পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / briefs

সাপে কাটার পর দুই ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁক, মৃত ব্যক্তি - বারাসতের খবর

সাপে কামড়ায় মঙ্গলবার রাতে । তারপর থেকে দুই ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হল ব্যক্তিকে । গতরাতেই মৃত্যু হয় তাঁর ।

Barasat news
সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তি

By

Published : Sep 10, 2020, 10:20 PM IST

দেগঙ্গা, 10 সেপ্টেম্বর : সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে গেছিল পরিবার । আর তাতেই মৃত্যু হল সাপে কাটা সেই রোগীর। ফের কুসংস্কারের বলি হলেন বছর পঞ্চান্নের এক ব্যক্তি । মৃতের নাম মদন পাত্র । উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গার ভাসিলিয়া গ্রামের ঘটনা । ঘটনার পর অবশ্য রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করেছে পরিবারের লোকেরা ।

মদন পাত্র । পেশায় দিনমজুর । মঙ্গলবার রাতে বাড়ির বারান্দাতেই শুয়েছিলেন তিনি । পাশে স্ত্রীও ছিলেন । তখনও ঘুমটা ঠিক ঠাক আসেনি মদনবাবুর । আশেপাশে অন্ধকার । হঠাৎ পায়ে তীব্র একটা জ্বালা । বুঝতে পারেন কিছু একটা কামড়েছে । সঙ্গে সঙ্গে উঠে আলো জ্বালান । দেখেন একটি সাপ চলে যাচ্ছে সেখান থেকে । এতক্ষণে পায়ের যন্ত্রণাটা আরও তীব্র হয়েছে মদনবাবুর । কিন্তু পরিবারের লোকেরা তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে অশোক কুমার মণ্ডল নামের স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যান ।

সেখানে শুইয়ে রাখা হয় মদনবাবুকে । চলে ঝাড়ফুঁক । বেশ কিছুক্ষণ ঝাড়ফুঁক চলার পর রোগী সুস্থ হওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । কিন্তু সুস্থ হওয়ার কোনও লক্ষণই দেখা গেল না । বরং ক্রমেই শরীর যেন নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে মদনবাবুর । পরিবারের লোকেরাও বুঝতে পারেন ওঝার ঝাড়ফুঁকে কাজ হয়নি । কিন্তু তারপরেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় না তাঁকে । উলটে, দোগাছিয়া গ্রামের অন্য এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে । শরীরে তখন আর জোর নেই মদনবাবুর । সেই অবস্থাতেই চলে আরও এক দফা ঝাড়ফুঁক । চলে ওঝার কেরামতি । বুধবার বিকেল পর্যন্ত এভাবেই কেটে যায় ।

আরও পড়ুন :রাগের মাথায় সাপকে কামড় ব্যক্তির !

ওঝার ঝাড়ফুঁকে কোনও কিছু না হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় সাপে কাটা ওই রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে । কিন্তু, তাঁর শারীরিক অবস্থা তখন এতটাই খারাপ যে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে । সেখানেই গভীর রাতে মৃত্যু হয় ওই রোগীর ।

এই বিষয়ে মৃতের শ্যালক সুকুমার মণ্ডল বলেন, “রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করা উচিত হয়নি । জানার পরই জামাইবাবুকে নিয়ে যায় হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

মৃতের স্ত্রী সরস্বতী পাত্র বলেন, “এখন বুঝতে পারছি কি ভুল করেছি স্বামীকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ।পরিবর্তে হাসপাতালে যদি সঠিক সময়ে নিয়ে যেতাম তাহলে স্বামীকে বাঁচান যেত।”

আরও পড়ুন :পানীয় জলের ট্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে এল জ্যান্ত সাপ, আতঙ্ক এলাকায়

এদিকে,সাপে কাটা ওই রোগীর মৃত্যুর খবর শুনে ওঝা অশোক কুমার মণ্ডল বলেন, “বংশানুক্রমে এই কাজ আমরা দীর্ঘদিন ধরে করে চলেছি ।” আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন তিনি । অন্যদিকে, এই বিষয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, “কুসংস্কার একটা সামাজিক ব্যাধি । প্রচার করা সত্বেও এই নিয়ে কিছু মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতা ফেরেনি । দেগঙ্গার ঘটনায় তা স্পষ্ট। এর বিরুদ্ধে আবারও লাগাতার প্রচার অভিযান চালানো হবে।”

ABOUT THE AUTHOR

...view details