কলকাতা, 25 অক্টোবর : একটা সময় তিনি আর বঙ্গ বিজেপির ছিল কার্যত সমর্থক ৷ তার কথাই যেনও ছিল শেষ কথা। মধ্য কলকাতার মুরলিধর সেন লেনে বিজেপির সদর দফতরে সর্বত্রে ছিল তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত ৷ কোথাও কাট-আউট, কোথায় পোস্টার ৷ গোটা চত্বরেই মিলত দিলীপ-দর্শন। কিন্তু সদ্যপ্রাক্তন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এখন কেন্দ্রীয় দায়িত্বে ৷ দায়িত্ব বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর একদা চেনা মাঠে ব্রাত্য মেদনীপুরের সাংসদ। বিজেপির সদর দফতরে প্রবেশদ্বার আলো করে রয়েছেন বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুধু প্রবেশদ্বারে কেনও অন্য কোথাওই চোখে পড়ছে না দিলীপের ছবি।
বছর দু'য়েক আগেই বঙ্গ বিজেপিতে জোয়ার এসেছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক থেকে বিজেপি কর্মীরা অনেকেই মনে করেন, বাংলায় বিজেপি রমরমা বেড়েছিল দিলীপের হাত ধরেই ৷ লোকসভায় ১৮টি আসনে জয়লাভ, বিধানসভার ৭৭টি আসন জেতার নেপথ্যে দিলীপের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য ৷ এখানেই তাঁর অনুগ্রামীদের প্রশ্ন, এত তাড়াতাড়ি বঙ্গ বিজেপি কীভাবে ভুলে গেলও দিলীপকে।
বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীনই দলে কিছুটা হলেও গুরুত্ব হারাচ্ছিলেন দিলীপ। নির্বাচনে পরাজয়ের পর সেটা আরও বাড়ে। শোনা যায়, তার আপত্তি কার্যত উড়িয়ে দিয়েই শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর পর কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ সাম্রাজের পতন। শেষমেশ রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরে যান দিলীপ। পান বিজেপির কেন্দ্রীয় দায়িত্বে ৷ তখন সাংবাদিকদের বারবার বলেছিলেন, দল যে দায়িত্ব দেবেন সেটাই পালন করবেন। কিন্ত তাঁর আসল কাজের জায়গায় বাংলার। সুতরাং বাংলা ছেড়ে কোথাও যাবেন না। কিন্ত কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলও তাঁর সাধের পাটি অফিসও তাঁকে ভুলে গিয়েছে ৷
বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্য সদর দফতরের সামনে যেভাবে সুকান্ত-শুভেন্দুর ছবি লাগানো হয়েছে। তাতে দিলীপ গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের সামনে কিছু না জানালেও, তাদের বক্তব্য বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে যাঁর অবদান সব থেকে বেশি, তাঁকেই রাজ্য দফতর থেকে এত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলা হল। যদিও দিলীপ-সুকান্ত এক সঙ্গে জেলা সফর করছে। তাতেও বঙ্গ বিজেপিতে এই ঘটনার নজির আগে কোনও দিনই চোখে পড়েনি।
Dilip Ghosh : মুরলিধর সুকান্ত-শুভেন্দুময়, পদ খোয়াতেই পার্টি অফিস থেকে উধাও দিলীপের ছবি - বঙ্গ বিজেপি
বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্য সদর দফতরের সামনে যেভাবে সুকান্ত-শুভেন্দুর ছবি লাগানো হয়েছে, তাতে দিলীপ গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের সামনে কিছু না জানালেও, তাদের বক্তব্য বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে যাঁর অবদান সব থেকে বেশি, তাঁকেই রাজ্য দফতর থেকে এত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলা হল।
আরও পড়ুন :বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি যেন বঙ্গে না হয়, তারা মায়ের কাছে প্রার্থনা সুকান্ত-দিলীপের
সূত্রের দাবি, সুকান্ত-দিলীপ দু‘জনই আরএসএস-এর ঘরের ছেলে হিসাবেই সংঘ পরিবারে পরিচিত ৷ দু'জনের মধ্যেই সম্পর্কও খুবই মধুর। দু'জনের মধ্য বোঝাপড়ার অঙ্কও দেখে অনেক নেতাই অবাক হয়েছেন। শোনা যায়, বঙ্গ বিজেপিতে নিজের উত্তরসূরি নিজেই বেছে নিয়েছিলেন দিলীপ ৷ সুকান্ত মজুমদারের নাম তিনিই প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্ত রাজ্য দফতরে দিলীপের ছবি সরানো নিয়ে কেউ হিসাব মেলাতে পারছে না।
বঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই বিষয়টা জানা নেই। খোঁজ খবর নিতে হবে। তবে, দলের কাছে এই বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। এটা আমরা এই শুনলাম ৷" বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা দিলীপ ঘোষকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।