সমস্যায় মুদ্রা প্রকল্প
2015 সালে চালু হওয়া মোদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা (PMMY) লক্ষ্যপূরণে সমর্থ হলেও বিপুল পরিমাণে অনুৎপাদক সম্পদ (NPA) বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ব্যাঙ্কিং শিল্প । মুদ্রা (মাইক্রো ইউনিটস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফাইনারি এজেন্সি ব্যাঙ্ক) প্রকল্পের মাধ্যমে দেয় ঋণের বহু পরিমাণ অনাদায়ী থাকা নিয়ে সতর্ক করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর M K জৈন । ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় বদল আনার বিষয়টি ফের একবার সামনে এসে পড়েছে ।
জৈনের মতে, ঋণ দেওয়ার আগে ঋণ গ্রহণকারীর তা শোধ করার ক্ষমতার বিষয়ে ভাল করে খবর নিতে হবে । ঋণ নিয়ে তা না ফেরত দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে পূর্বতন গভর্নরদের মতো তিনিও নিজের চিন্তার কথা ব্যক্ত করেছেন । ছোট এবং মাঝারি মানের ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়লে তা যে সমগ্র ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে চাপে ফেলতে পারে, সে বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন । এর ফলে সরকার এবং ব্যাঙ্কিং শিল্পের মধ্যে বিতর্কের তৈরি হয় । মুদ্রা প্রকল্পে কোনও রকম পূর্ব প্রতিশ্রুতি ছাড়া MSME গুলিকে সর্বোচ্চ 10 লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যায় । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত সাড়ে চার বছরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে 21 কোটি সুবিধাভোগী 10 লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ।
এর ফলে দেশের কোটি কোটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন ৷ এবং তাঁদের ব্যবসাও বাড়াতে পেরেছেন । কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হল অনাদায়ী ঋণ । এই ঋণের পরিমাণ 2016-17 অর্থবর্ষে ছিল 5067 কোটি, 2017-18 অর্থবর্ষে 7277 কোটি এবং 2018-19 অর্থবর্ষে 16 হাজার 481 কোটি । চলতি অর্থবর্ষে এই পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
মুদ্রা ঋণের তালিকা
নোট বাতিলে বড় ধাক্কা খাওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আরও বড় ধাক্কা খান 2017 সালে পণ্য পরিষেবা কর (GST) চালু হওয়ার পর থেকে । এর ফলে কোটি কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন । এর ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ । বহু ব্যবসায়ী, যাঁরা শিশু প্রকল্পে 50 হাজার টাকা বা তার কম ঋণ নিয়েছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাজারের যুদ্ধে টিকে থাকতে ব্যর্থ হন । প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে বহু সংখ্যক বেকারি, টিফিন সেন্টার, চায়ের দোকান বা ছোট বস্ত্র বিপণী বন্ধ হয়ে যায় । ছোট কারখানার মালিকরা বহু বাধা অতিক্রম করে ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করলেও চিন, ভিয়েতনাম বা দক্ষিণ কোরিয়ার কম দামী পণ্যের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্রমেই পিছিয়ে যেতে থাকেন । আইনি পদ্ধতিতে এই সব দেশের পণ্য দেশের বাজারে এলে তাতে সরকারি কর বসে । কিন্তু এই সব মাঝারি দেশি ব্যবসায়ীদের সমস্যা হল, এই সব দেশ থেকে আসা বেআইনি পণ্য । পাশাপাশি, লক্ষ্য পূরণ করার তাগিদে অনেক ব্যাঙ্ক ভাল করে খতিয়ে না দেখে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয় ।