সরাসরি নগদ পাঠানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ
কোভিড বিশ্বের অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে । মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে দীর্ঘ সময়ের জন্য লকডাউন জারি করা হয়েছিল । এর ফলে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি । কয়েক মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছেন । রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছে । তার ফলে 2020-21 আর্থিক বছরে উন্নতির হার নেতিবাচক হয়েছে । রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সর্বশেষ যে হিসেব কষেছে, তাতে এই হার গিয়ে দাঁড়াবে (-) 7.5 শতাংশে । এই পরিস্থিতিতে আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অর্থনৈতিক উদ্দীপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল । অর্থনীতিকে আবার অগ্রগতির রাস্তায় ফেরাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল । এখনও পর্যন্ত উদ্দীপক ব্যবস্থা সংক্রান্ত যা ঘোষণা করা হয়েছে, তার মূল্য 29 লাখ 87 হাজার 647 কোটি টাকা । এটা জিডিপি-র 15 শতাংশ । এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অংশীদারিত্ব 9 শতাংশ । বাকিটা বিভিন্ন আকারে ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক । অর্থনৈতিক ভাবে যাঁরা দুর্বল, তাঁদের জন্যই প্রথম প্যাকেজ ঘোষণা করা হয় । বিশেষ করে ছোটো ব্যবসার জন্য "ক্রেডিট গ্যারান্টি"-র আকারে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করা হয় । দ্বিতীয় প্যাকেজের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয়েছিল যাতে বেসরকারি খরচ বৃদ্ধি করা যায় । অর্থনীতিতে সরাবরাহ ব্যবস্থার উপরই প্রধান নজর দেওয়া হয়েছে । গত কয়েক বছর ধরে গ্রাহকদের চাহিদা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । এটা কিছু সময় ধরে ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে । বেসরকারি দিক থেকে গ্রাহকদের খরচের বৃদ্ধির হার 3.1 শতাংশে নেমে এসেছে । যা আঠারো-চতুর্থাংশে সর্বনিম্ন । এটা জিডিপিতে সাত-চতুর্থাংশে 57.7 শতাংশের নিচে । অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করার জন্য এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে সরবরাহকারী উপাদানগুলির চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি করে এমন উপাদানগুলি গুরুত্বপূর্ণ । এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সরকার তৃতীয় উদ্দীপক ব্যবস্থায় অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার ব্যবস্থার নীতি তৈরিতেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে । এটাতে অনেক ক্ষেত্রের উপরই নজর দেওয়া হয়েছে । তার মধ্যে রয়েছে– শ্রম বাজার, চাপে থাকা ক্ষেত্র, সামাজিক কল্যাণ, উৎপাদন, আবাসন, পরিকাঠামো, রফতানি ও কৃষি ক্ষেত্র । চাহিদার ক্ষেত্রকে বৃদ্ধি করার দিকেই মূল নজর দেওয়া হয়েছে । আর এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আবাসন ক্ষেত্রকে ।
আরও পড়ুন : গ্রামীণ চাহিদা : এটা কি অর্থনীতিকে বাঁচাবে ?
চাহিদার স্থবিরতা
চাহিদা তৈরি করছে শুধুমাত্র 10 কোটি মানুষ । তাঁরা সমাজের ও অর্থনীতির কাঠামোর (পিরামিড) উপরের দিকে বসবাস করেন । কিছু পণ্য ও পরিষেবার মাধ্যমে তাঁরা এই চাহিদা তৈরি করছেন । এটাই এখনও পর্যন্ত দেশের উন্নতিতে প্রভাব ফেলছে । তাঁদের চাহিদাও থেমে গিয়েছিল, কারণ তাঁদের প্রয়োজন মিটে গিয়েছিল । এই কারণেই গাড়ি ও বাড়ি-সহ পণ্যের চাহিদা দেশে এখন অনেকটাই কম । ঠিক এই মুহূর্তে কোভিডের রূপে একটি বিপর্যয় দেশের অর্থনীতির চারদিকে ঘিরে রেখেছে এবং অবিরাম ক্ষতি সাধন করছে । এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার আবাসন ক্ষেত্রকে অর্থনীতির হাল ফেরানোর উদ্দীপক হিসেবে বেছে নিয়েছে ।
4 লাখ 50 হাজার বাড়ি, যা নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, তা বিক্রি হয়নি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত । আর এটা 7 টি গুরুত্বপূর্ণ শহরের হিসেব । এই ইউনিটগুলিতে নির্মাণকারীদের অন্তত 3.7 লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে রয়েছে । নির্মাণকারীরা যে বাড়ির ক্রেতাদের অতিরিক্ত কর ছাড়াই সাধ্যের মধ্যে দামে আবাসন দিতে পারছেন, তা সম্ভব হচ্ছে এই ইনসেনটিভের জন্য । এর ফলে তাঁরা চাহিদা ছাড়াই তাঁদের বাড়ি বিক্রি করতে পারছেন না । যে নির্মাণকাজগুলি অর্ধেক সমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে, সেগুলিতে যদি সাহায্য করা হয়, তাহলে শহরের নির্মাণে কাজে আবার ফেরার আকর্ষণ অনুভব করতে পারবেন শ্রমিকরা । এই শ্রমিকরাই কোরোনা সংকটের সময় শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । এটা আবাসান শিল্পের জন্য ভালো হবে । এটা অন্য অনেক ক্ষেত্রতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে ।
আরও পড়ুন : ভারতীয় অর্থনীতির উপর কোরোনার প্রভাব
আর্থিক ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ অপ্রয়োজনীয়
আইএমএফ-এর হিসেব অনুযায়ী ভারতের জিভিএ (গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড) সঙ্কুচিত হয়ে 10.3 শতাংশ হয়ে যাবে । ভারতের অর্থনীতি চাহিদার উপর নির্ভরশীল । মানুষের কেনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারলে তবেই অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে । অর্থনৈতিক উদ্দীপকের আসল উদ্দেশ্য হল গ্রাহকের চাহিদা বৃদ্ধি করা । সরকারের খরচ অনেক বেশি দরকার ছিল । যা অর্থনৈতিক উদ্দীপক 1.0 ও 2.0-তে ছিল না । তবে উদ্দীপক 3.0-তে কিছুটা ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হয় । এখন এটির সীমা নির্ধারণ করা কঠিন । সরকারি রাজস্বে ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে ঘাটতির কারণেই হয়তো সরকারের প্রচুর পরিমাণে খরচে অনীহা তৈরি করেছে । কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে যৌথ আর্থিক ঘাটতির ফারাক জিডিপির 8.2 শতাংশ থেকে 13.1 শতাংশ হতে পারে । বাড়তে থাকা আর্থিক ঘাটতির ভয় পেয়ে যদি সরকার খরচে কাটছাঁট করে তাহলে সেই সিদ্ধান্তের জন্য এটা তার সঠিক সময় হবে না । গরিবদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে চাহিদা বৃদ্ধি হতে পারে । যে সমস্ত ক্ষেত্রগুলিতে অনেক বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়, সেই ক্ষেত্রগুলিতে সরকারের খরচ বৃদ্ধি করতে হবে । একই সঙ্গে উৎপাদনশীল সরঞ্জাম ব্যবহার করে যে পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রজেক্ট রয়েছে, সেগুলিতেও সরকারি খরচ বৃদ্ধি করতে হবে । প্রোডাক্ট লিঙ্কড ইনসেটিভ ( পিএলআই ) ঘোষণা করা হয়েছে 10টি সেক্টরের জন্য । সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী, যাঁরা 15 হাজার টাকার কম মাসে রোজগার করেন, তাঁদের জন্য একমাত্র চাকরিতে ভর্তুকির যোজনা শুরু হয় । প্রতিদিনের কাজের সময় সূচি ছাড়াও এটি কেবল উৎপাদনশীল কাজ এবং সম্পদ তৈরির সঙ্গে যুক্ত করা উচিত । এর ফলে কৃষিক্ষেত্রের মজুরিতে অনেকটাই চাপ কমিয়েছে কর্ম সুনিশ্চিতকরণ যোজনা । গ্রামে গ্রাহকদের চাহিদার ভারসাম্য তৈরি করতে এটা অবদান রেখেছে । এর সঙ্গে যদি প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনা এবং গ্রামীণ পরিকাঠামো তৈরি দ্রুতগতিতে হতে থাকে, তাহলে "রোজগারের পিরামড"-এ যাঁরা একেবারে নিচের দিকে অবস্থান করেন, তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাবে ।
আবাসন ক্ষেত্রে সাহায্য
কৃষিক্ষেত্রের পর আবাসন শিল্পই দেশে কর্মসংস্থান তৈরিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে । এই ক্ষেত্রে 2022 সালের মধ্যে 70 লাখ কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে । আর 2025 সালের মধ্যে তা জিডিপির 13 শতাংশ হবে । সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী আবাসন যোজনার অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার বাড়ির ক্রেতা ও বিক্রিতাদের জন্য বাজেটে 18 হাজার কোটি টাকার সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে । 2020 সালের বাজেটে যা ঘোষণা করা হয়েছিল, এটা তার সঙ্গে আরও 8 হাজার কোটি টাকা যুক্ত করে তৈরি হয় । কেন্দ্র পারফরম্যান্স সিকিউরিটি ডিপোজিটের পরিমাণ 5 থেকে কমিয়ে 3 শতাংশ করে দিয়েছে । এছাড়া বাড়ি কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে আয়কর নিয়ম শিথিল করা হয়েছে এবং করে ইনসেনটিভ ঘোষণা করা হয়েছে ।