কলকাতা, 27 অগাস্ট : শাশুড়ির পছন্দ ছিল না তাকে। এমন কী, মেয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য তিনি নাকি চাপ দিতেন। সেই রাগ থেকেই শাশুড়িকে গলা কেটে খুন করল যুবক। পরিকল্পনার সঙ্গী হল স্ত্রী ৷ 24 ঘণ্টার মধ্যে পর্ণশ্রী খুনের কিনারা করে এমনটাই জানাল কলকাতা পুলিশ।
বেহালার দু'নম্বর বাসুদেবপুর রোডের ফ্ল্যাটের সামনে থেকেই উদ্ধার হয় শম্পা চক্রবর্তী নামে এক মহিলার দেহ। তার গলার নলি কাটা ছিল। শরীরে কাপড় জড়িয়ে নাইলনের দড়িতে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল দেহ। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা পর্ণশ্রী এলাকায়।
মহিলার স্বামী ভোপাল চক্রবর্তী নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন । সেদিন রাতে ফ্ল্যাটে ছিলেন না তিনি। কর্মস্থান আলিপুরে ছিলেন। পুলিশ দেখতে পায়, ভোপাল বাবুর ফ্ল্যাটটি তালাবন্ধ। সেটি ভেঙে পুলিশ প্রবেশ করে ভিতরে । এরই মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পায় পুলিশ। কোন এক প্রতিবেশী সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে তুলে রেখেছিলেন একটি ভিডিয়ো । সূত্র বলছে সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, একটি সাইকেলে চাপিয়ে সুটকেস নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সেটি পড়ে যায়। তখন ওই সাইকেল-আরোহী সেটি ওখানে ফেলে রেখেই চলে যায়। এই সূত্র ধরেই পুলিশ আটক করে মৃত শম্পা দেবীর জামাই রাজু সামুইকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসে স্বীকারোক্তি।
জেরায় রাজু বলে, বেশ কিছুদিন ধরেই স্ত্রী স্নেহার বাবা-মাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল রাজু। গত 14 অগাস্ট চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যু নিশ্চিত নয় তাতে, তাই নাকি তারা পিছিয়ে আসে। পরে গলা কেটে খুনের পরিকল্পনা করে তারা। পরিকল্পনামাফিক শনিবার রাতে বাবা-মায়ের ফ্ল্যাটে আসে স্নেহা। মায়ের ফোনের সিম বদলে নেয়। রাজু পরিকল্পনা মতো ক্ষুর নিয়ে হাজির হয়। প্রথমে শ্বাসরোধ করা হয় শম্পা দেবীর। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ক্ষুর দিয়ে গলার নলি কাটা হয়। তখন স্নেহা ছাদে ছিল। পরে এসে সেই রক্তের দাগ পরিষ্কার করে।
এরপর দেহ লোপাটের প্রস্তুতি শুরু হয়। দেহটিকে কাপড়ে পেঁচিয়ে নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। তারপর সেটিকে ভরা হয় সুটকেসে। দেহ লোপাটের জন্য এক পরিচিতের বাইক চেয়েছিল রাজু। কিন্তু সেটি পাওয়া যায়নি। তখন সাইকেলে করেই দেহ লোপাটের চেষ্টা চলে। কিন্তু সুবিধা করা যায়নি। ভারী ব্যাগ খুলে রাস্তায় পড়তেই বেগতিক বুঝে পালিয়ে যায় রাজু। তখন সঙ্গে ছিল স্নেহাও। পরে মায়ের সিম কার্ড থেকে স্নেহা ফোন করে রাজুকে । করা হয় SMS-ও ৷ তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতেই এমনটা করা হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। দুজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যে অস্ত্র হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে, খোঁজ চলছে সেটির ৷