কলকাতা, 3 জুলাই : দেবাঞ্জন কাণ্ড (Debanjan Deb) নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি ৷ জল গড়িয়েছে দিল্লি পর্যন্ত ৷ উঠছে সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি ৷ এরই মধ্যে শুরু নতুন বিতর্ক ৷ সৌজন্যে আসানসোল পৌরনিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেত্রী তবাসুম আরা (Tabassum Ara) ৷ শনিবার পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির সীতারামপুরের চবকা এলাকার একটি টিকাকরণ শিবিরে হাজির হন তিনি ৷ টিকাকরণের প্রক্রিয়া কেমন চলছে, খতিয়ে দেখেন সেসব ৷ এত দূর পর্যন্ত ঠিকই ছিল ৷ গোল বাধে ঠিক এরপর ৷ হঠাৎই সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীর হাত থেকে টিকার সিরিঞ্জ চেয়ে নেন তবাসুম ৷ আর সটান তা ফুটিয়ে দেন এক মহিলার শরীরে ! সেই ছবি সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে সব মহলে ৷ প্রশ্ন ওঠে, চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী না হয়েও কীভাবে টিকা দিলেন তবাসুম ? শনিবাসরীয় সন্ধ্য়ায় আপাতত এ নিয়েই শুরু কাটাছেঁড়া ৷
আরও পড়ুন :স্বাস্থ্যকর্মীদের সরিয়ে ভ্যাকসিন দিলেন আসানসোলের পুর প্রশাসক
দেবাঞ্জন কাণ্ডে আগেই তৃণমূল-যোগ নিয়ে সরব হয়েছে গেরুয়াশিবির ৷ তবাসুমের কীর্তিতে তারা যে চুপ থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য ৷ দলের রাজ্য় সভাপতি থেকে স্থানীয় বিধায়ক, এদিনের ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন সকলেই ৷ তবাসুমের প্রসঙ্গ ওঠায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) সরাসরি রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেই (Mamata Banerjee) কটাক্ষ করেছেন ৷ তাঁর খোঁচা, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় একাধারে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, সায়েনটিস্ট ৷ তাই তাঁর দলের নেতারাও তো তেমনই হবেন ৷’’ তবে তবাসুম এদিন যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা যে একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়, সেকথা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও বলছেন ৷ দিলীপেরও তা অজানা নয় ৷ যদিও তিনি মনে করেন, এই ধরনের অনিয়মই আদতে তৃণমূলের পরম্পরা ৷
তবাসুমের ইনজেকশন দেওয়ার কথা শুনে চোখ কপালে তুলেছেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পলও ৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওঁর কি প্রশিক্ষণ আছে ? জানেন, কীভাবে টিকা দিতে হয় ? নাকি তৃণমূলের নেত্রী হওয়াটাই ওঁর যোগ্যতা ? আর সেই কারণেই অনায়াসে যে কারও শরীরে এভাবে ইনজেকশন পুশ করতে পারেন তিনি ?’’
আরও পড়ুন :দেবাঞ্জনের গাড়ির কালো কাঁচ নিয়ে রাজ্যকে প্রশ্ন হাইকোর্টের
অগ্নিমিত্রার আশঙ্কা যে অমূলক নয়, মানছেন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী ও মেডিক্য়াল অফিসাররাও ৷ প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন তবাসুমকে বাধা দিলেন না তাঁরা ৷ সরাসরি এর কোনও উত্তর মেলেনি ৷ তবে হাবে-ভাবেই স্পষ্ট, এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেত্রীকে ঘাঁটানোর সাহস কারওরই নেই ৷
এ তো গেল ছাপোষা নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা মেডিক্য়াল অফিসারের কথা ৷ কিন্তু, তৃণমূল নেতৃত্ব ? তাঁরা কী বলছেন ? তাঁরা কি এমন কীর্তির জন্য তবাসুমের কাছে জবাবদিহি চাইবেন ? তার জবাব দেবে সময় ৷ কিন্তু আপাতত তাঁরা ব্য়স্ত বিজেপিকে জবাব দিতে ৷ সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy) যেমন ভরা সাংবাদিক বৈঠকেই বলে বসলেন, ‘‘দেশজুড়ে হাতুড়েদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে !’’
বিষয় হল, হাতুড়েদের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক জলঘোলা হয়েছে ৷ চিকিৎসক মহলও এর তীব্র বিরোধিতা করেছে ৷ আবার গ্রামীণ ভারতের চিকিৎসা পরিকাঠামো যে হাতুড়েদের ছাড়া অচল, সেকথাও অস্বীকার করার জায়গা নেই ৷ তারপরও হাতুড়ে কখনই একজন পাস করা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সমতুল্য় হতে পারেন না ৷ কিন্তু সেই বিতর্ককে শিখণ্ডী করে কি তবাসুমের মতো একজন রাজনৈতিক নেত্রী তথা জনপ্রতিনিধির অবিবেচক আচরণকে আড়াল করা যায় ? বিশেষ করে, সেই ঘটনা যখন কারও প্রাণনাশেরও কারণ হতে পারে ?
আরও পড়ুন :অভিযুক্তের সঙ্গে ছবি থাকলেই কি দুর্নীতি প্রমাণ হয় ? রাজ্যপালকে সামনে রেখে উল্টো তির তৃণমূলের
ইতিমধ্যে দেবাঞ্জন দেবের তৃণমূল যোগ নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিজেপি ৷ কীভাবে শাসকদল ও প্রশাসনের মদত ছাড়়া দেবাঞ্জন এতদিন ধরে মিথ্যের জাল ছড়ালেন, ভুয়ো টিকাকরণের শিবির চালালেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ ঘোষরা ৷ যার জবাব দিতে দেরি করেননি তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) ৷ টুইটে দিলীপের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘আপনি ভুয়ো আইএএস নিয়ে এত জ্ঞান দিচ্ছেন। কিন্তু ভোটের আগে পরপর আপনার যোগদানমেলায় যখন এত ভুয়ো বিজেপি যোগ দিল ( এখন যারা ছাড়তে চায়) তখন ধরতে পারেননি কেন? সেটুকুও যখন পারেননি এখন চুপ থাকুন। দেবাঞ্জন নিয়ে পুলিশ যা করার করছে।’’
অর্থাৎ, আবারও একটা ভুল ঘটনাকে ঢাকতে অন্য কোনও ঘটনাকে শিখণ্ডী করার প্রয়াস ৷ আর এই রাজনৈতিক দড়ি টানাটানির মধ্যে পড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত আমজনতার ৷ বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, রাজনীতি করতে গিয়ে সাধারণের প্রাণ নিয়ে কার্যত ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে ৷ দেবাঞ্জন থেকে তবাসুম, এক্ষেত্রে কেউই কম যান না ৷ প্রশাসনের কর্মী, আধিকারিক থেকে রাজনীতির কারবারি, দায় এড়াতে পারেন না কেউই ৷