কলকাতা, 22 জুন: এবার থেকে মাদক মামলায় (Narcotics Related Case) কাউকে গ্রেফতার করা হলে, কিংবা অভিযুক্তের কাছ থেকে কোনও বেআইনি সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হলে পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি (Videography) করতে হবে ৷ বুধবার এই মর্মেই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) ৷ আদালতের সাফ কথা, যদি সংশ্লিষ্ট আধিকারিক এই নির্দেশ অমান্য করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ করতে হবে ৷
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানায় মাদক সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷ সেই মামলায় অভিযুক্তের কাছ থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের ৷ কিন্তু, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা অন্য কথা বলছেন ৷ তাঁদের দাবি, অভিযুক্তের কাছ থেকে আদতে কোনও বেআইনি সামগ্রীই উদ্ধার করা হয়নি ৷ পরে পুলিশ জোর করে 'ভুয়ো' সিজার লিস্টে অভিযুক্তকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে ৷ এমনকী, সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে জাল নথি পেশেরও অভিযোগ উঠেছে ৷
আরও পড়ুন:KK Demise Case: কেকে-র মৃত্যুতে রাজ্যকে হলফনামা পেশের নির্দেশ হাইকোর্টের
এদিন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী (Justice Joymalya Bagchi) এবং বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Justice Ananya Bandyopadhyay) ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে ৷ মামলাকারীদের বক্তব্য জানার পর বেঞ্চের তরফে বলা হয়, ইদানীংকালে সমস্ত পুলিশকর্মী ও আধিকারিকের কাছেই স্মার্ট ফোন থাকে ৷ তাই মাদক মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হলে বা কোনও সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হলে সেই প্রক্রিয়া স্মার্ট ফোনেই ভিডিয়ো রেকর্ডিং বা ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখতে হবে পুলিশ আধিকারিকদের ৷ কোনও অবস্থাতেই এই নির্দেশ অমান্য করা চলবে না ৷
দ্রুত যাতে আদালতের এই নির্দেশ সম্পর্কে রাজ্যের সমস্ত থানাকে ওয়াকিবহাল করা হয়, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে দায়িত্ব দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ ৷ তাতে বলা হয়েছে, অবিলম্বে রাজ্যের প্রত্যেক পুলিশ সুপারের কাছে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিতে হবে ৷ আদালতের নির্দেশ সকলে মেনে চলছেন কি না, সেদিকেও পুলিশ সুপারদের নজর রাখতে হবে ৷
প্রসঙ্গত, যে মামলা ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত, লালগোলা থানা এলাকার সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্তের নাম কবীর শেখ ৷ তাঁর দাবি, পুলিশ তাঁকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছে ৷ তাঁর কাছ থেকে কোনও মাদক বা বেআইনি সামগ্রী উদ্ধার না হওয়া সত্ত্বেও 'ভুয়ো' সিজার লিস্ট তৈরি করে তাতে তাঁকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে ৷ এমনকী, 'বিনা দোষে' 200 দিন তাঁকে কারাবাসও করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন কবীর ৷ উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই প্রমাণের অভাবে কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে ৷
মাদক সংক্রান্ত মামলায় নয়া নির্দেশ আদালতের ৷ এদিকে, অন্য একটি মাদক মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, এবার থেকে প্রত্যেকটি মাদক মামলার ক্ষেত্রে শুনানির দিন আদালতে আসল কেস ডায়ারি পেশ করতে পুলিশকে ৷ কেস ডায়ারির প্রতিলিপি জমা দিলে চলবে না ৷ এই প্রসঙ্গে আইনজীবী আলি এহসান আলমগীর জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট মামলায় মূল অভিযুক্ত বাহাদুর শেখ আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ গত বছরের 16 ডিসেম্বর সেই আবেদন মঞ্জুর করে কলকাতা হাইকোর্ট ৷
পরে জানা যায়, আগাম জামিন মঞ্জুর হওয়ার তিনদিন আগে, অর্থাৎ গত বছরের 13 ডিসেম্বরই তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়েছিল পুলিশ ! তাদের দাবি, সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার চারদিনের মাথায় (আগাম জামিন মঞ্জুর হওয়ার পরদিন) তাঁর বাড়ি থেকেই মাদক উদ্ধার করা হয় ৷ বুধবার (22 জুন, 2022) সেই মামলাতেই আবারও জামিনের আবেদন করেন বাহাদুর শেখ নামে ওই ব্যক্তি ৷
বিষয়টি জানার পর ডিভিশন বেঞ্চ বলে, আসল কেস ডায়ারির বদলে প্রতিলিপি জমা দেওয়াতেই আদালত আবেদনকারীর গ্রেফতার হওয়ার তথ্য জানতে পারেনি ৷ ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে এবার থেকে মাদক সংক্রান্ত যেকোনও মামলাতেই আসল কেস ডায়ারি পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ ৷