কলকাতা, 1 ডিসেম্বর : নাম না করে আক্রমণ প্রতি আক্রমণে পারদ জমছিল দুপক্ষেই । কখনও লিফট প্রসঙ্গ । কখনও আবার প্যারাসুট । তারই মাঝখানে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া । অপরজনের সরাসরি কটাক্ষ । শুভেন্দু অধিকারী আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে এক অদৃশ্য ফাটল যেন ক্রমেই বাড়ছিল । অবশেষে বছরের মাসের প্রথম দিনে যেন কিছুটা হলেও বরফ গলল । অন্তত তৃণমূল শিবিরের দাবি এমনটাই । আর এক্ষেত্রেও নাকি কাণ্ডারি সেই প্রশান্ত কিশোর । যাকে নিয়ে তৃণমূল কার্যত দুই শিবিরকে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বেশ কিছুদিন ধরে ।
আজ সন্ধে ছ'টা নাগাদ অধিকারী পরিবারের বড় ছেলের সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যত সেকেন্ড ইন কমান্ডের । যে অভিষেক এবং তাঁর হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে আসা প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতে দলের মধ্যে এক বিভাজন রেখা তৈরি হচ্ছিল, সেই পি কে-র মস্তিষ্ক থেকেই নাকি আজকের বৈঠকের সমস্ত ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল । সপ্তাহ দু'য়েক ধরেই আজকের দিনটার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করছিলেন সৌগত রায়ের মতো বর্ষীয়ান নেতারা । শুভেন্দু পর্ব শান্তিতে মেটানোর জন্য এই সৌগত রায়কেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী । যে সৌগত রায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারীর সুসম্পর্ক তৃণমূল অন্দরের সবুজ ঘাসের মতো । বহু বছর ধরে এই দুই নেতা শুধু রাজ্যে নয়, দিল্লিতেও আন্দোলন করেছেন । একে অপরের মতিগতি খুব ভালোভাবে বোঝেন । আর তার জন্যই সৌগত রায়কেই দায়িত্ব দিয়েছিল দল ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারীর মুখোমুখি বসানোর জন্য অভিষেককে রাজি করানোর কাজটা দায়িত্ব নিয়ে করেছেন নাকি প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর দলবল । আর এই সূত্রে কিছুটা সাহায্য করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌগত রায়ের মতো প্রবীনরা । আজ প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টার মতো বৈঠকের পর তৃণমূলের দাবি, সব সমস্যা কেটে গেছে । শুভেন্দু তৃণমূলেই থাকছেন । যদিও সৌগত রায়দের এই মন্তব্যের সমর্থনে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি অধিকারী গড় থেকে । খুব সম্ভবত 24 ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে শুভেন্দু অধিকারীর আগামীদিনের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি ।
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দলের দূরত্ব যখন থেকে বাড়ছিল, তখন থেকে মন্ত্রিত্ব এবং অন্য দলে যাওয়ার বিষয় নিয়ে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল । গেরুয়া শিবির থেকে শুভেন্দুকে স্বাগত জানানোর কথা বলা হয় । শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন শুভেন্দু । মেদিনীপুরের মাটিতে অধিকারী পরিবারের অবস্থান একটা বড় ফ্যাক্টর । স্বাভাবিকভাবে শুভেন্দু অন্য দলে যোগ দিলে বা অন্য দল গঠন করলে কিংবা তৃণমূল ছাড়লে, সবক্ষেত্রেই মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ত । আজকের বৈঠকের পর শুভেন্দুকে দলে রাখতে পেরেছে বলে দাবি করছে তৃণমূল । যদিও জল কোনদিকে গড়াবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় ।
শুভেন্দু পর্ব যত তীব্র হয়েছে নাম না করে তাঁকে আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে তৃণমূলের অন্দর থেকেই । এমনকী শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন প্রথম থেকে খড়্গহস্ত দেখা গেছিল শুভেন্দুর প্রতি । দুরত্ব বাড়ার ইঙ্গিত মিললেও বা কল্যাণের আক্রমণের সুর চড়লেও এই আইনজীবী সাংসদ কিন্তু নেত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়েছেন ক্রমাগত । সাম্প্রতিক কিছু সফরেও কল্যাণকে মমতার সহ্গে দেখা গেছে । আর আজ যখন ঘাসফুলে খুশির হাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে, তখন কল্যাণের স্পষ্ট মন্তব্য, "অতীত ভুলে যান ।" আর রাজ্য BJP-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, "শুভেন্দু BJP-তে যোগ দেবেন তা তাঁরা কোনওদিন বলেননি । আগামী দিনে কোনও তৃণমূল নেতাকে স্বাগত জানাতে পিছপা হব না ।" তবে বৈঠক সদর্থক হয়েছে কি হয়নি, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরি । সৌগত রায়ের দাবিকে আমল দিতে রাজি নন অধীর ।