কলকাতা, 29 অগস্ট:কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) এবং হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষের (Arunava Ghosh) মধ্যে দড়ি টানাটানি অব্যাহত ৷ বিচারপতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছে বার অ্যাসোসিয়েন ৷ আবার তার পাল্টা জবাব দিয়ে এই নিয়ে সরব হয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ও ৷ তিনি বলেছেন, "দুর্নীতিকে সামনে এনেছি বলেই চিঠি দেওয়া হয়েছে আমার বিরুদ্ধে ৷"
গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া এক চিঠিতে অভিযোগ জানিয়েছেন, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সময় মতো এজলাসে আসেন না । আবার সময়ের অনেক আগেই আদালত কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান । রাজনৈতিক বিষয় জড়িত আছে এই সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্যান্য মামলাও তিনি শোনেন না ।
এ দিন সকালে একটি মামলার শুনানির সময় এ ব্যাপারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমার বিরুদ্ধে কয়েকজন আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন । আমি অবাক হয়েছি । চিঠিতে লেখা হয়েছে আমি একটি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে কাজ করছি । আমার জন্য কতগুলো মানুষ জেলে রয়েছে । কতজন গ্রেফতার হয়েছে । আমার বেঞ্চে কাউকে টাকা দিতে হয় না মামলা তোলার জন্য । এগুলো বন্ধ করে দিয়েছি, সে সব নিয়ে কেউ একটা কথা লেখেনি ।" তিনি আরও বলেন, "ওরা আমাকে নিয়ে পড়েছে কারণ আমি কোরাপশন সামনে এনেছি । এই আদালতের অনেক বিচারপতিই দেরি করে বসেন । কেউ দুপুর 12টায় বসেন, আবার উঠে যান বিকেল 3টের সময় । সেই সমস্ত বিচারপতিকে নিয়ে কেন কোনও চিঠি লেখা হয় না ?''
আরও পড়ুন:ক্রমশ বাড়ছে তরজা, ফের এজলাসে বসেই অরুণাভ ঘোষের সমালোচনায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
একইদিনে পালটা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে সশরীরে দরবার করলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ । এ দিন কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক সদস্যকে নিয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হাজির হয়ে জানান, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সময় মতো বেঞ্চে বসেন না । কখনও সময়ের আগে, কখনও সময়ের পরে বসেন । অন্যান্য সমস্ত মামলার শুনানি বন্ধ রেখে অথবা না করে শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট মামলার শুনানি করছেন । অরুণাভ ঘোষ আরও জানান, বিচারপতি মিডিয়ার লোকজনের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখছেন । কোর্টরুমে ভিডিয়োগ্রাফি করতেও বলা হয়েছিল মিডিয়াকে । তাঁর বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়ায়, তিনি আদালত অবমাননার মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের ।
প্রধান বিচারপতি সমস্ত কিছু শোনার পর বলেন, "এই প্রতিষ্ঠান দুই পক্ষের সহায়তায় চলা প্রতিষ্ঠান । বিচারপতি ও আইনজীবীদের সহায়তায় এই প্রতিষ্ঠান চলে । দু পক্ষেরই দায়িত্ব প্রচুর । শান্তি বজায় রাখুন ।" তবে তিনি অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ।
অন্যদিকে, বিজেপির তরফে আবার আর একটি চিঠি দিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিচারপতিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আর্জি জানানো হয়েছে । পাশাপাশি যে ভাবে বিচারপতিদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে আদালত স্বতঃস্ফূর্ত মামলা দায়ের করুক বলেও আর্জি জানানো হয়েছে । তাদের আরও আর্জি, এই পরিস্থিতিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিটারমিনেশন যাতে কোনও ভাবেই পরিবর্তন করা না হয় ।