আসানসোল, 19 এপ্রিল : 24 ঘণ্টা কেটে গেছে। এখনও খোঁজ মেলেনি নদিয়ার নোডাল অফিসার অর্ণব রায়ের । প্রতিটি মুহূর্ত উৎকন্ঠায় কাটাচ্ছেন তাঁর মা-বাবা । এর আগেও, বাড়িতে না জানিয়ে দক্ষিণেশ্বর চলে গিয়েছিলেন অর্ণব । পরদিন সকালে অবশ্য ফোন এসেছিল । আর সেরকম একটি ফোনের আশায় রয়েছেন অর্ণবের মা ও বাবা । ফোন বেজে উঠলেই ভাবছেন, এই বুঝি অর্ণবের ফোন এল।
অর্ণবের আসল বাড়ি আসানসোল । সেখানের ডলি লজ সংলগ্ন এলাকায় একটি বহুতল আবাসনে থাকেন অর্ণবের বাবা-মা । সেখানেই রামকৃষ্ণ মিশন ও বিধানচন্দ্র কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছিলেন অর্ণব। সাত বছর আগে চাকরি পেয়েছিলেন। প্রথমে জয়েন্ট BDO, তারপর BDO ছিলেন। এখন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মসূত্রে নদিয়াতেই থাকতেন । লোকসভা নির্বাচনে অর্ণবকে EVM ও VVPAT-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গতকাল জেলাশাসকের দপ্তরে তিনি কাজ করছিলেন । দুপুর দুটোর পর জেলাশাসক দপ্তর থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে কৃষ্ণনগর BPCIT কলেজের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন । গাড়িচালক সহ অন্যরা ফিরে এলেও অর্ণবের খোঁজ পাওয়া যায়নি । বারবার চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ সময় তাঁর মোবাইল সুইচড অফ ছিল ।
গতকাল অবশ্য নিখোঁজের খবর জানতেন না অর্ণবের বাবা ও মা। অর্ণবের মা সুলেখা রায় বলেন, "গতকাল বিকেলে বউমা ফোন করে বলেছিল, ছেলে এখানে আসতে পারে। তো ভেবেছিলাম, রাত 9-10 টা নাগাদ আসবে। কিন্তু, তারপরও আসেনি। বারবার চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ ছিল। তারপর আজ সকালে সংবাদমাধ্যম থেকে ছেলের নিখোঁজের খবর জানতে পারি।" সেই খবর শোনার পর থেকেই TV থেকে চোখ সরাননি অর্ণবের বাবা-মা। প্রতিটা সেকেন্ড যেন তাঁদের কাছে এক বছরের সামিল হয়ে গেছে। প্রতিবেশী, আত্মীয়রাও ভিড় জমিয়েছেন তাঁদের বাড়িতে। প্রত্যেকেরই উৎকণ্ঠা কী হল অর্ণবের ।
অর্ণবের বাবা হারাধন রায় জানান, মাসদুয়েক আগে বাড়িতে এসেছিলেন অর্ণব। তারপর থেকে ফোনেই কথা হত। পয়লা বৈশাখের ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে নিজেই ছেলেকে ফোন করেন। আর দু'দিন আগে অর্ণবের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তাঁর মা। তারপর থেকে ছেলের সঙ্গে তাঁর আর কথা হয়নি। তার মধ্যেই ছেলের নিখোঁজের খবরে প্রবল উৎকন্ঠায় রয়েছেন তিনি।
কিন্তু, ছেলের কি কোনও মানসিক চাপ ছিল? সে প্রসঙ্গে অর্ণবের মা বলেন, "ভোটের আগে কাজের চাপ থাকবে, সেটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু, মানসিক কোনও চাপ ছিল না। আমার ছেলে শান্তশিষ্ট ও চাপা স্বভাবের। খুব বেশি কথা কারও সঙ্গে ভাগ করে নিত না । " তাঁদের একটাই আর্জি, "একমাত্র ছেলে যেন সুস্থভাবে ফিরে আসে । এর বেশি কিছু বলতে পারব না ।" কথাটা শেষ করার আগেই কেঁদে ফেলেন অর্ণবের মা ।