কলকাতা, 31 মে : WBCS 2019-এর কোনও পরীক্ষার্থী যদি উত্তরপত্র দেখার আবেদন করেন তবে তাঁকে সেই উত্তরপত্র দেখানো হবে । 29 মে বিক্ষোভকারীদের এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারপার্সন । কিন্তু, সেই প্রতিশ্রুতি পানল করেনি পাবলিক সার্ভিস কমিশন । এই অভিযোগে কমিশন অফিসের সামনে আবেদনপত্র ফেলে অবস্থান বিক্ষোভ করলেন চাকরিপ্রার্থীরা । তাঁদের অভিযোগ, গতকাল ও আজ সকাল পর্যন্ত তাঁদের উত্তরপত্র দেখানোর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে । তবে বেলা বাড়তেই আবেদনকারীদের লম্বা লাইন দেখে PSC-র দুটি প্রধান গেট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ ।
প্রতিটি পরীক্ষা শেষের সাতদিনের মধ্যে কোনও পরীক্ষার্থী যদি উত্তরপত্র দেখতে চান তবে সেই উত্তরপত্র প্রকাশ করতে হবে । পরীক্ষার্থীদের দাবি ছিল এটাই । উত্তরপত্র প্রকাশের দাবিতে গত 29 মে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় PSC দুর্নীতিমুক্ত মঞ্চ । ওইদিন বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল PSC-এর চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে । নিজেদের দাবিদাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি জমা করতে যায় তারা । প্রতিনিধি দল জানায়, সেই সময় তাঁদের চেয়ারপার্সনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে তাঁরা উত্তরপত্র প্রকাশ করতে পারছে না । তবে, আগামী দু'দিন যদি কোনও WBCS-2019 পরীক্ষার্থী তাঁর "অ্যানসার কি" দেখার আবেদন করেন তাহলে তা দেখানো হবে । এ বিষয়ে PSC দুর্নীতিমুক্ত মঞ্চের এক সদস্য বলেন, "29 তারিখে চেয়ারম্যান আমাদের জানিয়েছিলেন, যারা অ্যাপ্লিকেশন দেবেন তাঁদের চেক করা হবে। অনেক পরীক্ষার্থীরই মনে হয় তিনি ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন । অনেকেরই মনে হতে পারে যা কাট অফ লিখেছেন তার থেকে মার্কস অনেক বেশি আছে । সেই বিষয়গুলোও আমরা জানিয়েছিলাম চেয়ারম্যানকে । কারণ আমরা বিষয়গুলো দেখতে পাই না । যেহেতু এতদিন "অ্যানসার কি" পাবলিশ করত না PSC সেকারণে চেয়ারম্যান আমাদের জানিয়েছিলেন 30 ও 31 তারিখ এই দু'দিন আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা । আবেদন করলে সেই আবেদনপত্র জমা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি । 15 জুন থেকে রেজ়াল্ট জানানোর কথা ছিল ।"
বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি মতো চাকরিপ্রার্থীরা গতকাল ও আজ PSC দপ্তরে পৌঁছান WBCS preliminary 2019-এর আবেদনপত্র জমা দিতে । গতকাল কিছু সমস্যার পর আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয় । কিন্তু আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য চাকরিপ্রার্থীদের লম্বা লাইন পড়ে যায় । অভিযোগ, লাইন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি PSC কর্তৃপক্ষ । অত্যধিক সংখ্যায় আবেদনকারীরা উপস্থিত হওয়াতেই PSC কর্তৃপক্ষ অমানবিকভাবে গেট আটকে দেয় বলে অভিযোগ । PSC দুর্নীতিমুক্ত মঞ্চের ওই সদস্য বলেন, "কালও কমিশনে এসেছিলাম আবেদনপত্র জমা দিতে । কিন্তু আমাদের অফিসের কর্মচারীরা জানান, চেয়ারম্যান তাঁদের কোনও লিখিত নির্দেশ দেননি । তাই তাঁরা আবেদনপত্র নিতে পারবেন না । এরপরই কিছু আবেদনকারীরা ঝামেলা করে । এরপর চেয়ারম্যান তাঁদের ডেকে পাঠান । চেয়ারম্যান আবারও প্রতিশ্রুতি দেন আমাদের খাতা রি-চেক করার ব্যাপারে । আমাদের সকলের আবেদনপত্র জলদি জমা নেওয়া অর্ডার দেবেন তিনি, এই প্রতিশ্রুতিও দেন পুনরায় । সেই মতো আলাদা একটা রিসিভ কাউন্টার খোলা হয় । কাল প্রায় 700 জনের মতো প্রার্থী এসেছিল । তাঁরা সবাই আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন । তাঁদের প্রত্যেকে রিসিভ কপিও পেয়েছেন । আজকে আবেদনপত্র দেওয়ার শেষ তারিখ । তাই প্রার্থীদের সংখ্যাটা আরও বেড়েছে । সকালে প্রায় 50-100 জন এসেছিলেন । তাঁদের রিসিভ কপি দেওয়া হয় । এরপর লাইন বাড়তে থাকলেই PSC দু'টো গেটই লক করে দেয় ।"
আবেদনপত্র জমা দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা বন্ধ গেটের সামনে বসে বিক্ষোভ শুরু করে দেন । ওই সদস্য বলেন, "প্রায় 350 জন চাকরিপ্রার্থী তখন গেটের সামনেই জটলা করে । এরপরে জয়েন্ট সেক্রেটারি আসেন । তিনি আমাদের জানান, চেয়ারম্যান এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছেন না। আমাদের জন্য আজ আর আলাদাভাবে আবেদন রিসিভ করা হবে না । কারণ, এত প্রার্থীদের আবেদনপত্র আলাদাভাবে রিসিভ করার মতো তাঁদের স্টাফ নেই । আমাদের আবেদনপত্র একটা ড্রপবক্সে ফেলে দিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন তিনি । প্রার্থীরা এরপরে দাবি জানান, আবেদনপত্র ড্রপবক্সে ফেলার পর প্রমাণস্বরূপ একটা অফিসিয়াল কাউন্টারপার্ট তাঁদের দিতে হবে । আমাদের সেই দাবি PSC কর্তৃপক্ষ মানতে চাননি । সেই নিয়ে ঝামেলা চলছিল । এরপরেই প্রার্থীরা আবেদনপত্রের কাগজ রাস্তায় ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । প্রার্থীদের বক্তব্য, 29 তারিখ PSC-র চেয়ারম্যান একরকম কথা বললেন, আর আজ সেই কথা থেকে 180 ডিগ্রি ঘুরে গেছেন।"
বিক্ষোভ চলাকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে আসে পুলিশ । বিক্ষোভকারীদের উঠে যেতে বলা হয় । ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয় PSC-র গেট । অবশেষে ড্রপবক্সেই আবেদনপত্র ফেলে চলে যান বিক্ষোভকারীরা। PSC-র তরফে একটি ই-মেইল আইডি দেওয়া হয় । ওই ই-মেইল আইডিতেই আবেদন করতে বলা হয়েছে তাঁদের ।