পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

নতুন লগ্নি টানার ক্ষেত্রে রাজ্যের 'করুণ চিত্র' কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে

Central statistics again reveal the sorrow picture of West Bengal in terms of attracting new investments
নতুন লগ্নি টানার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের করুণ চিত্র আবারও সামনে আনলো কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান

By

Published : Nov 26, 2020, 8:46 PM IST

কলকাতা, 26 নভেম্বর : আবার সামনে এল নতুন উদ্যোগ টানার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের হাঁড়ির হাল। কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর প্রমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রি এন্ড ইন্টারনাল ট্রেডের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2020 সালের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন লগ্নি টানা প্রধান রাজ্যগুলি যেমন, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা এবং রাজস্থানের থেকে অনেক পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ৷ একই করুণ চিত্র বিদেশি লগ্নি টানার ক্ষেত্রে ।

একথা ঠিক যে কোরোনাকালে লকডাউনের কারণে গোটা দেশেই অর্থনীতি এবং নতুন লগ্নি ভালোভাবেই ধাক্কা খেয়েছে । কিন্তু, তার মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা যেন বিশেষ ভাবে করুণ ৷ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে জমি নীতি এবং বিশেষ অথনৈতিক অঞ্চল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একগুঁয়ে মনোভাবই এর মূল কারণ । কেন্দ্রীয় সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2020 সালের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, এই ন’মাসে সারা দেশে 1089 টি নতুন লগ্নি প্রস্তাব এসেছে ৷ যার মোট অঙ্ক 3 লক্ষ 35 হাজার 319 কোটি টাকা ৷ তার মধ্য়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন লগ্নি প্রস্তাব এসেছে মাত্র উনিশটা ৷ যা সর্বভারতীয় পরিসংখ্য়ানের মাত্র 1.74 শতাংশ ৷ অঙ্কের নিরিখে দেখলে পশ্চিমবঙ্গে এসেছে মাত্র 5 হাজার 686 কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব যা সর্বভারতীয় পরিসংখ্যানের মাত্র 1.7 শতাংশ। সেই একই সময়ে কর্নাটক পেয়েছে 85 টি লগ্নি প্রস্তাব ৷ যার মোট মূল্য় 1 লক্ষ 28 হাজার 70 কোটি টাকা ৷ সর্বভারতীয় পরিসংখ্য়ানের হিসেবে যা 38.19 শতাংশ ৷ অর্থনীতিবিদ প্রবীরকুমার মুখোপাধ্য়ায়ের মতে, পশ্চিমবঙ্গে এবং কর্নাটকের মধ্য়ে পরিসংখ্য়ানের ফারাক দেখলেই বোঝা যায় বড় শিল্পের ক্ষেত্রে এরাজ্য়ের খরা কাটবার কোনও লক্ষণ নেই ৷ শেষ নয় মাসে কর্নাটকে এসেছে 85টি লগ্নি প্রস্তাব ৷ যার মোট মূল্য় 1 লক্ষ 28 হাজার 70 কোটি টাকা ৷ এর অর্থ এই সময়ে কর্নাটকে প্রতি লগ্নি প্রস্তাবের মূল্য় 1506 কোটি টাকার অল্প বেশি ৷ অন্য়দিকে, একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন লগ্নি প্রস্তাব এসেছে উনিশটা ৷ যার মোট লগ্নি প্রস্তাব 5 হাজার 686 কোটি টাকা ৷ এর অর্থ পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি প্রতি প্রস্তাব মাত্র 299 কোটি টাকার কিছু বেশি ৷ এর অর্থ পশ্চিমবঙ্গে যে নতুন লগ্নির প্রস্তাব এসেছে, তা সবই মাঝারি শিল্পের ৷ এর অর্থ বড় শিল্পের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ আজও ব্রাত্য়ই রয়ে গিয়েছে ৷ উনি আরও জানান, সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের প্রস্থান শুধু শিল্পের জন্য় জমি সমস্য়াকেই প্রকোট করেনি, প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়েছে রাজ্য়ের ভাবমূর্তিকে ৷ এর উপর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে রাজ্য় সরকারের জমি নিয়েও লগ্নি করেনি ইনফোসিস এবং উইপ্রোর মতো সংস্থা ৷ তাই সব মিলিয়ে নতুন, বিশেষ বৃহৎ লগ্নি টানার জনব্য় অবস্থা একদমই অনুকূল নয় পশ্চিমবঙ্গে ৷

অন্য়দিকে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই বিষয়টিকে ইস্য়ু করে কোমর বাঁধছে বিরোধী দলগুলি ৷ BJP-র রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতে, সিঙ্গুরের কারখানা বন্ধ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং এখনও মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও তাঁর ভাইয়েরা চাবি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে কারখানা বন্ধ করার জন্য় ৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেরিয়ে টাটা মোটর্স, সেই কারখানা তৈরি করেছে গুজরাতে ৷ শিল্পের অভাবে বাংলায় তাই আজ চাকরির অভাব ৷ যুবক-যুবতীরা তাই আজ চাকরির খোঁজে বা চাকরি করতে অন্য় রাজ্য়ে চলে যাচ্ছেন ৷ দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্য়ের আবার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন কলকাতার বিদায়ী মেয়র তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম ৷ তিনি বলেন, যাঁরা বলছে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সম্ভাবনা কমে গেছে, তাঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ৷ গুজরাটে প্রতিষ্ঠিত টাটা ন্য়ানো কারখানাটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে ৷ অন্য়দিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে ভালো অগ্রগতি লাভ করেছে ৷ পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় এবং রাজ্য়ে একটি স্থিতিশীল সরকার থাকায় বাংলায় শিল্প আরও উঠে আসবে বলে দাবি করেছেন ফিরহাদ হাকিম ৷

পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরির মতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই এই রাজ্য়ে ৷ ওভার ড্রাফটিংয়ের কারণে এই রাজ্য় দেনার দায়ে জর্জরিত ৷ সরকারি চাকরিতে স্থায়ী পদগুলি শূন্য় ৷ সেখানে স্থায়ী নিয়োগ নেই ৷ চু্ক্তির ভিত্তিতে শাসকদল তাদের কর্মীদের সেখানে নিয়োগ করেছে ৷ আগামী তিনবছরে নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্য় স্থির করেছে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ অথচ অতীতের প্রতিশ্রুতিতে দেওয়া কর্মসংস্থান করতে পারেননি বেকার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য় ৷ ফলে এই রাজ্য়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিশেস সুবিধা করতে পারবে না বলে, জানিয়েছেন অধীর চৌধুরি ৷ তিনি আরও জানান, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের জোট শক্তি ক্ষমতায় এলে এ রাজ্য়ে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের অভূতপূর্ব সুযোগ মিলবে ৷ অন্য়দিকে, বর্ষীয়ান CPIM নেতা অমিয় পাত্রের মতে, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কারণেই টাটারা রাজ্য় ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ৷ তা জেনে কোনও বিনিয়োগকারী বাংলায় আসবে না ৷ সিঙ্গুর একটা বড় ধাক্কা ছিল এবং এর জন্য় বর্তমান মুখ্য়মন্ত্রী পুরোপুরি দায়ী ৷ বিরোধী থাকাকালীন ওনার উগ্র শিল্প বিরোধী আন্দোলনের জন্য় রাজ্য়ের অর্থনীতি হ্রাস পেয়েছে এবং বেকারত্ব সমস্য়া বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান অমিয় পাত্র ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details