কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি : ভবানীপুর স্বর্ণব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় নয়া তথ্য লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে ৷ আততায়ীর সঙ্গে নাকি আগে থেকেই আলাপ ছিল মৃত শান্তিলাল বৈদ্যের ৷ শুধু আলাপই নয়, রীতিমতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ছিলেন শান্তিলাল ও বিশাল শর্মা ৷ একটি অনলাইন ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে দু'জনের পরিচয় ৷ শান্তিলালের সঙ্গে দেখা করতে একাধিকবার এ রাজ্যে আসে দিল্লির ছেলে বিশাল ৷
দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ড হারবারে মৃত স্বর্ণব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্যের একটি ফার্ম হাউস রয়েছে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, বিশাল শর্মা কলকাতায় এলে সেই ফার্ম হাউসেই এসে উঠত ৷ একাধিকবার ওই ফার্ম হাউসে দু'জনের দেখা হয়েছে ৷ তখন থেকেই শান্তিলালের যাবতীয় সম্পত্তির খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে বিশাল শর্মা ৷ স্বর্ণব্যবসায়ীর সম্পত্তির পরিমাণ দেখে বাড়তে থাকে লোভ ৷ সুযোগ খুঁজছিল বিশাল ৷ এরপর সময় বুঝে গোটা অপারেশনটি ঠান্ডা মাথায় সম্পন্ন করে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের ৷
25 লক্ষ টাকা হাতিয়ে যে ট্যাক্সি করে আততায়ী পালিয়েছিল তার চালককে আটক করেছে পুলিশ ৷ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, হাওড়া স্টেশন থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিল আততায়ী । তার নির্দেশেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সাউথ গেটের কাছে তিনি ট্যাক্সি নিয়ে আসেন । এরপর শান্তিলাল বৈদ্যের আত্মীয়ের কাছ থেকে 25 লক্ষ টাকা নেয় (Bhowanipur Murder Case) । এরপর ওই ট্যাক্সিতেই হাওড়া স্টেশনে ফিরে আসে ওই ব্যক্তি ৷ এরপর সে কোথায় গিয়েছে সেই বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি ওই ট্যক্সি চালক । পাশাপাশি মাস্ক পরে থাকায় অভিযুক্ত ব্য়ক্তি কেমন দেখতে সেই বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি ওই ট্যাক্সি চালক ৷ তবে অভিযুক্ত যে হিন্দিভাষী তা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন ট্যাক্সি চালক ৷
আরও পড়ুন : Bhowanipur Murder Case : খুনের আগে বিশালের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক শান্তিলালের, অনুমান হোমিসাইড বিভাগের
জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে প্রাতঃভ্রমণের নামে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ভবানীপুরের স্বর্ণব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্য । তবে বিশাল শর্মার সঙ্গে বাড়ির কাছে গেস্ট হাউজ়টিতে যান ৷ গেস্ট হাউজ়ের রেজিস্টার থেকে ব্যক্তির এই নাম পাওয়া গিয়েছে ৷ সে দিল্লির বাসিন্দা এবং ওই গেস্ট হাউজ়ে চেক ইন করার সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্যকে 'কাকা' বলে পরিচয় দিয়েছিল বিশাল ৷ রবিবার সন্ধে 6টা 40 মিনিট নাগাদ শান্তিলাল বৈদ্য বিশালের সঙ্গে পান খেতে যাওয়ার নামে গেস্ট হাউজের নিচে নামেন, জানান গেস্ট হাউজ়ের কর্মীরা ।
মৃত স্বর্ণব্যবসায়ীর পরিবার পুলিশকে জানায়, সোমবার সন্ধে আনুমানিক 7 টা নাগাদ শান্তিলাল বৈদ্যের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন আসে । স্বর্ণব্যবসায়ীর জন্য 1 কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল ৷ পরিবারের দাবি, শান্তিলালের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয় অভিযুক্ত । এখানেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি আততায়ীর সঙ্গে মৃতের কোনও মতানৈক্য হয়েছিল ? সোমবার 14 ফেব্রুয়ারি রাত 10টা নাগাদ ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে মুক্তিপণ নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয় অভিযুক্ত বিশাল । রাত 11টা নাগাদ ভিক্টোরিয়ার সাউথ গেটের সামনে ট্যাক্সিতে এক ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখে শান্তিলাল বৈদ্যের পরিবারের লোকজন ৷ সেই ব্যক্তি ট্যাক্সির জানালার কাচ নামালে তার হাতে 25 লক্ষ টাকা মুক্তিপণ তুলে দেয় পরিবার ৷ তারপর ট্যাক্সির ভিতর থেকে একটি মোবাইল ফোন তাদের উদ্দেশ্যে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে বেপাত্তা হয়ে যায় ওই ব্যক্তি ৷ এর এক ঘণ্টা পর ঠিক রাত 12টা নাগাদ পরিবারের লোক ভবানীপুর থানায় অভিযোগ জানায় ৷
আরও পড়ুন :BhowanipurMurder case : ভবানীপুরে স্বর্ণব্যবসায়ী খুনে আটক ট্যাক্সি চালক
সাড়ে বারোটা নাগাদ ভবানীপুর থানার পুলিশকে ফোন করে ডেকে পাঠায় গেস্ট হাউজের ৷ এরপর রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ দরজা ভেঙে স্বর্ণব্যবসায়ী শান্তিলালের বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার করে ৷ গলায় ফোনের তার জড়ানো ছিল ৷ হোমিসাইড বিভাগের অনুমান, খুনের আগে বিশাল এবং শান্তিলালের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল ৷ তবে খুনের আগে দু'জনের বচসা হয় এবং তারপর তাঁকে বিকেল 3 থেকে 3.30 মিনিটের মধ্যে খুন করা হয়েছে ৷
শান্তিলাল বৈদ্যের ফোন থেকে বিশাল শর্মার সঙ্গে কথোপকথনের বেশ কিছু অশ্লীল চ্যাট পাওয়া গিয়েছে । গোয়েন্দারা সমস্ত কল ডিটেলস খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিশালের ফোনের টাওয়ার লোকেট করার চেষ্টা চালাচ্ছে ।