আসানসোল, 25 জুলাই : বিশ্বজুড়ে বাড়ছে জল সংকট । সেজন্য প্রয়োজন জল সংরক্ষণের । দীর্ঘদিন ধরেই এই তত্ত্বটাই মানুষকে নানাভাবে বুঝিয়ে আসছেন আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক অভিজিৎ দেবনাথ । কখনও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে শহরের রাস্তায় ঘুরেছেন, কখনও জল নষ্ট হতে দেখে ট্যাপ লাগিয়েছেন টাইম কলের মুখে । একটাই আর্জি, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করুন ৷ এতদিন তাঁর কথায় কেউ কান দেয়নি ৷ কিন্তু "স্যারে"র কথা শুনেছেন গ্রামের দরিদ্র, দিনমজুর মানুষজন । আর তাই বস্তির টালির ছাদে বৃষ্টির জলকে ধরে রাখার প্রকল্প গড়ে উঠল গ্রামেই । বেসরকারিভাবে আসানসোলে প্রথম তৈরি হল বৃষ্টিবাড়ি ।
শিক্ষকের পরামর্শে বস্তিতে বৃষ্টিবাড়ি
আসানসোল উত্তর বিধানসভার অন্তর্গত পলাশডিহা গ্রাম । এই গ্রামে বেশিরভাগই দিনমজুর । ফলে পৌরনিগমের টাইম কল থাকলেও গ্রামবাসীরা সেই জল সংগ্রহ করার সময় পায় না । কারণ যে সময় টাইম কলে জল আসে সেই সময় গ্রামের পুরুষ-মহিলারা সবাই কাজে চলে যায় ৷ ফলে পানীয় জলটুকু কোনও মতে সংগ্রহ করতে পারত ৷
ওই অঞ্চলেই শিশুদের প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু । তাঁর কাছেই এলাকায় জলের সমস্যার কথা শুনেছিলেন অভিজিৎবাবু । এরপর থেকেই বৃষ্টির জলকে ধরে রাখা ও দৈনন্দিন জীবনে সেই জল ব্যবহারের কথা গ্রামবাসীদের বোঝাতে শুরু করেন তিনি ৷ গ্রামবাসীরাও তাঁর কথায় রাজি হয়ে যায় ৷ শুরু হয় জল সংরক্ষণের কাজ, তৈরি হয় বৃষ্টিবাড়ি ৷ এখন বৃষ্টি হলেই ভরে ওঠে জল সংরক্ষণের জন্য রাখা পাত্রগুলি ৷ এই জল নিত্যদিনের নানা কাজে ব্যবহার করতে পারছে গ্রামবাসীরা ৷
শিক্ষকের পরামর্শে বস্তিতে বৃষ্টিবাড়ি অভিজিৎবাবু জানান, "এটা আমরা একটা পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শুরু করেছি । নাম দিয়েছিলাম Economic Rain Water Harvesting ৷ অর্থাৎ অল্প খরচায় কী ভবে জল সংরক্ষণ করা যায় ৷ 200 টাকা থেকে শুরু করে 10 লাখ টাকা পর্যন্ত আপনি যেমন খরচ করতে চান তেমন ভাবেই এই প্রকল্প তৈরি করা যাবে । নির্ভর করছে জায়গা ও চাহিদার উপর ৷ গ্রামে এই প্রকল্প করার পর শহরবাসীরাও এবার উৎসাহিত হবে বলেই মনে করছি আমি ।"
জল সংরক্ষণের ফলে উপকৃত হয় এলাকাবাসীরা ৷ স্থানীয় বাসিন্দা সনকা ভুঁইঞা বলেন, "আমরা যে সময় কাজ করতে যাই, সেই সময় কলে জল এলে নিতে পারতাম না । এখন এই প্রকল্প হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধে হয়েছে ।"