তেলুগুভাষী মানুষের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর পাঁচ দশক কেটে গিয়েছে । বহু বাধা পেরিয়ে এই ইস্পাত কারখানার উৎপাদন শুরু হয় এবং 1992 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও এটিকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন । এখন এই সংস্থাকে সম্পূর্ণ বেসরকারিকরণ করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা হজম করা কঠিন । বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানা হল নবরত্ন তালিকাভূক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি । 2002 থেকে 2015 সাল পর্যন্ত এই কারখানা বিভিন্নভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে 42 হাজার কোটি টাকা আয় করতে সাহায্য করেছে । গত তিন বছরে সংস্থার লোকসানের কারণ বোঝা কঠিন নয় । এর প্রেক্ষিতে সংস্থার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত মানুষকে হতবাক করেছে । এই ইস্পাত কারখানা তৈরির জন্য জনস্বার্থের নামে মানুষের কাছ থেকে 22000 একরেরও বেশি জমি নিয়েছিল সরকার । কৃষকদের থেকে জলের দরে জমি নেওয়া হয়েছিল । অধিগ্রহণের সময় কৃষকদের সর্বাধিক দাম দেওয়া হয়েছিল একর প্রতি 20 হাজার টাকা । আজ সেই একই জমির দাম একরপ্রতি 5 কোটি ছাড়িয়েছে । এই প্রেক্ষিতে এই ইস্পাত কারখানার দাম 2 লক্ষ কোটিরও বেশি ।
বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান জোগায় । কারখানা নির্মাণের সময় জমিদাতাদের যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অনেকগুলিই পূরণ করা এখনও বাকি । স্বাবলম্বী হতে একটা ইস্পাত কারখানার নিজস্ব খনির প্রয়োজন হয় । 2013 সালে ইস্পাত মন্ত্রক ঘোষণা করে যে তারা খাম্মাম জেলার বায়ারাম লৌহ আকরিক খনি বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানার জন্য বরাদ্দ করবে । কিন্তু এই ঘোষণার পর এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ হয়নি । কারখানার আর্থিক ক্ষতির জন্য কেন্দ্র সরকার দায়ী, কারণ কারখানাকে খোলা বাজার থেকে 5200 টাকা প্রতি টন হিসেবে লৌহ আকরিক কিনতে হচ্ছে । যদি বেসরকারি হাতেও যায়, তাহলেও নিজস্ব এবং ছাড়যুক্ত খনি না থাকলে ইস্পাত কারখানা কোনও লাভ করতে পারবে না । যদি 2017 সালে ঘোষিত জাতীয় ইস্পাত নীতির লক্ষ্যপূরণ করতে হয়, তাহলে বেসরকারিকরণের প্রস্তাবকে সরিয়ে রেখে কারখানাকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিতে হবে ।