কলকাতা, 19 সেপ্টেম্বর: তিন জন নয় । চিৎপুরে তৃণমূল নেত্রীর ফ্ল্যাটে ছিল চারজন পুরুষ । চতুর্থ যুবক একজন পুলিশকর্মী । ইতিমধ্যেই ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক যৌনকর্মী । তার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে ।
পাইকপাড়ায় বিলাসবহুল আবাসন । শনিবার তার একটি ফ্ল্যাটে শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি । প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেন বড়সড় ঝামেলা চলছে । তারা পুরো বিষয়টি নিরাপত্তারক্ষীদের জানায় । নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেন, দুই যুবককে নেমে আসতে । তাদের একজনের হাতে রক্তের দাগ ছিল । তিনি নিজেকে পুলিশকর্মী বলে পরিচয় দেন । নিরাপত্তারক্ষীরা পুরো বিষয়টি চিৎপুর থানায় জানায় । পুলিশকর্মীদের আসতে দেখে চারতলা থেকে ঝাঁপ দেয় এক যুবক । তাকে দ্রুত আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় । পরে জানা যায়, মৃত যুবক হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী । তারপরই বিষয়টির গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা । আর তাতে হতবাক প্রশাসন । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পাইকপাড়ার বিলাসবহুল আবাসন ক্যাভেন্টারের চার তলার ফ্ল্যাটে মালদা জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পায়েল খাতুনের । সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন তাঁর স্বামী । আবাসনের রেজিস্টার বলছে, 16 অক্টোবর সন্ধেয় সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি । চলে যান আজমের শরিফ । তার সঙ্গেই ওই কুখ্যাত দুষ্কৃতী এসেছিল বলে সূত্রের খবর । পায়েলের স্বামী মহম্মদ ইয়াসিন আজমের যাওয়ার আগে ফ্ল্যাটে রেখে যান গাড়ির চালক শেখ জাকির, রাধুনি মহম্মদ রাজা এবং আবদুল হোসেন ওরফে সেন্টিয়াকে।
পুলিশের খাতায় দাগি অপরাধী এই সেন্টিয়া । বেশ কয়েকটি মামলায় সে ওয়ান্টেড ছিল । হুগলির চাঁপদানি এলাকায় তোলাবাজ হিসেবে একটা সময় নাম ছিল তার । সেই সূত্র ধরেই সে হুব্বা শ্যামলের সংস্পর্শে আসে । শ্যামলের মৃত্যুর পর সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসে সেন্টিয়া । তোলাবাজি, বেআইনি অস্ত্র মজুত, খুনের চেষ্টা, খুন সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । জানা গেছে শাসকদলের ছত্রছায়াতেই সে বেড়ে উঠছিল হুগলিতে । কিন্তু মালদার তৃণমূল নেত্রীর স্বামীর সঙ্গে তার কী সম্পর্ক তা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয় তদন্তকারীদের কাছে ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল শনিবার দুপুরে । সেই সময় সোনাগাছি থেকে আনা হয়েছিল দুই যুবতিকে । আকণ্ঠ মদ্যপানের পর রাতে শুরু হয় গন্ডগোল । সেই গন্ডগোলের জেরে রীতিমতো মারপিট হয় ফ্ল্যাটের মধ্যে । সেই মারপিটে এক যৌনকর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় । দু'জনকেই ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গন্ডগোলের খবর পাওয়ার পর নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমেই নেমে আসতে দেখেছিলেন দুই যুবককে। তাঁরা হলেন মহম্মদ রাজা এবং কলকাতা পুলিশের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নের ইজাজ আহমেদ । ইজাজ ওই দিন দুপুর থেকেই অন্য তিনজনের সঙ্গে ফ্লাটে ছিল। কিছুক্ষণ পর আবাসনের বাসিন্দারা দেখতে পান, দুই যুবতি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসছেন । তাঁদের একজনের মাথায় গভীর ক্ষতচিহ্ন। কিছুক্ষণ পরই নিরাপত্তারক্ষীরা ফ্ল্যাটের নিচে সেন্টিয়াকে পড়ে থাকতে দেখেন । প্রাথমিক চিকিৎসার পর গতকাল পুরো ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন এক যৌনকর্মী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে আজ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইজাজ, রাজা এবং জাকিরকে। তদন্তের প্রয়োজনে পায়েল খাতুন এবং তাঁর স্বামী তথা মালদার তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইয়াসিনকেও ডাকা হতে পারে বলে খবর।