কলকাতা, 6 এপ্রিল : গোঘাট, আরামবাগ, খানাকুল, উলুবেড়িয়া - পর পর এই নামগুলি শোনার পর যদি নির্বাচন বা ভোট শব্দটি যোগ করা হয়, তা হলে প্রথমেই কী মনে পড়ে ? অধিকাংশই উত্তর দেবেন বোধহয় ‘সন্ত্রাস’ ৷ আরও স্পষ্ট করে বললে ভোট-সন্ত্রাস ৷
শুধু তৃণমূল জমানা নয়, বাম আমলেও এই এলাকাগুলিতে ভোটের সময় সন্ত্রাসের বারবার অভিযোগ উঠত ৷ মঙ্গলবার বেলা যত গড়িয়েছে, ততই হাওড়া-হুগলির এই এলাকাগুলিতে ফিরে এসেছে সেই একই ধরনের ভোট-সন্ত্রাসের অভিযোগ এবং রাজনৈতিক হিংসার ছবি ৷
শুধু হাওড়া ও হুগলি জেলা নয়, এদিন পশ্চিমবঙ্গে যে এলাকাগুলিতে নির্বাচন হয়েছে, সেই এলাকার অধিকাংশ জায়গাতেই ভোট-সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে ৷ এমনকী, রাজনৈতিক হিংসার ছবি সামনে উঠে এসেছে ৷ কোথাও আক্রান্ত বিজেপি, অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস ৷ আবার কোথাও আক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রস, অভিযুক্ত বিজেপি ৷
আরামবাগে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁকে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে ৷ তাঁর মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয় ৷ অন্য দিকে পুলিশের সামনেই গলা ধাক্কা ও চড় মারা হয়েছে উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারীকে ৷ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় তৃণমূল-বিজেপি ও অন্য পক্ষের বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন ৷
ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এগুলো কীসের ইঙ্গিত ? কেন এভাবে মহিলারা প্রার্থীদের উপর বেপরোয়া ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে ? তাহলে হাওড়া-হুগলির এই অঞ্চলগুলি কি সেই অতীতের মতো সন্ত্রাস কবলিত হয়ে পড়ে রয়েছে ?
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা বলছেন যে এই রাজ্যে ভোট মানেই হিংসা ৷ সেই বিষয়টি মঙ্গলবার আরও একবার তা প্রমাণিত হয়ে গেল ৷ আর আরামবাগ, খানাকুল, উলুবেড়িয়ার পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে বলে তাঁদের মত ৷
এই মতের পিছনে ওই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের যুক্তি, বাম আমলে সায়েন্টিফিক রিগিং হত ৷ সেই সময় ভোটে এত কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হত না ৷ আর মিডিয়ার সংখ্যাও এত বেশি ছিল না ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ছিল না ৷ তাই অনেক ঘটনাই ভোটের দিন অনেক ঘটনাই সামনে আসত না ৷ অনেক পরে জানা যেত ৷
তবে মহিলা প্রার্থীদের উপর এভাবে চড়াও হওয়ার ঘটনা এ রাজ্যের রাজনীতিতে সত্যিই বিরল বলে অনেকের মত ৷ তবে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের ধারণা, ভোটের দফা যত এগিয়ে যাবে, ততই এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ৷ কারণ, প্রথম দুই দফায় তুলনামূলক বিজেপির শক্তঘাঁটিতে ভোট হয়েছে ৷ কিন্তু এখন তৃণমূলের শক্তঘাঁটিতে ভোট হচ্ছে ৷ তাই ক্ষমতা ধরে রাখা ও ক্ষমতা দখল করার একটা মরিয়া প্রচেষ্টা প্রধান দুই প্রতিপক্ষ শিবিরের মধ্যে আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৷ তার ফলে ভোট সংক্রান্ত হিংসা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৷
আরও পড়ুন :উলুবেড়িয়ায় পাপিয়া অধিকারীকে সপাটে চড়, তৃণমূলকে নিশানা বিজেপি প্রার্থীর
এখন দেখার সামগ্রিক বিষয়টি দেখার পর নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেয় ! নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটের পরবর্তী দফাগুলিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হলে, এই হিংসার ছবিটা কিছুটা হলেও ফিকে হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ৷