কলকাতা, 24 জুন : চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে দুরন্ত পারফরম্যান্সের প্রশংসার গল্প আমাদের জানা । একাধিক উদাহরণ রয়েছে হাতের কাছেই । কিন্তু চোট সারিয়ে প্রত্যাবর্তনের গল্প যদি 'কাজের পাহাড়ে' হারিয়ে যেতে বসে, তখন প্রতিভার 'অপমৃত্যু' সঠিক শব্দগুচ্ছ । তবুও শেষ চেষ্টা দাঁতে দাঁত চেপে চলতে থাকে । বছর ছয়েক আগে যাঁকে ঘিরে পদকের স্বপ্ন আবর্তিত হতো, সেই চন্দন বাউড়ি আজ সিভিক ভলান্টিয়ার । হাওড়া ব্রিজের তলায় হাওড়া ট্রাফিক গার্ডের অধীনে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করেন ।
কয়েক বছর আগে হাঁটু, গোড়ালি, কুঁচকির চোট তাঁকে পৌনপৌনিকভাবে ট্র্যাক থেকে ছিটকে দিয়েছে । কিন্তু অদম্য চেষ্টাকে সম্বল করে সোনালি বিকেলে ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন চন্দন । সেই প্রত্যাবর্তনের পথে অন্তরায় গ্রিন পুলিশের চাকরি এবং বর্তমান সময় । চারুচন্দ্র কলেজের ফিজিক্যাল এডুকেশন নিয়ে পড়া প্রথমবর্ষের এই ছাত্রকে বর্তমানে প্রতিদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে হয় । আগে সপ্তাহে দিন তিনেক গেলেই চলত । কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে বাড়তি ডিউটি করতে হচ্ছে । তার ওপর পোস্তার ভাঙা সেতু সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হওয়ায় রাস্তায় ট্রাফিকের চাপ বেড়েছে । ফলে প্রতিদিন যেতেই হচ্ছে । তার উপর দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হচ্ছে ৷ ফলে চোটের জায়গাগুলো প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পাচ্ছে না । 'আগে দু-তিনদিন গেলেই হতো । এখন পরিস্থিতি এমন যে রোজ যেতে হচ্ছে । বারবার আবেদনেও রেহাই মিলছে না । কোভিড পরিস্থিতির কারণে এই অবস্থা । 9 হাজার টাকা মাসের শেষে পাই । না যেতে পারলে টাকা কাটা যায় । কেটেকুটে মাসের শেষে সাত-সাড়ে সাত হাজার টাকার বেশি হাতে পাই না,' অসহায় শোনাচ্ছিল চন্দনের গলা ।
বাড়ি হুগলির তারকেশ্বরে । দারিদ্র নিত্যসঙ্গী । মা লোকের বাড়ি কাজ করে তাঁকে বড় করেছেন । এখন বয়স এবং শরীরের কারণে কাজ করতে পারেন না । চন্দনের উপার্জনেই সংসার চলে । দারিদ্র উপেক্ষা করেই কোচ রাজদীপ কারকের কড়া নজরদারিতে চন্দন বাউড়ি বাংলার অ্যাথলিট জগতে প্রতিভাবান নাম হিসাবে দ্রুত উঠে এসেছিলেন । অনুর্ধ্ব 16 এবং 18 বিভাগের চারশো মিটার দৌড়ে রাজ্য এবং জাতীয় পর্যায়ে রেকর্ড রয়েছে । অনুর্ধ্ব 20 বিভাগে জাতীয় মিট রেকর্ড করেছিলেন । এই বিভাগের রাজ্য রেকর্ড চন্দনের ঝুলিতে রয়েছে ।
যাকে ঘিরে আগামীর স্বপ্ন গড়ে উঠেছিল সেই চন্দন বাউড়ি কি দৌড় ছেড়ে দিলেন ? প্রশ্নটা শুনেই আঁতকে উঠলেন বছর কুড়ির তরুণ ৷ 'এখন সোমা বিশ্বাসের কাছে অনুশীলন করছি । ছেড়ে দেওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । 2016 সালে ভারতের অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি শিবিরে চোট পেয়েছিলাম । পোলান্ডে শিবির হয়েছিল । চোটের চিকিৎসা করলেও সুস্থ হচ্ছিলাম না । হাঁটু এবং কুচকিতে চোট লেগেছিল । বাড়িতে ফিরে এসে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছিলাম । 2018 সালে রাজ্য মিটে অংশ নিয়ে রেকর্ড সময় করে সোনা জিতেছিলাম । কিন্তু আবার ছিটকে যাই গোড়ালির চোটের কারণে । আমার ফ্ল্যাট ফুট । ফলে চোট লাগলে সারতে সময় নেয় । তবে এখন সুস্থ । অনুশীলন করছি । গত দেড় বছর তো সব কিছু বন্ধ । অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি সুযোগের আশায়, 'বলছিলেন চন্দন । একটু থেমে ফের যোগ করলেন, 'চোট আঘাত খেলোয়াড়দের অঙ্গ । চোট সারিয়ে ফিরে আসা নতুন নয় । কিন্তু সুযোগ দরকার । এখন খেলা হচ্ছে না । এই অবস্থায় রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে হচ্ছে । অফিসে বসে কাজ হলেও ঠিক ছিল ৷ কঠিন পরিশ্রমের পরে এই ডিউটির চাপ সামলানো কঠিন । ভারসাম্যের চেষ্টা করছি বলতে পারেন । অফিস সাহায্য করে সাধ্যমতো । তাই হাল ছাড়ব না ।'