পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

বইপাড়া খুললেও হারিয়েছে চেনা ছন্দ, নেই বইপ্রেমীদের ভিড়

লকডাউন চলাকালীন সময়েও বইয়ের টুকটাক হোম ডেলিভারির কাজ শুরু করেছিলেন ছোটো ব্যবসায়ীরা । চেষ্টা করছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর । কিন্তু আমফানের তাণ্ডবে সেই আশাটুকুও ভেঙে গেছিল ।

By

Published : Jun 25, 2020, 6:38 PM IST

College Street
বইপাড়ার ছবি

কলকাতা, 25 জুন : একদিকে টানা লকডাউন শিকেয় ব্যবসা, অন্যদিকে আমফানের তাণ্ডবে তছনছ বইপাড়া । রাস্তার দু'ধারে ছোটো ছোটো দোকানগুলির ভিতরেও জল ঢুকে যায় । রাস্তার উপরে ভাসছে বই । এই ছবি সামনে আসতেই ডুকরে উঠেছিল কলকাতাবাসী । যে বইয়ের গন্ধ নাকে নিয়ে একটা অকৃত্রিম ভালোলাগা অনুভব করত মানুষ, সেই বইয়ের এমন দুর্দশা মেনে নিতে পারেনি তিলোত্তমাবাসী । এখন লকডাউন অনেকটাই শিথিল হয়েছে । দুর্যোগের রাতও কেটে গেছে । মাস পয়লা থেকে আবার পসরা সাজিয়ে বসেছেন বই বিক্রেতারা । তবে কোথায় ক্রেতা ? সারাদিনে 100 টাকার বিক্রিও নেই ।

লকডাউন চলাকালীন সময়েও বইয়ের টুকটাক হোম ডেলিভারির কাজ শুরু করেছিলেন ছোটো ব্যবসায়ীরা । চেষ্টা করছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর । কিন্তু আমফানের তাণ্ডবে সেই আশাটুকুও ভেঙে গেছিল । ছোটো ব্যবসায়ীরা এখন সর্বহারা । লোকসান হয়েছে কয়েক কোটি টাকার । এই মাস থেকে ফের খুলেছে কলেজ স্ট্রিট বই পাড়া । তবে নেই বইপাড়ার সেই স্বাভাবিক ছবি । প্রেসিডেন্সি বন্ধ । ন্যাশনালেও নেই চেনা ভিড় । মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি আসছে । কোনওমতে প্লাস্টিক চাপা দিয়ে অবশিষ্ট বইগুলি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় মরিয়া বিক্রেতারা । পাশাপাশি সংক্রমণের ভয়ে অফিস যাত্রী ছাড়া সাধারণ মানুষ গণ পরিবহন এড়িয়ে চলাটাকেই শ্রেয় বলে মনে করছেন । তাই দোকান খুলে রাখলেও ব্যবসা নেই একেবারেই ।

বইপাড়ার এক বই বিক্রেতা সুমন চন্দ্র বলেন, "আমফানে আমাদের যা ক্ষতি হয়েছে, তা কল্পনার বাইরে । এমনিতেই প্রায় আড়াই মাস লকডাউনের জন্য বইপাড়ার পরিস্থিতি খারাপ ছিল । সারাদিনে একজন ক্রেতাও নেই । পুঁজি একেবারে শেষ । তাছাড়া নতুন করে যে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব সেই পরিকাঠামোও নষ্ট হয়ে গেছে । তাই আমাদের কথা চিন্তা করে যদি সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে আমরা উপকৃত হব ।"

অন্য এক মহিলা ব্যবসায়ী গীতা সাহা বলেন, "বইপাড়ায় বেচা-কেনা একেবারেই নেই । তার মধ্যে ঝড়ের কারণে লাখ লাখ টাকার বই নষ্ট হয়ে গেছে । তার উপর ট্রেন বন্ধ রয়েছে বলে দূর থেকে যাঁরা বই কিনতে আসতেন তাঁরা আসতে পারছেন না ।"

আর্থিক দুরাবস্থা এখনও কাটেনি কলেজ স্ট্রিটের বই বিক্রেতাদের

দা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক (সম্মানীয়) ও দে'জ় পাবলিশিংয়ের কর্ণধার সুধাংশুশেখর দে বলেন, "সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে ও ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে । অন্যদিকে বন্ধ ট্রেন ও মেট্রো পরিষেবা । সীমিত বাস চলাচল করছে । তাই বইপাড়া খুললেও কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা । কোনও বিক্রি নেই । তার উপর আমফানের জেরে বস্তার পর বস্তা বই এখনও ফেলে দিতে হচ্ছে । গোডাউনগুলিতে থরে থরে পরে রয়েছে নষ্ট হয়ে যাওয়া বই-খাতা ।"

যদিও গিল্ডের তরফে আগেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বইপ্রেমীদের কাছে ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক সহায়তার আরজি জানানো হয়েছে । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও সাহায্যের আরজি জানিয়ে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে ।

সুধাংশুবাবু আরও বলেন, "গিল্ডের তরফে যে তহবিলটি তৈরি করা হয়েছে সেখানে ইতিমধ্যেই 11 লাখ টাকা জমা পড়েছে । 30 জুন পর্যন্ত ছোটো-বড় ব্যবসায়ীদের থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে । আগামী মাসে থেকে টাকা বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে । আগামী এক মাসে যা টাকা উঠবে তা ক্ষতিগ্রস্ত পুস্তক বিক্রেতাদের মধ্য বিতরণ করা হবে । তবে তার জন্য পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশকদের আবেদন করতে হবে ।"

গিল্ডের পাশাপাশি অন্য আরও কয়েকটি প্রকাশনী সংস্থাও সর্বহারা ছোটো ব্যবসায়ীদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন । কলেজ স্ট্রিটের এক ছোট দোকানি অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, "বই বা খাতা একবার জলে ভিজে গেলে ফুলে যায় । তারপরে সেগুলিকে আর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় না । সেগুলো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে । লাখ লাখ টাকার মাল নষ্ট হয়ে গেছে । এই বইগুলি তো আর আমরা ফিরে পাব না । তাছাড়া যেই সময় আমাদের বেশিরভাগ বই খাতা বিক্রি হয় সেই মরশুমও চলে গেছে । লকডাউনের ফলে আমরা যে দুই-আড়াই মাস ব্যবসা করতে পারিনি, তখন খরচা তো আর থেমে থাকেনি । অন্যদিকে এখন বর্ষাকাল । মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে । আমরা কোনও মতে পলিথিন চাপা দিয়ে বইগুলিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি । আবার যখন দোকান সাজিয়ে বসছি ,তখন আবার বৃষ্টি শুরু হচ্ছে । এভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কোনও মতে টিকে রয়েছি।"

প্রকাশক সভার সাধারণ সম্পাদক শংকর মণ্ডল বলেন, "কলেজ স্ট্রিটের রাস্তার উপর বসে যাঁরা ব্যবসা করেন পাশাপাশি যাঁরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের সাহায্য করার জন্য আমাদের সংস্থা এগিয়ে এসেছে । বহু বিখ্যাত মানুষজন যেমন অভিনেতা শাহরুখ খান, প্রাক্তন ক্রিকেটার এরাপল্লি প্রসন্ন, ব্যবসায়ী হর্ষ নেওটিয়া-সহ আরও অনেকেই সাহায্য করছেন । ইতিমধ্যে 10 লাখ টাকা তহবিলে জমা পড়েছে । দ্রুত আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে আবেদন পত্রের প্রোফার্মা আপলোড করব । পাশাপাশি প্রোফার্মা হাতে হাতেও দেওয়া হবে । এই টাকা কোনও প্রকাশকের কাছে যাবে না, যাবে ছোটো-ছোটো বই বিক্রেতাদের কাছে । এছাড়াও জেলার ছোটো-ছোটো পুস্তক বিক্রেতারাও পাবেন । ছোটো হকার ও পুস্তক বিক্রেতারা যাতে কিছুটা হলেও চাঙ্গা হতে পারে তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details