পশুদের উপর অত্যাচার করে, তাদের মেরে, তাদের মাংস প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করা আটকাতে আমিষাশী থেকে নিরামিশাষীতে পরিণত হওয়া ক্রমশ ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে । প্রতি বছর 1 অক্টোবর বিশ্ব নিরামিষাশী দিবস পালন করা হয় । নিরামিষ খাদ্যগ্রহণের উপকারিতা প্রচার করতে এবং কীভাবে এর ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের কল্যাণ হয়, তা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়াই দিনটি পালনের উদ্দেশ্য । নিরামিষ খাবার—দাবারের সবচেয়ে পরিচিত উৎস হল উদ্ভিদ । 1977 সালে নর্থ আমেরিকান ভেজিটেরিয়ান সোসাইটির তরফে (NAVS) প্রথম এই দিন উদযাপন করা হয়েছিল ।
কী কী ধরনের নিরামিশাষী হয়
নিরামিশাষীদের তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যেমনভাবে ন্যাশনাল হেলথ পোর্টাল অফ ইন্ডিয়া (NHP) ব্যাখ্যা করেছে-
1. ভেগান : এই ডায়েটে শুধুমাত্র উদ্ভিদজাত সামগ্রী থাকে । এতে কোনও প্রাণীজাত প্রোটিন বা প্রাণিজ বাই—প্রোডাক্ট যেমন ডিম, দুধ কিংবা মধু থাকে না । এতে সাধারণত থাকে কাঁচা ফল, শাকসবজি, মটরশুঁটি, স্প্রাউটস এবং বাদাম ।
2. ল্যাক্টো—ভেজিটেরিয়ান : এতে থাকে উদ্ভিদজাত খাবার এবং উপাদান কিন্তু ডিম থাকে না।
3. ল্যাক্টো—ওভো ভেজিটেরিয়ান : এতে থাকে উদ্ভিদজাত খাবার, দুগ্ধজাত উপাদান এবং ডিম।
সুষম পথ্য গ্রহণ
আপনি যে ধরনেরই নিরামিশাষী হোন না কেন, এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার ডায়েট যেন সুষম হয়, তাতে আপনার শরীরের যথাযথ কার্যকারিতা এবং বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর উপাদান থাকে। NHP—র পরামর্শ, সেই সব খাবারদাবারে যেন নিম্নলিখিত ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে।
ভিটামিন B12
দুগ্ধজাত উপাদান, ডিম, ‘ফর্টিফায়েড’ দানাশস্য, পাউরুটি, সয়াবিন এবং ভাত থেকে তৈরি পানীয়।
ভিটামিন D
দুধ এবং সূর্যের আলো
ক্যালসিয়াম
দুগ্ধজাত উপাদান, সবুজ শাকসবজি, ব্রোকোলি
প্রোটিন
ডাল, দুগ্ধজাত উপাদান (দুধ এবং চিজ), ডিম, টোফু এবং অন্যান্য সয়াবিনজাত উপাদান, ড্রায়েড বিনস এবং বাদাম
আয়রন
ডিম, ড্রায়েড বিনস, ড্রায়েড ফ্রুটস, হোল গ্রেনস, সবুজ শাকসবজি
জিঙ্ক
হুইটজার্ম, বাদাম, ‘ফর্টিফায়েড’ দানাশস্য, ড্রায়েড বিনস এবং কুমড়োর বীজ
নিরামিশাষী হওয়ার উপকারিতা
নিরামিশাষী হওয়ার নিজস্ব সুযোগসুবিধা রয়েছে এবং এখানে NHP—র বলা পরামর্শের কয়েকটি জানানো হল ।
—বড়সড় হার্টের রোগ এবং ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ।
—বিপাক প্রক্রিয়া সক্রিয় রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
—নিরামিশাষী ডায়েটে থাকে হোল গ্রেনস, বাদাম, ফল এবং শাক—সবজি যা থেকে পাওয়া যায় ফাইবার, অ্যান্টি—অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং জরুরি মিনারেলস।
—মাংস খাদ্যতালিকায় না রাখাটা ফ্যাট গ্রহণ কমাতে সাহায্য করবে।
—আমিষ খাবারের তুলনায় নিরামিষ আহারে কোলেস্টরলের হার অনেকটাই কম থাকে।
—এতে পশুপাখিরা রক্ষা পাবে।
“সঠিকভাবে পরিকল্পিত নিরামিষ ডায়েট গ্রহণ করলে শিশু, মহিলা এমনকী প্রবীণ–যে কোনও বয়সের মানুষের পর্যাপ্ত পুষ্টির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয় । তবে তার চাবিকাঠি হল নিজের পুষ্টিগত চাহিদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা এবং সেইমতো ডায়েট পরিকল্পনা করা ।”
নিরামিশাষী হতে গেলে কী কী করতে হবে?
1. নিজের মনকে স্থির করুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন যে কেন আপনি নিরামিশাষী হতে চান ।
2. মাংস, মাছ প্রভৃতি খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা দমন করুন ।
3. আগের উপকরণ বদলে তার স্থানে নিরামিষ উপাদান বাছুন । যেমন টোফু কিংবা সোয়া বড়ি বেছে নিন ।
4. খাবারে কী কী উপকরণ আছে, জানতে লেবেলের লেখা পড়ুন।
5. অনলাইনে অনেক সুস্বাদু নিরামিষ খাবারের রেসিপি আছে, দেখত পারেন ।
6. নিজের নিরামিশাষী বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করে জানুন, ভালো ভালো নিরামিষ রান্না কী কী আছে আর তাদের সঙ্গে বেরিয়ে জিভে জল আনা, নানা রকম নিরামিষ খাবার চেখে দেখুন ।
নিরামিষ খাবার—দাবারে যেমন পেট ভরে, তেমনই এতে বৈচিত্র্যও রয়েছে । তাই হাজার হাজার পদের মধ্যে থেকে নিজের পছন্দের পদ বেছে নিতে পারেন । কিন্তু নিরামিষ আহারে নিজের শরীরের পুষ্টির চাহিদা ঠিকভাবে মিটবে কি না, তা নিয়ে যদি নিশ্চিত না হতে পারেন, তাহলে কোনও বিশেষজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।