মালদা, 9 জুলাই : জল বাড়ছে মহানন্দার৷ ইতিমধ্যেই চাঁচলের গালিমপুরে নদীর জল রাস্তার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে৷ ভেসে গিয়েছে ওই এলাকার প্রায় 400 বিঘা জমির ফসল৷ স্থানীয়দের মনে উঁকি দিচ্ছে 2017 সালের ভয়ঙ্কর স্মৃতি৷ পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেচ দপ্তর৷ বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে প্রশাসনও৷ আজ মহানন্দা 20.87 মিটার উচ্চতায় বইছে ৷ আর 13 সেন্টিমিটার জল বাড়লেই জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলবে৷
উত্তরবঙ্গে চলছে লাগাতার বৃষ্টি ৷ যার জেরে গত কয়েকদিন ধরেই মহানন্দার জলস্তর বাড়ছে৷ দু’দিন আগে পুরাতন মালদা পৌর এলাকার নদী তীরবর্তী অনেক বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল৷ সেখান থেকে দুর্গতদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি এলাকা নদীর জলের নীচে চলে গিয়েছে৷ গালিমপুর সংলগ্ন শ্রীপতিপুরে রাস্তার উপর দিয়ে বইছে মহানন্দার জল৷ ইতিমধ্যেই গবাদি পশুদের অন্যত্র সরাতে শুরু করেছে গ্রামবাসীরা৷ আতঙ্কে দিন কাটছে গালিমপুর, শ্রীপতিপুর, উত্তরপাড়া, পূর্বপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের৷ নদীর জলস্তর তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে 2017 সালের ভয়ঙ্কর বন্যার কথা৷ সেবারও এভাবেই জল বেড়েছিল৷ ভেসে গিয়েছিল প্রায় গোটা জেলা৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কৃষকরা৷
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তাফা বলেন, “নদীর জল দেখে 20170 সালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে৷ এলাকার কৃষকরা আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাচ্ছে৷ এই এলাকার বেশিরভাগ কৃষক সবজি চাষ করে৷ তাদের সবজির খেতে জল ঢুকে পড়েছে৷ জল জমিতে আটকে থাকায় সবজি নষ্ট হবেই। অনেকেই ঋণ নিয়ে চাষ করেছিল৷ কীভাবে ঋণ শোধ করবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে তারা৷ দ্রুত জমি থেকে জল না বেরোলে এই চাষিদের অনেকে আত্মহত্যা করবে৷ জল যেভাবে বাড়ছে, তাতে আর দু’একদিনের মধ্যে ঘরে জল ঢুকে পড়বে৷ কিন্তু প্রশাসন এখনও পর্যন্ত আমাদের সাহায্য করেনি৷”
এলাকার আরও এক বাসিন্দা হারুন আল রশিদ বলেন, “গত কয়েকদিন জেলায় তেমন বৃষ্টি হয়নি৷ তবুও নদীতে জল যেভাবে বেড়েছে তাতে মানুষ আতঙ্কিত৷ নদীর জল খেতে ঢুকে পড়েছে৷ সবজি খেত জলের নীচে৷ এতে চাষিরা ভীষণ আতঙ্কে রয়েছে৷ আবহাওয়া বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, আগামী কয়েকদিন জেলায় বৃষ্টি বাড়বে৷ সেক্ষেত্রে চাষিদের সমস্যাও আরও বাড়বে৷ এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি৷ আশা করা যায়, দ্রুত সেই সাহায্য পাওয়া যাবে৷”
এই বিষয়ে মালদা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল হোসেন বলেন, “কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিতে নদীর জল বাড়ছে ৷ এই ব্লকের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকে পড়েছে৷ জমিতে জল দাঁড়িয়ে গেলে সব ফসলই নষ্ট হয়ে যাবে৷ রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য বিমার ব্যবস্থা করেছে৷ কোনও কৃষকের সেই বিমা করা থাকলে তিনি নিশ্চিতভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন৷ কোনও কৃষকের জমি জলে ডুবে গেলে আমরা তাঁকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্লক কৃষি দপ্তরে তা জানাতে বলছি৷ আমরা ওই কৃষকদের যথাযথ সাহায্যের চেষ্টা করব৷ এই এলাকায় মাঝেমধ্যেই বন্যা হয়৷ নদীর জলস্তর বেড়ে গ্রামে যাতে জল না ঢুকতে পারে সেই বিষয়টি আমরা প্রশাসনের তরফে দেখছি৷ মহানন্দার বাঁধ মেরামতির কাজও চলছে৷ জমিগুলিকে কীভাবে বাঁচানো যায় সেই চেষ্টা চলছে৷"