কলকাতা, 1 আগস্ট : দু'জনই তৃণমূলের নেতা । একজন রাজ্যসভার সদস্য । অন্যজন, রাজ্যের এক মন্ত্রী । দুই জনই ডাক্তারদের নেতা । বর্তমানে, একজন সর্বভারতীয়স্তরের । এবং অন্যজন রাজ্যস্তরের । একজন শান্তনু সেন অপরজন নির্মল মাজি ।
কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (NMC) বিলের বিরুদ্ধে সর্বভারতীয়স্তরের নেতা যেখানে বলছেন ধর্মঘটের কথা, সেখানে রাজ্যস্তরের নেতা বলছেন নীরব প্রতিবাদের কথা । পথে নেমে শান্তনু সেন গ্রেপ্তার হচ্ছেন । আর, নির্মল মাজি বলছেন, ডাক্তাররা চটকলের কর্মী নন যে রাস্তায় নেমে জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ করবেন । এই পরিস্থিতির জেরে, বিতর্কের সম্মুখীন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (IMA)-এর দেশজুড়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ।
কেন্দ্রীয় সরকারের NMC বিলের বিরুদ্ধে দিল্লিতে IMA-র হেড কোয়ার্টারের এক ঘোষণার জেরে ভিন্ন অবস্থানে বিতর্কের সূত্রপাত । মঙ্গলবার, IMA-র সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেন এবং IMA-র সেক্রেটারি জেনেরাল আর ভি অশোকান প্রতিটি রাজ্যের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, বিভিন্ন লোকাল ব্রাঞ্চের প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি সহ IMA-র ন্যাশনাল ওয়ার্কিং কমিটির প্রতিটি সদস্য-সহ বিভিন্ন পদাধিকারীদের কাছে একটি আবেদন রাখেন । বলা হয়, বুধবার সকাল ছ'টা থেকে পরের দিন সকাল ছ'টা পর্যন্ত জরুরি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখবেন গোটা দেশের ডাক্তাররা । এই ঘোষণায়, দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোম এমন কী ব্যক্তিগত চিকিৎসাও বন্ধ রাখার কথা বলা হয় । লোকসভায় NMC বিল, 2019 পাশ হয়ে যাওয়ার জেরে IMA-র ইমারজেন্সি অ্যাকশন কমিটি 24 ঘণ্টার জন্য এভাবে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ।
কর্মসূচির বিষয়ে শান্তনু সেন বলেন, "ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিলের বিরুদ্ধে 2017 থেকে আমরা আন্দোলন করছি । এই বিল গণতন্ত্র বিরোধী । চিকিৎসক বিরোধী । সমাজের স্বার্থ বিরোধী । বিলটি আসলে মেডিকেল এডুকেশনকে কর্পোরেটের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে ।" এ দিকে বুধবারের এই কর্মসূচির বিষয়ে নির্মল মাজির সাফ জবাব, "আমরা প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছি । কাজ বন্ধ করে লাখ লাখ মানুষকে দুর্গতির মধ্যে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ নয় । প্রতিবাদ মন থেকে হবে । প্রতিবাদ চলবে । আমাদের প্রতিবাদ নীরব । কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রতিবাদ নয়।"
IMA-র হেড কোয়ার্টারের ঘোষণা অনুযায়ী বুধবারের কর্মসূচিকে সমর্থন করে ডাক্তারদের অন্য বিভিন্ন সংগঠন । পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে, বিশেষ করে বহির্বিভাগে পরিষেবা না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় । বুধবার কর্মসূচি শুরু হওয়ার পরে দেখা যায় কলকাতার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অন্যদিনের তুলনায় রোগীদের সংখ্যা কম । কলকাতার অন্য বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই কর্মসূচি যতটা প্রভাব ফেলেছে, তার অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । কলকাতার এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বুধবার বহির্বিভাগের পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছিল । পূর্ব নির্ধারিত কিছু অস্ত্রোপচার হয়নি । বহির্বিভাগের জন্য টিকিট করেছেন রোগী, তবে তাঁকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে । যদিও, এই হাসপাতালে চেস্ট মেডিসিন সহ অন্য দু'-একটি বহির্বিভাগে বুধবার পরিষেবা দিয়েছেন ডাক্তাররা । কলকাতা লাগোয়া কামারহাটির কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতাল, এবং কলকাতার বাইরে মালদা, মুর্শিদাবাদ আর উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বুধবারের এই কর্মসূচি বেশ ভালো প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন ।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ডাক্তারদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল । সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, মানস গুমটা বলেন, "প্রভাব পড়েছে । IMA-র দেশের সব চিকিৎসক সমাজ এবং জুনিয়র ডাক্তার, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।" পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ডাক্তারদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, সজল বিশ্বাস বলেন, "আন্দোলনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে । কারণ বিভিন্ন ব্রাঞ্চ যদি আলাদা আলাদা সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে সেই আন্দোলনের শক্তিটা কমে যায় । "
IMA-র দিল্লি হেড কোয়ার্টার এবং বেঙ্গল হেড কোয়ার্টারের দুই অবস্থানের বিষয়ে নির্মল মাজি বলেন, "কখনই আলাদা নয় । NMC বিলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ এই রাজ্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী করেছেন । এখানে জনমুখী একটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে, যেটা নজিরবিহীন, একটা নবজাগরণের সূচনা করেছে ।" বুধবার কালো ব্যাজ পরে তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন । বিভিন্ন পোস্টার লিখে জনগণকে সচেতন করেছেন । এ কথা জানিয়ে নির্মল মাজি বলেন, "এটা দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন । সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিল লোকসভায় পাশ করিয়েছে । এর বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে ।"