কলকাতা, 16 মে : শুভেন্দু অধিকারী (BJP MLA Suvendu Adhikari) ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদানের পর থেকে রাজনীতির অঙ্গনে অনেকটাই অন্তরালে চলে গিয়েছেন শিশির অধিকারী (TMC MP Sisir Adhikari) ৷ এমনকি, এই মুহূর্তে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক কী, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে ৷ কিন্তু সেই ধোঁয়াশা বোধহয় এবার কাটার সময় এসেছে৷ গেরুয়া শিবির সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে ৷ ওই সূত্রের দাবি, সংসদের নিম্নকক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে শান্তিকুঞ্জের কর্তাকে পাঠাতে পারে বিজেপি ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশ মেনে তাঁকে রাজ্যসভায় সাংসদ হিসেবে মনোনীত করতে পারেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ (President Ramnath Kovind) ৷
সত্যিই কি তাই ? গেরুয়া শিবির আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছে ৷ বঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এই বিষয়ে ইটিভি ভারতকে বলেন, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় ৷ এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না ৷’’ শিশির অধিকারীও ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন যে তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না ৷
যদিও বিজেপি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে দলের জাতীয়স্তরের প্রথম সারির একজন নেতা কথা বলেছেন শিশির অধিকারীর সঙ্গে ৷ তাঁকে এই বিষয়ে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে ৷ এমনকি, বাংলায় এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Union Home Minister Amit Shah) যে রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি বঙ্গ বিজেপির গুটিকয়েক নেতার সঙ্গে করেছিলেন, সেখানেও এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে ৷ ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা শিশির অধিকারীর মেজ ছেলে শুভেন্দুও উপস্থিত ছিলেন ৷
কাঁথির সাংসদকে নিয়ে এই জল্পনা আদৌ সত্যি কি না, তার উত্তর তো রয়েছে সময়ের গর্ভে ৷ কিন্তু রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে লুকিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের অনেক অঙ্ক ৷ প্রথমত, শুভেন্দু অধিকারী বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ৷ ভোটের পর মুকুল রায়-সহ যাঁরা পদত্যাগ না করে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য সবচেয়ে বেশি সরব শুভেন্দু ৷ কিন্তু তিনি যতবার সরব হন, ততবারই তৃণমূল পালটা শিশির অধিকারীর উদাহরণ তুলে ধরে ৷
শিশির অধিকারী এখনও তৃণমূলের সাংসদ৷ অথচ বিধানসভা ভোটের আগে তিনি নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দুর হয়ে ভোট চেয়েছেন ৷ বিজেপির ভোট প্রচারের সভায় অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদির (Prime Minister Narendra Modi) সঙ্গে তাঁকে একমঞ্চে দেখা গিয়েছে ৷ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাননি ৷ তৃণমূলের তরফে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে শিশিরবাবুর সাংসদ পদ খারিজের আবেদন করা হয়েছে ৷ সেই আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি এখনও ৷
তাই তৃণমূল বারবার ‘আপনি আচরি ধর্ম’-এর যুক্তি দিয়ে শুভেন্দুকে খোঁচা দেয় ৷ রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য় হিসেবে রাজ্যসভায় যেতে গেলে শিশিরবাবুকে কাঁথির সাংসদ হিসেবে পদত্যাগ করতে হবে ৷ ফলে তৃণমূলের আক্রমণ কিছুটা হলেও ভোঁতা হবে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ৷
দ্বিতীয়ত, শিশির অধিকারী এখন রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় ৷ বিজেপির সরকারের তরফে তাঁকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভার পাঠানো হলে, তিনি আবার সক্রিয় হতে পারবেন ৷ এবার সরাসরি বিজেপির হয়ে কথা বলতে পারবেন ৷ সেটা পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিজেপির জন্য ইতিবাচক হবে ৷ যা লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যকরী হতে পারে গেরুয়া শিবিরের জন্য ৷