কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর : আনন্দপুরের ঘটনায় অবশেষে অভিযুক্তের গাড়িটির সন্ধান পেল পুলিশ। যাদবপুর এলাকার এক আবাসন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গাড়িটি । জানা গেছে, অভিযুক্তের নাম অমিতাভ বসু নয়। তার নাম অভিষেক পান্ডে । গাড়িটি উদ্ধার হলেও এখনও পর্যন্ত অভিষেকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে তদন্তকারীদের দাবি, তার সম্পর্কে বেশ কিছু সূত্র পাওয়া গেছে।
ঘটনার রাত অর্থাৎ শনিবার নির্যাতিতা যুবতি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তর সঙ্গে 5 দিন আগে সোশাল মিডিয়ায় আলাপ। তা থেকে ঘনিষ্ঠতা। সেই সূত্র ধরে প্রথমবার দেখা করতে গিয়েছিলেন যুবতি। সামনাসামনি দেখা হওয়ার পর যুবতিকে মুখোমুখি হতে হয় এক চূড়ান্ত খারাপ অভিজ্ঞতার। গভীর রাত হয়ে গেলেও ওই যুবতিকে অভিযুক্ত বাড়ি যেতে দিতে চায়নি । অভিযোগ, বাড়ি ছেড়ে দিতে বললে শুরু হয় মারধর। করা হয় শ্লীলতাহানি।
আনন্দপুরের ঘটনায় যুবতির বয়ানে অসংগতি, উদ্ধার অভিযুক্তের গাড়ি
যুবতির বক্তব্যে একাধিক অসংগতি পেয়েছে পুলিশ । অভিযুক্তের খোঁজ চলছে । এদিকে, বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত মহিলার আজ সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে ।
ওই যুবতি পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী। আর অভিযুক্ত পেশায় একজন পদস্থ বীমাকর্মী। রুবির হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর যখন ওই যুবতিকে নয়াবাদের ফ্ল্যাটে ছেড়ে দেয় পুলিশ, তখন তদন্তের প্রয়োজনেই ওই যুবতির ফোন নম্বর চেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ওই যুবতি জানান, অভিযুক্তের গাড়িতেই পড়ে রয়েছে তাঁর ফোন। সেই ফোন নম্বরের টাওয়ার লোকেশনে দেখা যায় যুবতির বাড়িতেই রয়েছে ফোন । তখন ফের তদন্তকারীরা যোগাযোগ করেন যুবতির সঙ্গে। যুবতি তখন তদন্তকারীদের জানান, রাতে নিরাপত্তারক্ষীর মাধ্যমে ফোন ফেরত দিয়ে গেছে অভিযুক্ত। কিন্তু তাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং কলের সমস্ত রেকর্ড মুছে দিয়ে গেছে। মূলত হোয়াটসঅ্যাপ কল এবং চ্যাটেই কথা হত তাদের। যুবতির এই বয়ানে খটকা লাগে তদন্তকারীদের । মাত্র পাঁচ দিনের আলাপে ফোনের লক কি করে জানতে পারে ওই যুবক?
এরপরই তদন্তে উঠে আসে বেশ কিছু তথ্য। জানা যায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ওই যুবতির সঙ্গে আলাপ রয়েছে অভিযুক্তের। ওই যুবকের মা দাবি করেছেন, যুবতির সঙ্গে বিয়ের কথা চলছিল তাঁর ছেলের। যার সঙ্গে পাঁচ বছরের আলাপ, বিয়ের কথা চলছিল, সেটা কি সত্যিই নাম ভাঙিয়ে ? পাঁচ বছর ধরে পরিচয় লুকিয়ে আদৌ কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সম্ভব? পাশাপাশি তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই যুবকের সঙ্গে একই জায়গায় অতীতে কাজ করতেন যুবতি । তাঁর কথার অসংগতি থেকেই পুলিশ বেশ কিছু সূত্র পায়। সেই সূত্র ধরেই অভিষেকের সন্ধান পাওয়া যায় । উদ্ধার হয় তার গাড়ি। তার আগে অবশ্য পাটুলির এক রেস্তরাঁর CCTV ফুটেজের সূত্র ধরে গাড়িটির নম্বর চিহ্নিত করেছিলেন তদন্তকারীরা।
শনিবার রাতে ঘটনার সময় ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক দম্পতি। তাদের নাম নীলাঞ্জনা চাটার্জি এবং দীপ শতপতি। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের মেয়ে। তাঁরা এক আত্মীয়র বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাস্তায় যুবতির শ্লীলতাহানি দেখে এগিয়ে যান তাঁরা। তখন অভিষেক তার দামি গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় যুবতিকে। কিন্তু পালানোর সময় সে গাড়ির চাকা তুলে দেয় নীলাঞ্জনার পায়ে । ওই মহিলার পা মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে । আজ নীলাঞ্জনাদেবীর পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।