কলকাতা, 3 ফেব্রুয়ারি : তৃণমূল হোক বা বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়াভোট বাগে আনতে মরিয়া দু’পক্ষই৷ মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবিই যুধুধান দুই পক্ষের তুরুপের তাস৷ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, মতুয়ারা ভারতের নাগরিক৷ তাই নতুন করে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনও প্রয়োজনই নেই৷ অন্য়দিকে, বিজেপির দাওয়াই, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, এই আইনবলেই ভারতের বৈধ নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন মতুয়ারা৷ তৃণমূলের প্রশ্ন, তবে কি এতদিন মতুয়ারা দেশের নাগরিক ছিলেন না ? অথচ তাঁদের প্রতিনিধিরা তো ইতিমধ্যেই ভোটে জিতে মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন ।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে ঠিক এই প্রশ্নটাই তুলেছেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷ উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই সিএএ ইশুতে ফের একবার সরব হন লোকসভার বিরোধী সাংসদরা৷ আইন প্রণয়নের এতদিন পরও কেন তা কার্যকর হল না, তা জানতে চান লোকসভার কংগ্রেস সাংসদ ভিকে শ্রীকন্ডন৷ তার জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, এই আইন সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি নির্ধারণের পাশাপাশি তা প্রয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য কেন্দ্রকে 9 এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছে রাজ্যসভা৷ আর লোকসভার সংশ্লিষ্ট কমিটি এরজন্য ধার্য করেছে 9 জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা৷
ঠিক এখানেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য়র অভিযোগ, মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবিকে আপাতত ঝুলিয়ে রাখতেই এই দু’টি নির্দিষ্ট তারিখের কথা বলা হয়েছে৷ কারণ, ওই সময়ের মধ্য়ে হয় এ রাজ্য়ে ভোটপ্রক্রিয়া চলবে৷ অথবা নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে৷ তৃণমূলের যুক্তি, যেভাবে অসমে সিএএ কার্যকর করতে গিয়ে লাখ লাখ হিন্দুকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে, এ রাজ্য়ে একই প্রক্রিয়া কার্যকর হলে মতুয়াদের অবস্থাও অসমের বাঙালি হিন্দুদের মতো হবে৷ সেটা বুঝতে পেরেই এখন ঢোঁক গিলছে বিজেপি৷ মতুয়াদের বৈধ নাগরিকত্বের গাজর দেখিয়ে আসলে ভোটের বৈতরণী পার হতে চাইছে তারা৷ ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে সিএএ কার্যকরের প্রক্রিয়া৷
ব্রাত্য়র দাবি, মতুয়াদের পাশে প্রথম থেকেই থেকেছেন তৃণমূলনেত্রী৷ এমনকী, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় বড়মা বীণাপানি দেবী কিভাবে মমতার অনশন মঞ্চে ছুটে গিয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন তিনি৷ তৃণমূলের হয়ে তাঁর দাবি, মমতার সরকারই প্রথম মতুয়া প্রতিনিধিদের মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে৷ মতুয়াদের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা উন্নয়ন বোর্ড৷ তৈরি হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্য়ালয়৷ এমনকী আগামী দিনে বাগদার হেলেঞ্চায় হরিচাঁদ ঠাকুরের মূর্তি বসানো ও তাকে ঘিরে পার্ক এবং পর্যটনকেন্দ্র গঠনেরও পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের৷