পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / briefs

অক্সিজেন মাস্ক ছিঁড়েছিল কুন্তল, মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে জানালেন কাঞ্চনজঙ্ঘা জয়ী - Expedition

প্রায় 350 মিটার পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়াই ছিলেন রুদ্রপ্রসাদ হালদার । তারপর কুন্তল কাঁড়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি ।

রুদ্রপ্রসাদ হালদার

By

Published : May 18, 2019, 7:09 PM IST

Updated : May 18, 2019, 8:04 PM IST

কাঠমান্ডু, 18 মে : কাঞ্চনজঙ্ঘা জয়ের লক্ষ্যে একসঙ্গে চারজন গেছিলেন । দুজন প্রাণে বেঁচে ফিরলেও মৃত্যু হয়েছে কুন্তল কাঁড়া ও বিপ্লব বৈদ্যর । আপাতত কাঠমান্ডুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুদ্রপ্রসাদ হালদার ও রমেশ রায় । সেখান থেকে জানালেন, সামিটের দিন ঠিক কী হয়েছিল ।

রুদ্রপ্রসাদবাবু জানান, 14 মে দুপুর একটা নাগাদ সামিট ক্যাম্পে পৌঁছেছিলেন তাঁরা । একই তাঁবুতে ছিলেন চার পর্বতারোহী । বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ সামিট ক্যাম্প থেকে তাঁরা উপরের দিকে উঠতে থাকেন । রুদ্রপ্রসাদবাবুর কথায়, "রাত 8-9 টা পর্যন্ত আমরা কাছাকাছি ছিলাম । জল খাওয়ার সময় বা বিশ্রাম নেওয়ার সময় মাঝে মধ্যে আলাদা হলেও একসঙ্গেই থাকছিলাম । পরে আমি, রমেশদা ও বিপ্লবদা কাছাকাছি ছিলাম । কুন্তল কোনও এক ফাঁকে আলাদা হয়ে যায় । তবে আমাদের কাছেই ছিল । 15 তারিখ ট্রু সামিটে যাওয়ার সময় রমেশদা নিজের শেরপাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না । তাঁর অক্সিজেনও শেষ হয়ে যায় । আমার জন্য আনা অক্সিজেন দিয়েছিলাম । তারপর সম্ভবত 11টা নাগাদ তিনজনে সামিট করি ।"

সামিট সেরে ফেরার পথে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বিপ্লববাবুর মধ্যে । রুদ্রপ্রসাদবাবু বলেন, "ফেরার সময় ওপেন অবস্থায় রাত কাটানোর কথা বলেন বিপ্লবদা । তখনই মনে সন্দেহ জাগে । বিপ্লবদাকে বোঝাই আমি । তারপর আমরা একসঙ্গে নামছিলাম । তখন আমার অক্সিজেন ফুরিয়ে যায় ।" কিন্তু, মাস্ক অনেকটা নিচে ছিল । ফলে প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত নামতে থাকেন রুদ্রপ্রসাদবাবু । 8 হাজার 586 মিটার থেকে 8 হাজার 200 মিটার পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়াই ছিলেন তিনি । পরে অক্সিজেন নিয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর কুন্তলকে দেখতে পান । রুদ্রপ্রসাদবাবু বলেন, "আমি দেখি, কুন্তল একা বসে রয়েছে । মুখে অক্সিজেন মাস্ক নেই । কুন্তলের শেরপাও সেখানে ছিলেন না । পরে জানতে পারি, কুন্তল অক্সিজেন মাক্স ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে । মানে অনেক আগে থেকেই কুন্তল অলটিটিউড সিকনেসে আক্রান্ত হয়েছিলেন । কুন্তলকে নামানোর চেষ্টা করি । 150 মিটার মতো নামালেও কিছুতেই নামতে চাইছিলেন না কুন্তল । তাও চেষ্টা করতে থাকি । তার জেরে আমার শেরপা বিরক্ত হয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যায় । মানসিকভাবে চাঙ্গা করার জন্য কুন্তলকে চড়-থাপ্পড় মারি । কুন্তলের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, ও চাইলেও ওর শরীর সাহায্য করছিল না ।" তারপরও কুন্তলকে 50 মিটার মতো নিচে নামান রুদ্রপ্রসাদবাবু । তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে । বাধ্য হয়ে SOS করেন তিনি । বিভিন্ন জায়গায় খবর দেন ।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

কুন্তলকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত নিচে নামতে থাকেন তিনি । তখন তাঁদের এজেন্সির শেরপার সঙ্গে দেখা হয় । রুদ্রপ্রসাদবাবুকে তিনি জানান, কুন্তল ও বিপ্লবদাকে নামানো হচ্ছে । কিন্তু, সেই সময় উচ্চতাজনিত কিছু সমস্যা হয় । একজনের সাহায্যে ক্যাম্পে আসেন রুদ্রপ্রসাদবাবু । তিনি বলেন, "ক্যাম্পে আমার শেরপা ছাড়া কেউ ছিলেন না । তখন আমি স্বাভাবিক হয়ে গেছিলাম । আমি রমেশদার বিষয়ে কিছু জানতাম না । তাঁর খোঁজ করতে থাকি । তারপর দুজন শেরপা জানান, রমেশদাকে ক্যাম্পে আসতে দেখেছেন । তখন আমি কিছুটা নিশ্চিত হই ।" পরে রুদ্রপ্রসাদবাবু জানতে পারেন, কুন্তল মারা গেছেন । বিপ্লববাবুর অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে । তাঁকে উদ্ধারের জন্য অক্সিজেন ও গরম জল করে পাঠানো হয় । রুদ্রপ্রসাদবাবু বলেন, "রাত 10টা নাগাদ একজনকে ক্যাম্পে আনা হয় । পায়ে দড়ি বাঁধা দেখে ভেবেছিলাম, তিনি মারা গেছেন । পরে দেখি, জীবিত রয়েছেন । তাঁর চিকিৎসা শুরু হয় । তারপর জানা যায়, কুন্তল ও বিপ্লবদা কাছাকাছি জায়গায় মারা গেছেন । আর শেরপারা রমেশদাকে উদ্ধার করে এনেছেন । " তারপর গতকাল ক্যাম্প 2 থেকে রুদ্রপ্রসাদবাবু ও রমেশবাবুকে হেলিকপ্টারে করে কাঠমান্ডুতে আনা হয় । দুজনেই ফ্রস্ট বাইটে আক্রান্ত । তাঁদের চিকিৎসা চলছে ।

Last Updated : May 18, 2019, 8:04 PM IST

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details