পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / business

ঋণ সংগ্রহে শম্বুক গতি

মুদ্রা (মাইক্রো ইউনিটস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফাইনারি এজেন্সি ব্যাঙ্ক) প্রকল্পের মাধ্যমে দেয় ঋণের বহু পরিমাণ অনাদায়ী থাকা নিয়ে সতর্ক করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর M K জৈন । ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় বদল আনার বিষয়টি ফের একবার সামনে এসে পড়েছে ।

Snail pace in collecting loans
প্রতীকী ছবি

By

Published : Dec 9, 2019, 11:41 PM IST

সমস্যায় মুদ্রা প্রকল্প

2015 সালে চালু হওয়া মোদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা (PMMY) লক্ষ্যপূরণে সমর্থ হলেও বিপুল পরিমাণে অনুৎপাদক সম্পদ (NPA) বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ব্যাঙ্কিং শিল্প । মুদ্রা (মাইক্রো ইউনিটস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফাইনারি এজেন্সি ব্যাঙ্ক) প্রকল্পের মাধ্যমে দেয় ঋণের বহু পরিমাণ অনাদায়ী থাকা নিয়ে সতর্ক করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর M K জৈন । ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় বদল আনার বিষয়টি ফের একবার সামনে এসে পড়েছে ।

জৈনের মতে, ঋণ দেওয়ার আগে ঋণ গ্রহণকারীর তা শোধ করার ক্ষমতার বিষয়ে ভাল করে খবর নিতে হবে । ঋণ নিয়ে তা না ফেরত দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে পূর্বতন গভর্নরদের মতো তিনিও নিজের চিন্তার কথা ব্যক্ত করেছেন । ছোট এবং মাঝারি মানের ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়লে তা যে সমগ্র ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে চাপে ফেলতে পারে, সে বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন । এর ফলে সরকার এবং ব্যাঙ্কিং শিল্পের মধ্যে বিতর্কের তৈরি হয় । মুদ্রা প্রকল্পে কোনও রকম পূর্ব প্রতিশ্রুতি ছাড়া MSME গুলিকে সর্বোচ্চ 10 লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যায় । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত সাড়ে চার বছরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে 21 কোটি সুবিধাভোগী 10 লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ।

এর ফলে দেশের কোটি কোটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন ৷ এবং তাঁদের ব্যবসাও বাড়াতে পেরেছেন । কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হল অনাদায়ী ঋণ । এই ঋণের পরিমাণ 2016-17 অর্থবর্ষে ছিল 5067 কোটি, 2017-18 অর্থবর্ষে 7277 কোটি এবং 2018-19 অর্থবর্ষে 16 হাজার 481 কোটি । চ‌লতি অর্থবর্ষে এই পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে ।

মুদ্রা ঋণের তালিকা

নোট বাতিলে বড় ধাক্কা খাওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আরও বড় ধাক্কা খান 2017 সালে পণ্য পরিষেবা কর (GST) চালু হওয়ার পর থেকে । এর ফলে কোটি কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন । এর ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ । বহু ব্যবসায়ী, যাঁরা শিশু প্রকল্পে 50 হাজার টাকা বা তার কম ঋণ নিয়েছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাজারের যুদ্ধে টিকে থাকতে ব্যর্থ হন । প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে বহু সংখ্যক বেকারি, টিফিন সে‌ন্টার, চায়ের দোকান বা ছোট বস্ত্র বিপণী বন্ধ হয়ে যায় । ছোট কারখা‌নার মালিকরা বহু বাধা অতিক্রম করে ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করলেও চিন, ভিয়েতনাম বা দক্ষিণ কোরিয়ার কম দামী পণ্যের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্রমেই পিছিয়ে যেতে থাকেন । আইনি পদ্ধতিতে এই সব দেশের পণ্য দেশের বাজারে এলে তাতে সরকারি কর বসে । কিন্তু এই সব মাঝারি দেশি ব্যবসায়ীদের সমস্যা হল, এই সব দেশ থেকে আসা বেআইনি পণ্য । পাশাপাশি, লক্ষ্য পূরণ করার তাগিদে অনেক ব্যাঙ্ক ভাল করে খতিয়ে না দেখে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয় ।

এখনই যা করণীয়

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-সহ অন্য সব ব্যাঙ্কগুলিকে দেখতে হবে, যেন কোনও ভাবেই অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ না বাড়ে । এর জন্য এবং অবশ্যই ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া ভাল করে খতিয়ে দেখতে হবে । S K সিনহা কমিটির সুপারিশ কার্যকর করে মাইক্রো, ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ 10 লাখ থেকে বাড়িয়ে 20 লাখ টাকা করতে হবে । এদের ঋণ দিতে হবে শিশু, কিশোর ও তরুণ প্রকল্পের মাধ্যমে ।

অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মাইক্রো ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া একেবারে বন্ধ করতে পারবে না । কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উচিত, ঋণ দেওয়ার সমগ্র প্রক্রিয়া আরও একবার খতিয়ে দেখা এবং ঋণ ফেরত নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে আরও একটু স্বাধীনতা দেওয়া যাতে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ আর না বাড়তে পারে । ব্যাঙ্ক সংযুক্তির ফলে অনাদায়ী ঋণ পুনরুদ্ধারে এমনিতেই বেগ পেতে হচ্ছে ব্যাঙ্কগুলিকে । ঋণ আদায়ে তাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেই হবে, না হলে এই সব MSME গুলিকে দেওয়া ঋণ ভবিষ্যতের অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হবে । আর্থিক মন্দার মতো পরিস্থিতিতে ঋণ সংগ্রহে ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের স্ট্র্যাটেজিতে বদল আনতে হবে । ঋণের কিস্তির টাকা নিয়ে সামান্য সমস্যা তৈরি হলেই ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সেগুলি ভবিষ্যতের বড় সমস্যা না হতে পারে । গত জানুয়ারিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক MSME গুলির জন্য সিঙ্গল টাইম লোন রিএসট্যাবলিশমেন্ট প্রকল্প চালু করেছে । ব্যাঙ্কগুলিকেও এই প্রকল্প চালু করে দিতে হবে । MSMEগুলিকে বাঁচাতে সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে । কারণ দেশের অর্থনীতিতে এই MSMEগুলির ভূমিকা অপরিসীম ।

বড়সড় লক্ষ্য না দিয়ে সরকারে উচিত মুদ্রা ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে আরও স্বাধীনতা দেওয়া । দেশের 5 কোটি 77 লাখ MSME-তে কাজ করেন 12 কোটি মানুষ । খেয়াল রাখতে হবে যেন এই MSMEগুলি ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারে । এর ফলে লাভবান হবে ভারতীয় অর্থনীতিই ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অবহেলা

মুদ্রা ঋণ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মনোভাবের জন্য প্রতি বছর যেখানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে সেখানে অন্য ব্যাঙ্ক, PBS এবং অন্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি ঋণ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছে । রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির তুলনায় এবং অনাদায়ী ঋণের পরিমাণও অনেকটাই কম । অর্থনীতির মন্দার মতো পরিস্থিতির কারণে MSMEগুলির ব্যবসায় প্রভাব পড়ায় মুদ্রা ঋণে সমস্যা দেখা দিয়েছে । এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি ঋণ পরিশোধ না করার মানসিকতা । এই বিষয়গুলি কিন্তু যথেষ্টই আশঙ্কার ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details