বহির্বিশ্বের পরিস্থিতি এবং রাজকোষের আরও খারাপ অবস্থার জন্য অস্পষ্টতায় ঘেরা আর্থিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা
28 ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শেষ ত্রৈমাসিকে GDP বৃদ্ধির হার 4.7 শতাংশ । এটা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় জল ঢেলে দিয়েছে ৷ যদিও যে সংখ্যাটা ভাবা হয়েছিল, হুবহু সেটাই সামনে এসেছে । মন্দার পরিস্থিতি চলছেই ৷ কারণ গত দুটো ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার সংশোধিত হয়েছিল – GDP-র প্রত্যাশিত বৃদ্ধির হার এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে 5.1 শতাংশ থেকে 5.6 শতাংশ এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে 4.5 শতাংশ থেকে 5 শতাংশ হয়েছে । এটা একটা ধাঁধা যে গতবছরের জাতীয় আয়ের নিম্নমুখী মূল্যায়ন দিয়ে এই বছরের GDP বৃদ্ধি মাপা যাবে । 2019-20 সালে বার্ষিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস 5 শতাংশ । এটায় বোঝা যাচ্ছে যে জানুয়ারি থেকে মার্চ বৃদ্ধির হার 4.7 শতাংশই থাকবে । সম্ভবত বৃদ্ধির পূর্বাভাস পরে আবারও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে ।
শেষ ত্রৈমাসিকের পারফরম্যান্স জুলাই-সেপ্টেম্বরের থেকেও খারাপ । বেনজিরভাবে খারাপ এই ত্রৈমাসিকে দেখা গেছে ব্যবসা জগতের মনোভাব এবং ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাসের অবনমন ৷ গাড়ি বিক্রিতে জোরালো ধাক্কা ৷ কর্পোরেট পারফরম্যান্সে ধাক্কা এবং অন্যান্য বিষয়, যেগুলো ধাঁধায় ফেলে । সংশোধিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, 2019-20 অর্থবর্ষে গ্রাহকদের চাহিদা আরও বেড়েছে । শেষ ত্রৈমাসিকে গ্রাহকদের খরচ করার প্রবণতা ছিল 5.9 শতাংশ । তার আগে দুটো ত্রৈমাসিকে এই প্রবণতা বেড়ে যথাক্রমে 5.6 শতাংশ এবং 5 শতাংশে পৌঁছেছিল ।
বৃদ্ধির বিভিন্ন উপাদানের বদলাতে থাকা গতিশীলতা ক্রমাগত হতাশ করছে । এর সবথেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিষয় হল, সরকারের খরচ 12 শতাংশ না বাড়লে, GDP 3.5 শতাংশে গিয়ে ঠেকত । আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গে সরকারি খরচের এই সম্পর্ক গোটা অর্থবর্ষ ধরে চোখে পড়েছে । সরকারের দুর্বল আর্থিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এটা স্পষ্টতই কাম্য নয় । পাশাপাশি এটা স্বাধীনভাবে বৃদ্ধির ঘাটতিকেই প্রকট করে তুলছে । চাহিদা-ভিত্তিক উপকরণগুলোর ধাক্কা খাওয়ার মধ্যেই এটা চোখে পড়ছে – পর পর দুটো অর্থবর্ষে উৎপাদনশিল্পে সংকোচনের ইঙ্গিত দিয়ে একদিকে আমদানি ও অন্যদিকে বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে । আসলে, কৃষি এবং প্রশাসন বাদ দিলে, প্রায় সমস্ত সরবরাহ-ভিত্তিক উপকরণে মন্দার চিহ্ন চোখে পড়েছে । এখানে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য নির্মাণশিল্পে চমকে দেওয়ার মতো পতন । চলতি আর্থিক বছরে এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রত্যেক ত্রৈমাসিকে 2.6 পার্সেন্টেজ পয়েন্ট পড়েছে ।
গত কয়েক বছরে যা দেখা গেছে, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা সব সময়েই সেই সময়ের বা তার পরের ত্রৈমাসিকের উপর ভর করে থাকে । যদিও, বহু বিশ্লেষকই অ-কৃষি এবং অ-সরকারি ক্ষেত্রে GDP-র বৃদ্ধি খুঁজে পেতে মন দিয়েছেন, যাতে গত ডিসেম্বরের ত্রৈমাসিক থেকে অবস্থা পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলে । এটা সত্যি, কিন্তু বলা শক্ত যে এই পরিস্থিতি আগামী মাসগুলোতে থাকবে এবং শক্তি সঞ্চয় করবে, নাকি ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে চালিত হবে । চিহ্নগুলো অস্পষ্ট এবং আশাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় । আশার কথা যেটা, জানুয়ারির শিল্পোৎপাদনের তথ্য এখনও জানা গেলেও, মূল শিল্পগুলো চলতি মাসে উৎপাদনে 2.2 শতাংশ বৃদ্ধি ঘটিয়েছে; এটা অগাস্ট-নভেম্বর 2019-র পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত । তারপর, গত বছরের তুলনায় এই ফেব্রুয়ারিতে GST-র সংগ্রহ 8.03 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে (টাকার অঙ্কে 1.05 ট্রিলিয়ন) ।