কলকাতা, 16 জানুয়ারি : কোভিড মোকাবিলায় সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে মুখ পুড়েছে রাজ্য প্রশাসন তথা সরকারের ৷ ভুল হিসাব নজর এড়ায়নি নেট নাগরিকদের ৷ বিষয়টি নিয়ে আগেই সরব হয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty) ৷ এবার মুখ খুললেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য (Amit Malviya Tweets on Bengal Covid Situation) ৷ রাজ্য়ের সমালোচনায় হাতিয়ার করলেন বাংলার সরকার এবং ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Abhishek Banerjee) দেওয়া পরিসংখ্যান ৷
আরও পড়ুন :Municipal Election 2022 : ‘ব্যক্তিগত মত’-এ সিলমোহর, ভোট পিছনোয় হাইকোর্ট ও কমিশনকে ধন্যবাদ জানালেন অভিষেক
দিন দু‘য়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় দু’টি পরিসংখ্যান নিয়ে তুমুল সমালোচনা এমনকী, ঠাট্টা, তামাশাও শুরু হয় ৷ একের পর এক মিমে ভরে যায় ভার্চুয়াল দেওয়াল ৷ এর মধ্যে একটি পরিসংখ্যান রাজ্য়ের স্বাস্থ্য দফতর এবং অন্যটি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয় ৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, গত 12 জানুয়ারি গোটা রাজ্যে করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে 71 হাজার 792 জনের ৷ তাঁদের মধ্যে পজিটিভ হয়েছেন 22 হাজার 155 জন ৷ অন্যদিকে, ওই একই দিনে ডায়মন্ডহারবারে মোট 53 হাজার 203 জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে মাত্র 1 হাজার 151 জন পজিটিভ ৷ তাহলে অঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, 12 জানুয়ারি ডায়মন্ডহারবার বাদে বাকি রাজ্যে মোট 18 হাজার 589 জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৷ অথচ ডায়মন্ডহারবার বাদে বাকি রাজ্যে ওই দিন করোনা পজিটিভ হয়েছেন 21 হাজার 4 জন ৷ যার অর্থ ওই দিন গোটা রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণের হার (Daily Covid Positivity Rate) ছিল 113 শতাংশ ! যা একেবারেই অসম্ভব ৷
14 জানুয়ারি বিস্তারিতভাবে এই হিসাব তুলে ধরে সরাসরি ‘পিসি-ভাইপো’ এবং ‘ডায়মন্ডহারবার মডেল’কে আক্রমণ করেছিলেন সুজন ৷ রবিবার ঠিক সেই কাজটিই করেছেন অমিত মালব্য ৷ দু’টি ক্ষেত্রেই বার্তা খুব স্পষ্ট ৷ রাজ্যে করোনার দৈনিক সংক্রমণ সংক্রান্ত হিসাবে যে বিস্তর গরমিল থেকে যাচ্ছে, নিজেদের টুইটে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন সুজন, অমিতরা ৷
বস্তুত, করোনার প্রথম পর্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারের (Mamata Banerjee led Government) বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা ৷ ওমিক্রনের আগমনের পর গোটা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়েছে ৷ তারপরও গঙ্গাসাগর মেলা ও পৌর নির্বাচন (Municipal Election 2022) করানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি রাজ্যের সরকার ৷ এই প্রেক্ষাপটে হঠাৎই উল্টো সুর গেয়ে দু’মাসের জন্য সবকিছু বন্ধ রাখার পক্ষে সওয়াল করে বসেন অভিষেক ৷ করোনা ঠেকাতে তাঁর সংসদীয় এলাকা ডায়মন্ডহারবারে বিধিনিষেধ কঠোর করা হয় ৷ করা হয় আলাদাভাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ৷ যদিও নিন্দুকেরা বলছেন, করোনা আবহে এমপি কাপের আয়োজন করায় মুখ পুড়েছে অভিষেকের ৷ সেই দায় ঝাড়তেই ডায়মন্ডহারবার নিয়ে এত কড়াকড়ির বহর ৷
এরপর মূলত দু’টি ঘটনা ঘটে, যা অত্যন্ত লক্ষ্যণীয় ৷ প্রথমত, ডায়মন্ডহারবারকে ‘মডেল’ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ বোঝানোর চেষ্টা হয়, ডায়মন্ডহারবারের দেখানো পথে চললেই গোটা রাজ্যে করোনা বাগে আসবে ৷ আর দ্বিতীয়ত, এতদিন একগুঁয়ে মনোভাব দেখানোর পর হঠাৎই চার পৌরনিগমের ভোট তিন সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দিতে সায় দেয় রাজ্য ৷ দ্রুত তা কার্যকর করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ যার জন্য টুইটারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং কলকাতা হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি অভিষেক ৷ উপরন্তু, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য়ে দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার তিন শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান তিনি ৷ বর্তমানে যা 30 শতাংশেরও বেশি !
আরও পড়ুন :Municipal Election 2022 : কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে একদিনে পৌরভোটের ফল ঘোষণার দাবি বামেদের
কোন উপায়ে সংক্রমণের হার 30 থেকে 3 শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা হবে, সেটা আপাতত অজানা ৷ অভিষেক নিজে তা নিয়ে কিছু বলেননি ৷ কিন্তু, তা বলে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তো আর চুপ করে বসে থাকবেন না ৷ রবিবার যেমন আরও একটি পোস্ট করেন সুজন ৷ তাতে ‘ভাইপোর নিদান’ শীর্ষক একটি কবিতা লেখেন তিনি ৷ যার মোদ্দা কথা হল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় যখন বলেছেন, সংক্রমণের হার কমাতে হবে, তখন কাগজে কলমে তা কমিয়ে দেখাতে কোনও খামতি রাখবে না মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সরকার ৷ তার জন্য প্রয়োজনে হিসাবে জল ঢালা হবে ৷ যেমনটা করা হয়েছিল গত 12 জানুয়ারি ৷ পরিসংখ্যান তুলে ধরে সেই একই কথা বলেছেন অমিত মালব্যও ৷