কলকাতা, 4 জুন : আগামী সিমেস্টার অফলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল অর্থাৎ, শুক্রবার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যরা একটি বৈঠকে বসেন ৷ সেই বৈঠকের শেষে জানানো হয়, সিন্ডিকেটের সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে অফলাইনে পরীক্ষা (Offline Exams) নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ এই সিদ্ধান্ত একাংশের পড়ুয়ারা মেনে নিলেও, কিছু পড়ুয়া মনে করছে যে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কতৃপক্ষ তাঁদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে (Calcutta University Students Demanded that Exams be Taken After Offline Classes) ৷
এ বছর করোনা পরিস্থিতি অনেকাংশে স্বাভাবিক হলে আবারও খুলে যায় রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ৷ ক্লাস চলে অফলাইনেই ৷ তবে, অফলাইনে পঠনপাঠন হলেও পরীক্ষা নেওয়া হোক অনলাইনে ৷ এই দাবি জানিয়ে দীর্ঘ দিন বিক্ষোভ চালায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ পড়ুয়া ৷
তবে, গতকাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায় বিশ্ববিদ্যালয় ৷ জানানো হয়, ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলগুলিও পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ৷ এমনকি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বোর্ডস অফ স্টাডিস-সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকা কলেজগুলির অধ্যক্ষরাও অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন ৷ পাশাপাশি পাঠ্যসূচির যে অংশগুলি এখনও পড়ানো হয়নি ৷ সেগুলি শেষ করার জন্য বিশেষ ক্লাস নেওয়া হবে ৷
এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা রাজা মেহেদী বলে, ‘‘পড়ুয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে কোনও দ্বিচারিতা হবে না ৷ কিন্তু, গতকাল সেটাই দেখা গেল ৷ বিশেষ ক্লাস নিয়ে অফলাইনের সিদ্ধান্ত নিলেও, সেটা কবে কীভাবে নেওয়া হবে তা জানানো হয়নি ৷ যদি অফলাইনে পরীক্ষা হয় ৷ তাহলে সেটা আগে থেকে কেন জানানো হল না ? পড়ুয়ারা কেউ অফলাইনের বিরুদ্ধে নয়, তাঁরা পরীক্ষার পক্ষে ৷ কিন্তু, তাঁদের প্রস্তুতির জন্য সময় দিলে ভাল হত ৷ এমনকি অনেক বিভাগ এই ক’দিনে পরীক্ষার সময় সূচি জানিয়েও দিয়েছে ৷ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষা হচ্ছে ৷ সেখানে যারা অফলাইন দেবে, তাঁদের সঙ্গে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়া পরীক্ষার্থীদের নম্বরের একটা বিস্তর পার্থক্য থাকবে ৷ পড়ুয়ারা তাই পরীক্ষা পদ্ধতিতে সমতা চায় ৷’’
আরও পড়ুন : THE Impact Rankings 2022 : টাইমসের সমীক্ষায় দেশে শীর্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, অভিনন্দন মুখ্যমন্ত্রীর
অন্যদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক অনিক দে বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মিটিং এর পর কতৃপক্ষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ একথা সত্যি যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে নিয়মিত ক্লাস রুম ভিত্তিক পঠন-পাঠন হয়নি ৷ তার সঙ্গে রাজ্য সরকারের যথেচ্ছ ছুটি মঞ্জুর করার ফলে ক্লাসরুম ভিত্তিক পঠন-পাঠন বিঘ্নিত হয়েছে ৷ এই অবস্থায় আমাদের দাবি যে, অবিলম্বে নিয়মিত ক্লাস ভিত্তিক পঠন-পাঠনের সময়সীমা বাড়িয়ে অথবা যে পাঠক্রম ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৷ তার ভিত্তিতে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হোক ৷’’
এফএফআই এর কলকাতা জেলা রেসিডেন্ট দেবাঞ্জন দে বলেন, ‘‘আমরা আগেই জানিয়েছিলাম যে, এই সমস্যা থেকে বেরনোর একমাত্র উপায় অফলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের অবগত করতে হবে। সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে আশ্বাস জুগিয়ে অফলাইন পরীক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলেজমুখী করতে হবে ৷ ইতিমধ্যেই, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ তবে, বহু ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ রয়েছে যে এখনও তাঁদের পাঠ্যসূচি শেষ হয়নি ৷ তাই আমাদের দাবি যে অবিলম্বে সেই বাকি থাকা পাঠ্যসূচি অফলাইনে ক্লাস নিয়ে শেষ করা হোক ৷ তা ক্লাসগুলি কবে থেকে নেওয়া হবে এবং কী পদ্ধতিতে নেওয়া হবে ? তাও দ্রুত জানানো হোক ৷ না হলে যে অংশ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেই অংশটি বাদ দিয়ে বাকি অংশের উপর এই পরীক্ষা নেওয়া হোক ৷’’