কলকাতা, 12 জুন : উদ্দেশ্য ছিল সন্দেশখালির ঘটনার প্রতিবাদ জানানো । লক্ষ্যপূরণে শান্তিপূর্ণভাবে লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছিল রাজ্যের BJP নেতৃত্ব ।
পূর্বঘোষিত সেই কর্মসূচি ঘিরেই আজ কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হল মধ্য কলকাতা । সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে লালবাজারমুখী গোটা রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেল । লালবাজারের অনেক আগেই অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হলেন দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহারা ।
আজ সকাল থেকেই সাজ সাজ রবে অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য BJP । সব সাংসদদের নিয়ে লালবাজার অভিযানের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল । রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে BJP কর্মীদের জড়ো করা হচ্ছিল গতকাল থেকে । অন্যদিকে গেরুয়া শিবিরের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে যেন কোমর বেঁধেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার । ফিয়ার্স লেন, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-র মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল । অভিযান ব্যর্থ করার জন্য জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল । পুরো ব্যবস্থার নজরদারিতে রাখা হয়েছিল ড্রোন ।
এই সংক্রান্ত খবর : "গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক, মস্তিষ্কের ভারসাম্য হারিয়েছেন মমতা"
যা হওয়ার ঠিক তাই ঘটল । লালবাজার অভিযান ব্যর্থ করতে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করল রাজ্য সরকার । কাঁদানে গ্যাস, জলকামানের জেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল BJP-র অভিযান । BJP সূত্রের দাবি, কাঁদানে গ্যাসের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল রায়, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষ নেতারা। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের পাঠানো হয় হাসপাতালে ।
এই সংক্রান্ত খবর : মমতা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন, এভাবে চললে কেন্দ্র ভাববে : কৈলাস
এরপর সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে অবস্থানে বসেন সাংসদরা । লকেট চট্টোপাধ্যায় , সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, অর্জুন সিং সহ অন্য সাংসদদের অবস্থান তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে পুলিশ । কিন্তু সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দেন তাঁরা ।
এই সংক্রান্ত খবর : এরকম স্বৈরাচারী সরকার দেখিনি : দিলীপ
BJP-র মিছিলটি যখন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে লালবাজারের দিকে যাচ্ছিল তখনই পুলিশের তরফে প্রথম বাধা আসে । কিন্তু সেই ব্যারিকেড ভেঙে দেন BJP নেতা-কর্মীরা । তখনই শুরু হয় ধুন্ধুমার । লাঠিচার্জ, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে অভিযানকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ ।
এই সংক্রান্ত খবর : কন্ডাক্টর থেকে তাবড় তৃণমূল নেতা, সন্দেশখালির 'ত্রাস' শাহজাহান !
পুলিশি তৎপরতায় সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও বউবাজারের মুখেই থমকে যায় BJP-র লালবাজার অভিযান । লালবাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার আগেই আটকে যায় মিছিল । সেখান থেকেই ফিরতে হয় BJP নেতাদের । আজকের অভিযানে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন BJP নেতারা । দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, "জঘন্য রাজনীতি চলছে বাংলায় । এখানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে ।" তাঁর দাবি, বিনা প্ররোচনায় কাঁদানে গ্যাস ফাটিয়েছে পুলিশ ।
এই সংক্রান্ত খবর : সন্দেশখালি ইশু : তদন্তে IB
অন্যদিকে রাজ্যে BJP-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র দাবি, রাজ্যের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর । এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যের বিষয়ে কেন্দ্র ভাববে । রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের ইঙ্গিত দিয়ে কৈলাসের মন্তব্য, "আমরা চাই পাঁচ বছর সরকার চলুক । কিন্তু এভাবে চললে কেন্দ্রকে ভাবতে হবে । "
এই সংক্রান্ত খবর : মমতা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন : লকেট
সন্দেশখালির ঘটনায় তপ্ত হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি । তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আঙুল তুলেছে BJP । বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে তারা । লোকসভা নির্বাচনের পর প্রথম প্রকাশ্য অভিযান ছিল আজই । অন্যদিকে লোকসভা ভোটে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেস্টিজ ফাইট ছিল আজ । সর্বশক্তি দিয়ে অভিযান আটকানো ছিল রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য । পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সেই পথেই হাঁটল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ।