পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

নাতনিকে পাচারকারীদের থেকে উদ্ধার করেও জেল খাটছেন বৃদ্ধা, হাইকোর্টে মুক্তির আবেদন - হরিয়ানা সেশন কোর্ট

নাতনিকে পাচার হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন কমলা হালদার ৷ কিন্তু, সেই অপহরণের মামলায় হাজিরা না দেওয়াতেই জেল খাটছেন তিনি । অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবিতে হাইকোর্টে যান ছোটো মেয়ে রুমা নস্কর ৷

kamala halder
বিনা অপরাধে জেল খাটছেন দিদিমা

By

Published : Feb 20, 2020, 9:26 PM IST

কলকাতা, 20 ফেব্রুয়ারি: নাতনিকে পাচার হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তাড়া করে বেড়ায় এখনও ৷ সেই ভয়েই হরিয়ানা কোর্টে তাকে হাজিরা দিতে বলা হলেও যাননি তিনি ৷ আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় তিনমাস ধরে জেল খাটছেন জয়নগরের বাসিন্দা কমলা হালদার ৷ অবিলম্বে মুক্তির আবেদন জানিয়ে আদালতে তাঁর ছোটো মেয়ে ৷

দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা কমলা হালদারের দুই মেয়ে মমতা মণ্ডল ও রুমা নস্কর ৷ বড় মেয়ে মমতার দুই মেয়ে- মধুমিতা ও সুস্মিতা ৷ 10 বছর আগে মমতার স্বামী নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ কিছুদিন পর মমতার সঙ্গে পরিচয় হয় ভিনধর্মী এক ব্যক্তির । সেই সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে ৷ 2018 সালে ওই ব্যক্তিকে বিয়ে করে দিল্লিতে চলে যান মমতা । নাম বদলে হন বাবলি খান ৷ দুই মেয়ে থেকে যায় দিদিমার কাছে ৷ নাতনিদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন কমলা হালদার । তাদের ভরতি করেন একটি মিশনারি স্কুলে ৷

বড় নাতনি মধুমিতা (13) ভালো বাস্কেটবল খেলায় স্কুল থেকে ন্যাশনাল সিলেকশন ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত করা হয় । চাওয়া হয় জন্মের শংসাপত্র ৷ শংসাপত্র মায়ের কাছে থাকায়, তা আনতে 2018 সালের 25 ডিসেম্বরের ছুটিতে দুই নাতনিকে নিয়ে দিল্লি যান কমলা হালদার ৷ দিল্লি গিয়ে বিপদে পড়েন তিনি । নিজের মেয়েদের পাচার করে দেওয়ার জন্য অপহরণ করে মমতা ও তার বর্তমান স্বামী ৷ পাচারকারীদের ডেরা থেকে কোনওক্রমে দুই নাতনিকে নিয়ে পালিয়ে আসেন দিদিমা ৷ দিল্লি স্টেশনে ঢোকার সময় দুষ্কৃতীরা বড় নাতনি মধুমিতাকে তুলে নিয়ে যায় ৷ হরিয়ানা পুলিশ মধুমিতাকে উদ্ধার করে একটি হোমে পাঠিয়ে দেয় ৷ ছোটো নাতনিকে নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি ৷

কলকাতায় ফিরে রাজ্য পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি । কিন্তু পুলিশ জানায় বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারের বাইরে ৷ বাধ্য হয়ে গত বছর জানুয়ারিতে জয়মাল্য বাগচি ও মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন কমলা হালদার ৷ শুনানি চলাকালীন হরিয়ানা পুলিশকে খবর দিলে তারা মধুমিতার মা ও সৎ বাবার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করে এবং তাদের গ্রেপ্তারও করে ৷ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি নির্দেশ দেন, মধুমিতাকে অবিলম্বে এই রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হোক । আদালতের নির্দেশমতো বারুইপুরের SP একটি টিম গঠন করে হরিয়ানা থেকে মধুমিতাকে ফিরিয়ে আনে । এরপর সে ফের স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে ৷ ইতিমধ্যে হরিয়ানা সেশন কোর্ট ও রেওয়ারি সেশন কোর্টে মধুমিতার মা ও সৎ বাবার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা শুরু হয় ৷ যেহেতু কমলা হালদার এই ঘটনার মূল সাক্ষী ছিলেন তাই আদালত তাকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য হরিয়ানায় ডাকে । কিন্তু ভয়ে তিনি হাজিরা দিতে যাননি । এরপর দুবার আদালত তাঁকে সমন পাঠায় । তা সত্ত্বেও তিনি হাজিরা দিতে যাননি । গত বছর অক্টোবরে হরিয়ানা পুলিশ এসে কমলা হালদারকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ।

সেই থেকেই তিনি হরিয়ানার জেলে বন্দী রয়েছেন । আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ভিনরাজ্যে আইনি সহায়তাও নিতে পারেননি তিনি । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কমলা হালদারের ছোটো মেয়ে রুমা নস্কর মাকে হরিয়ানার জেল থেকে উদ্ধারের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন । ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরি বলেন, ‘‘ওই ভদ্রমহিলাকে যাতে অবিলম্বে পুলিশ ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করে, সেই দাবিতে আজকে আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছি। আগামীকাল এই মামলার জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন করা হবে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চে । কমলা হালদার এই মামলায় একজন সাক্ষী । কিন্তু তিন মাসের বেশি হয়ে গেল তিনি বিনা অপরাধে জেল খাটছেন ।’’

ABOUT THE AUTHOR

...view details