কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর : কৃষকদের জন্য আন্দোলন করে 2011 সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ কিন্তু যাঁদের জন্য আন্দোলন করে মানুষের মন জিতেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁদের এখন কী অবস্থা ? সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তরে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের আয় আগের থেকে বেড়েছে ৷ কিন্তু বাংলার কৃষকদের (West Bengal Farmers) এখন কৃষির উপর নির্ভরতা কমছে ৷ কৃষিকাজ থেকে তাঁরা ক্রমশ সরে যাচ্ছেন ৷
জাতীয় নমুনা সমীক্ষার (National Sample Survey) সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট অনুযায়ী, 2019 সালে পশ্চিমবঙ্গের একটি কৃষক পরিবারের মাসিক গড় আয়ের মাত্র 18.5 শতাংশ এসেছে কৃষিক্ষেত্র থেকে । 2019 সালে এই রাজ্যের একটি কৃষক পরিবাবের মাসিক গড় আয় হল 6028 টাকা, যার মধ্যে মাত্র 1126 টাকা (18.5 শতাংশ) এসেছে কৃষিক্ষেত্র থেকে বা সোজা কথায় ফসল বিক্রি থেকে ।
আরও পড়ুন :Calcutta High Court : জয়ী প্রার্থী পদত্যাগ করলে উপনির্বাচনের খরচের দায় কার ? প্রশ্ন আদালতের
2019 সালের হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের একটি কৃষক পরিবারের মাসিক গড় আয়ের 61 শতাংশ এসেছে অন্যান্য বা অকৃষি আয়ের ক্ষেত্র থেকে । প্রতি মাসে পরিবার পিছু গড় আয়ের 3721 টাকা এসেছে অকৃষি ক্ষেত্র থেকে ৷
সাম্প্রতিক এই রিপোর্টটি হল জাতীয় নমুনা সমীক্ষার 70তম রাউন্ড ৷ এর আগের রাউন্ড (69তম) প্রকাশিত হয় 2013 সালে ৷ সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, পশ্চিমবঙ্গের একটি কৃষক পরিবারের মাসিক গড় আয়ের 24.6 শতাংশ আসে কৃষিক্ষেত্র থেকে । তখন একটি কৃষক পরিবাবের মাসিক গড় আয় ছিল 3980 টাকা, যার মধ্যে 976 টাকা (24.6 শতাংশ) আসত কৃষিক্ষেত্র থেকে বা সোজা কথায় ফসল বিক্রি থেকে ।
আরও পড়ুন :Goa TMC : লক্ষ্য বাইশের বিধানসভা, গোয়ায় ঘুঁটি সাজাচ্ছে তৃণমূল
ঠিক তেমনই 2013 সালে পশ্চিমবঙ্গের একটি কৃষক পরিবারের মাসিক গড় আয়ের 53.4 শতাংশ আসত অন্যান্য বা অকৃষি আয়ের ক্ষেত্র থেকে । তখন এই রাজ্যের একটি কৃষক পরিবাবের মাসিক গড়ের আয়ের 2216 টাকা আসত অকৃষি ক্ষেত্র থেকে ৷
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গের কৃষক পরিবারগুলোর জীবনধারণের জন্য কৃষি বা ফসল বিক্রির উপর নির্ভরতা ক্রমে কমেই চলেছে । এই নিয়ে ইটিভি ভারতের তরফে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় ৷ কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি ৷ তবে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘যেকোনও সমীক্ষার স্যাম্পল সাইজ, কীভাবে করা হল এবং কী উদ্দেশ্যে করা হল, এগুলো না জেনে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করা যায় না । আর আমি এখনও রিপোর্টটা স্টাডি করিনি এবং সেটা না করে এর উপর কোনও বক্তব্য দেব না ৷’’
আরও পড়ুন :Srijib Biswas : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত হলে দলটাই উঠে যাবে, দাবি শ্রীজীব বিশ্বাসের
অন্যদিকে বামপন্থী কৃষক নেতা ও সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘কৃষক যে কৃষিকাজের উপর আস্থা হারাচ্ছে এটা কোনও নতুন কথা নয় । গত প্রায় আড়াই দশক ধরেই এটা চলে আসছে । কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের ভ্রান্ত কৃষিনীতি এর জন্য দায়ী । তাই আজ গড়ে প্রতিদিন 52 জন করে কৃষক আত্মহত্যা করে । কৃষি আজ শুধুমাত্র সমস্যার মধ্যে নেই । শুধু সমস্যা হলে তার সমাধান থাকত । কৃষি আজ এক ভয়ঙ্কর সংকটের মুখে, যার কোনও সমাধান নেই ৷’’
আর বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর মতে, ‘‘কৃষক আন্দোলনের হাত ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও এই তৃণমূল কংগ্রেস সরকার কৃষকদের জন্য আদতে কিছুই করেনি । না ব্যবস্থা করেছে উন্নত বীজ সরবরাহের, না উন্নত সেচ ব্যবস্থার । তাই চাষ এখন অলাভজনক । তাই কৃষক যে কৃষির প্রতি নির্ভরতা হারাবে তা আর আশ্চর্য কী ৷’’
আরও পড়ুন :Minakshi Mukherjee : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'টেম্পোরারি মুখ্যমন্ত্রী' বলে কটাক্ষ মীনাক্ষীর