বেকার ছেলের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা কীভাবে ? BSF কর্তার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ CBI-এর
সীমান্তে গোরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। সেই কারণে বেশ কিছুদিন ধরে গোরু পাচার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিল CBI। কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদ থেকে এনামূল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোরু পাচারকারী এবং BSF-র যোগসূত্রের খবর পাওয়া যায়।
কলকাতা, 18 নভেম্বর: একের পর এক অভিযোগে রীতিমতো বিদ্ধ গোরু পাচারের মদতে অভিযুক্ত BSF কর্তা। আজ CBI-র বিশেষ আদালতে বিস্ফোরক সব অভিযোগ আনেন আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে, আত্মীয়দের অ্য়াকাউন্টে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, মালদা-মুর্শিদাবাদে পোস্টিং থাকার সময় তাঁর বেকার ছেলের অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের টাকা ঢুকল কীভাবে? তাঁর অবসরপ্রাপ্ত শ্বশুরের অ্যাকাউন্টেই বা কীভাবে কোটি কোটি টাকা ঢুকল ? সবটা শুনে অভিযুক্ত কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে 14 দিনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সীমান্তে গোরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। সেই কারণে বেশ কিছুদিন ধরে গোরু পাচার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিল CBI। কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদ থেকে এনামূল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোরু পাচারকারী এবং BSF-র যোগসূত্রের খবর পাওয়া যায়। ঘটনায় ম্যাথিউ নামে এক BSF কমান্ডান্টকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছিল পুলিশ। জানা যায়, সর্ষের মধ্যেও লুকিয়ে ছিল ভূত। সেই সূত্রে সল্টলেক সিটি সেন্টার টু এর পাশে BSF-র কমান্ডান্ট সতীশ কুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালায় CBI। সতীশ কুমার অবশ্য এখন আর পশ্চিমবঙ্গে নেই। তিনি এখন কর্নাটকে পোস্টেড। তবে তিনি একটা সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় গোরু পাচার চক্রকে মদত দিতেন বলে অভিযোগ। সল্টলেক সিটি সেন্টার টু এর পাশে BJ 59 নম্বর বাড়িটি সতীশ কুমারের। সেখান থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয় বলে CBI সূত্রে জানা গিয়েছে । সেই সূত্রেই পাওয়া যায় আরও বেশ কিছু নাম। নভেম্বরের শুরুতে কলকাতায় শুল্ক দপ্তরের আধিকারিক সহ 4 জনকে গ্রেপ্তার করে CBI। জানা যায় এই চক্রের গোরু পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে BSF এবং শুল্ক বিভাগের একশ্রেণির কর্তার। BSF-র ভাগে থাকত গোরু পিছু 2000 টাকা এবং শুল্ক বিভাগের কর্তারা পেতেন 500 টাকা করে। এসবই উঠে এসেছে CBI-র তদন্তে। গোরু পাচারকারী হিসেবে এনামূল, আনারুল এবং মুস্তাফা জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা মূলত মালদা এবং মুর্শিদাবাদ দিয়ে বাংলাদেশে গোরু পাচার করত। 2015 শেষ দিক থেকে 2017 সাল পর্যন্ত মালদার 36 নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ড্যান্ট ছিলেন সতীশ কুমার। তাঁর অধীনে ছিল চার কম্পানি BSF-র বাহিনী। এই সময়ে তিনি গোরু পাচারকারীদের মদত দিয়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্র ধরেই সতীশ কুমারকে বার কয়েক নোটিস পাঠানো হয়। অবশেষে গতকাল নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেন তিনি। সেখানেই গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত তদন্তে অসহযোগিতা এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
আজ আসানসোলের বিশেষ CBI আদালতে পেশ করা হয় সতীশ কুমারকে। সেখানে CBI-র পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র । তিনি আদালতের সামনে একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ করেন সতীশ কুমারকে। প্রশ্ন তোলেন, তাঁর শ্বশুরমশাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। কীভাবে তাঁর অ্যাকাউন্টে 13 কোটি টাকা রয়েছে? তিনি যখন পশ্চিমবঙ্গে পোস্টিংয়ে ছিলেন তখন তাঁর ছেলে বেকার ছিল। কিন্তু সেই সময় তাঁর ছেলের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা ঢুকেছিল কীভাবে ? পাশাপাশি কালীচরণবাবু আদালতে অভিযোগ আনেন, CBI অফিসারদের ডাকে সাড়া না দিয়ে কলকাতায় থেকেও তিনি নানাভাবে তদন্তকারীদের অসহযোগিতা করেছেন। এই সময় তিনি সাক্ষীদের হুমকি দিয়েছেন। সবটা শোনার পর বিচারক সতীশ কুমারকে 14 দিনের CBI হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।