কলকাতা, 7 অগাস্ট : রাজনীতিতে প্রবল প্রতিপক্ষের সাংসদ তহবিলের টাকায় কেনা গাড়িতে করেই শেষ যাত্রায় শ্যামল চক্রবর্তী। শাসকদলের শ্রমিক নেত্রী দোলা সেনের সাংসদ তহবিলের শববাহী গাড়িতে করে ধাপায় পৌঁছায় তাঁর মরদেহ । সন্ধে সাতটা নাগাদ বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁর মরদেহ শববাহী শকটে করে নিয়ে যাওয়া হয় ধাপায়। কোরোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে যে পদ্ধতিতে মৃতদেহ সৎকার করা হয়, তাই হল এক্ষেত্রেও। CPI(M)-র রাজ্য দপ্তর মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে আনার ইচ্ছে থাকলেও শেষ চেষ্টা করেননি দলের নেতৃবৃন্দ।
বাম শ্রমিক সংগঠন CITU-র বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানান, নিমতলা শ্মশানে শেষকৃত্য হওয়ার কথা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। ধাপাতেই শেষকৃত্য হয়। সবার অলক্ষ্যে। কেবলমাত্র পরিবার এবং আত্মীয় পরিজন, অনুরাগীদের দেখতে দেওয়া হল শেষবারের মতো শ্যামল চক্রবর্তীকে। বেঁচে থাকতে দোলা সেন ছিলেন তাঁর অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ। শেষ বিদায় প্রবল প্রতিপক্ষের অনুদানের গাড়িতে। CITU পশ্চিমবঙ্গ কমিটির প্রাক্তন সভাপতি এবং শ্রমিক আন্দোলনের সর্বভারতীয় নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করেছেন CPI(M)-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার শোক জ্ঞাপন করেছেন। সর্বভারতীয় স্তরের শ্রমিক নেতৃত্ব শোকস্তব্ধ। CPI(M) পলিটবিউরো শোক বার্তা পাঠিয়েছে।
হল না দেহ দান, ধাপায় শেষকৃত্য় শ্যামল চক্রবর্তীর - CITU
কোরোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে যে পদ্ধতিতে মৃতদেহ সৎকার করা হয়, সেভাবেই সৎকার হল বাম শ্রমিক সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর । নিমতলা শ্মশানে শেষকৃত্য হওয়ার কথা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। ধাপাতেই শেষকৃত্য হয় ৷
শ্যামল চক্রবর্তী গত শতাব্দীর ছয় ও সাতের দশকে উত্তাল বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। মেধা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সমাহারের ঔজ্জ্বলে্য তাঁর সুযোগ ছিল অর্থকরী পেশা বেছে নেওয়ার। সেসব হাতছানি উপেক্ষা করে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বিদ্যুৎ, পরিবহন ও বন্দর শ্রমিকদের ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেন তিনি। বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার পরে সংকটাপন্ন বিদ্যুৎ দপ্তরের দায়িত্ব দেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। বিদ্যুৎ শ্রমিকদের নেতৃত্বে আসেন শ্যামল চক্রবর্তী। তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর ব্যুৎপত্তি । বিরোধীদের চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনার দায়িত্ব পালন করেন এই সদ্য প্রয়াত নেতা। ছাত্র আন্দোলনের সহযোগী শিপ্রা ভৌমিকের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। চারবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে, 10 বছর পরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন শ্যামল চক্রবর্তী। পরে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। শ্রমিক সংগঠন সিটুর সর্বভারতীয় কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন 1991-2020 সাল পর্যন্ত। 2003 -2017 সাল পর্যন্ত CITU-র রাজ্য সভাপতি ছিলেন তিনি। প্রথম সারির নেতৃত্ব দেওয়া শ্যামল চক্রবর্তীকে শ্রমিক ভবনে নিয়ে এসে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে না পেরে মর্মাহত CITU-র বর্তমান সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায়।