অনশন চলাকালীন শিক্ষামন্ত্রী একাধিকবার আন্দোলন প্রত্যাহার করে স্কুলে ফিরে যেতে বলেন । না হলে শিক্ষা দপ্তর তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন । কিন্তু, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন পার্শ্বশিক্ষকরা । এরই মধ্যে স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের শো-কজ়ও করা হয় । শেষমেশ অবস্থানের 31 দিনের মাথায় এবং অনশনের 27 দিনের মাথায় শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যের সব পার্শ্বশিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন । সেই বৈঠকে তাঁদের দাবি নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলে অনশনের 28 দিন এবং অবস্থানের 32 দিনের মাথায় গত বছর 12 ডিসেম্বর আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় ঐক্য মঞ্চ।
কিন্তু বেতন কাঠামোর দাবিতে আন্দোলন করায় ভাতা কাটা গেল পার্শ্বশিক্ষকদের । এ বিষয়ে ভগীরথবাবু জানান, গত মাসের 30 তারিখে ও এ মাসের 2 তারিখে বেশিরভাগ জেলায় পার্শ্বশিক্ষকদের ভাতা দেওয়া হয়েছে । তারপরেই দেখা গেছে রাজ্যজুড়ে প্রায় 1 হাজার পার্শ্বশিক্ষকের বেতন কাটা হয়েছে । কোচবিহারে 56 টি স্কুলের মোট 144 জনের, নদিয়ার 265 জনের, দার্জিলিঙে 70 জনের এবং মুর্শিদাবাদ ও উত্তর 24 পরগনার জেলার কয়েকজন পার্শ্বশিক্ষকদের ভাতা কেটে নেওয়া হয়েছে ৷ বলেন, " সারা রাজ্যে প্রায় 1 হাজার জনের ভাতা কেটে নেওয়া হয়েছে । আমাদের যুগ্ম আহ্বায়িকা মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 30 দিনের বেতন কাটা গেছে ৷ উনি মাত্র 1 দিনের বেতন পেয়েছেন । আমার 21 দিনের বেতন কাটা গেছে ৷ আমাদের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরো বেতনটাই আটকে দিয়েছেন ওখানকার DPO ৷"
বেতন কাঠামোর দাবিতেই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন পার্শ্বশিক্ষকরা ৷ কিন্তু আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণেই কাটা গেল ভাতা ৷ এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভগীরথবাবু বলেন, " শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের দিন উনি পরিষ্কার বলেছিলেন, ছুটিটাকে অ্যাডজাস্ট করা হবে । সেই পথে হাঁটেনি একাংশ প্রধান শিক্ষক এবং DPO-রা । তাঁদেরই চক্রান্তের ফলে এই বেতনটা কাটা গেল । অনেকেরই EL, CL হাতে আছে এখনও । তাই সত্ত্বেও চক্রান্ত করে প্রধান শিক্ষকরা এই বেতনটা কাটল । এর বিরুদ্ধে আমরা শিক্ষামন্ত্রী ও সমগ্র শিক্ষা মিশনে SPD-র কাছে স্মারকলিপি দেবে এবং যাতে এই বিষয়টার দ্রুত সুরাহা হয় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলব । শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করেই এটা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি । আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে, শিক্ষা দপ্তরকে জানাবো বিষয়টা । তাঁরা কী পদক্ষেপ করে দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব ।"