কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: দেশে তাদের আওতাভুক্ত সমস্ত কলেজ (College) ও বিশ্ববিদ্য়ালয়কে (University) 'বহুমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান' (Multidisciplinary Educational Institutions)-এ পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি (UGC) ৷ গত 2 সেপ্টেম্বর এই মর্মে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তারা ৷ তারই বিরোধিতায় এবার সরব হল 'অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন' (All India Democratic Students Organisation) বা এআইডিএসও (AIDSO) ৷
কেন্দ্রের দাবি, ইউজিসি-এর এই পদক্ষেপ ঐতিহাসিক ও বৈপ্লবিক ৷ এমনকী, এই সিদ্ধান্তকে গণশিক্ষার সহায়ক বলেও দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ কিন্তু, এআইডিএসও নেতৃত্ব তা মানতে নারাজ ৷ তাদের বক্তব্য, এই শিক্ষানীতিতে 'মাল্টি' (Multi) শব্দটি বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে ৷ যেমন মাল্টিপল এগজিট, মাল্টিপয়েন্ট , মাল্টিপল এন্ট্রি, মাল্টিডিসিপ্লিনারি ব্যাচেলর ডিগ্রি, মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স, মাল্টিডিসিপ্লিনারি এডুকেশনাল ইনস্টিটিউসনস প্রভৃতি ৷ আদতে এই শব্দগুলি প্রয়োগ করে শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক এবং গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলিকেই অস্বীকার করা হচ্ছে বলে মনে করেন সংগঠনের নেতারা ৷ তাঁদের মতে, শিক্ষাকে পণ্য়ে পরিণত করতেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷ এর সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণ সাধনের কোনও সম্পর্ক নেই ৷
আরও পড়ুন:কেন্দ্রের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ঝাড়গ্রামে ঐশী ঘোষের নেতৃত্বে এসএফআইয়ের জাঠা
এই প্রসঙ্গে এআইডিএসও-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মণিশংর পট্টনায়ক বলেন, আবারও প্রমাণিত হল, 2020 সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একে যতই বৈপ্লবিক বা ঐতিহাসিক বলে দাবি করুক, আসলে তা একটি ছাড়পত্র ৷ যার সাহায্য়ে পুঁজিবাদের হাঙররা শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে ৷ এই কারণেই তাঁদের সংগঠনের তরফে লাগাতার নতুন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করা হচ্ছে বলে জানান মণিশংকর ৷
এআইডিএসও নেতা বলেন, "আমরা প্রথম থেকেই এর সার্বিক প্রতিবাদ করছি ৷ এখনও আন্দোলনের রাস্তায় আছি ৷" ইউজিসি-এর নয়া নির্দেশিকা অনুসারে, একজন ছাত্র বা ছাত্রী নিজের মর্জি মাফিক যখন-তখন পঠনপাঠনের বিষয় এমনকী প্রতিষ্ঠানও বদলে ফেলতে পারবেন ৷ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অ্য়াকাডেমিক ক্রেডিট সংগ্রহ করতে পারবেন ৷ দ্বৈত ডিগ্রিরও সুযোগ থাকবে ৷ এই ধরনের শিক্ষাপদ্ধতিকে সচল রাখতে যে মানের পরিকাঠামো থাকা দরকার, আমাদের দেশে তা নেই ৷ ফলত, কালক্রমে ক্লাসরুমের পঠনপাঠন কার্যত উঠে যাবে ৷ বদলে পুরো ব্যবস্থাটাই চলবে অনলাইনে ৷
সমস্যা এখানেও আছে ৷ কারণ, ভারতীয় আর্থ-সামাজিক পরিসরে খুব কম পরিবার আছে, যারা পড়াশোনার জন্য পড়ুয়াদের অনলাইন ব্যবস্থা-সহ অন্য়ান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা দিতে সক্ষম ৷ ফলে বহু পড়ুয়াই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে ৷ শিক্ষার অধিকার সীমিত থাকবে কেবলমাত্র ধনী গোষ্ঠীর মধ্য়ে ৷ শিক্ষা কেবলমাত্র বাণিজ্যে পরিণত হবে ৷ এই যুক্তিগুলিকে সামনে রেখেই ইউজিসি-এর নয়া নির্দেশিকার বিরোধিতায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এআইডিএসও ৷