পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Feb 12, 2021, 1:14 PM IST

ETV Bharat / bharat

তেলুগু ভূমি কি ভিএসপি-র বেসরকারিকরণ মেনে নেবে?

বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান জোগায় । গত তিন বছরে সংস্থায় হয়েছে বিপুল লোকসান ৷ এর প্রেক্ষিতে সংস্থার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত , যা হতবাক করেছে মানুষকে ৷

তেলুগু ভূমি কি ভিএসপি-র বেসরকারিকরণ মেনে নেবে?
তেলুগু ভূমি কি ভিএসপি-র বেসরকারিকরণ মেনে নেবে?

তেলুগুভাষী মানুষের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর পাঁচ দশক কেটে গিয়েছে । বহু বাধা পেরিয়ে এই ইস্পাত কারখানার উৎপাদন শুরু হয় এবং 1992 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও এটিকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন । এখন এই সংস্থাকে সম্পূর্ণ বেসরকারিকরণ করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা হজম করা কঠিন । বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানা হল নবরত্ন তালিকাভূক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি । 2002 থেকে 2015 সাল পর্যন্ত এই কারখানা বিভিন্নভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে 42 হাজার কোটি টাকা আয় করতে সাহায্য করেছে । গত তিন বছরে সংস্থার লোকসানের কারণ বোঝা কঠিন নয় । এর প্রেক্ষিতে সংস্থার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত মানুষকে হতবাক করেছে । এই ইস্পাত কারখানা তৈরির জন্য জনস্বার্থের নামে মানুষের কাছ থেকে 22000 একরেরও বেশি জমি নিয়েছিল সরকার । কৃষকদের থেকে জলের দরে জমি নেওয়া হয়েছিল । অধিগ্রহণের সময় কৃষকদের সর্বাধিক দাম দেওয়া হয়েছিল একর প্রতি 20 হাজার টাকা । আজ সেই একই জমির দাম একরপ্রতি 5 কোটি ছাড়িয়েছে । এই প্রেক্ষিতে এই ইস্পাত কারখানার দাম 2 লক্ষ কোটিরও বেশি ।

বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান জোগায় । কারখানা নির্মাণের সময় জমিদাতাদের যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অনেকগুলিই পূরণ করা এখনও বাকি । স্বাবলম্বী হতে একটা ইস্পাত কারখানার নিজস্ব খনির প্রয়োজন হয় । 2013 সালে ইস্পাত মন্ত্রক ঘোষণা করে যে তারা খাম্মাম জেলার বায়ারাম লৌহ আকরিক খনি বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানার জন্য বরাদ্দ করবে । কিন্তু এই ঘোষণার পর এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ হয়নি । কারখানার আর্থিক ক্ষতির জন্য কেন্দ্র সরকার দায়ী, কারণ কারখানাকে খোলা বাজার থেকে 5200 টাকা প্রতি টন হিসেবে লৌহ আকরিক কিনতে হচ্ছে । যদি বেসরকারি হাতেও যায়, তাহলেও নিজস্ব এবং ছাড়যুক্ত খনি না থাকলে ইস্পাত কারখানা কোনও লাভ করতে পারবে না । যদি 2017 সালে ঘোষিত জাতীয় ইস্পাত নীতির লক্ষ্যপূরণ করতে হয়, তাহলে বেসরকারিকরণের প্রস্তাবকে সরিয়ে রেখে কারখানাকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিতে হবে ।

জাতীয় ইস্পাত নীতির লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক মান ও নিরাপত্তা বজায় রেখে 30 কোটি টন ইস্পাত নির্মাণের ক্ষমতা অর্জন, যাতে ভারত 5 ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির পথে আরও অগ্রসর হতে পারে । ভারত মালা, সাগর মালা, জল জীবন মিশন এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মধ্যে সরকারি সংস্থার ইস্পাত ব্যবহার করে তাদের নতুন জীবনদান করা যেতে পারে । সমস্ত সমস্যার একমাত্র সমাধান কি বেসরকারিকরণ?

কেন্দ্র বলছে, নীতি আয়োগের সুপারিশের ভিত্তিতেই তারা বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে । কিন্তু তাঁরা কি এ প্রসঙ্গে পদ্মভূষণ সারস্বতের রিপোর্ট পড়েননি? রিপোর্টে বলা হচ্ছে, যেখানে ভারতে এক টন ইস্পাত তৈরি করতে আদতে খরচ পড়ে 320-340 মার্কিন ডলার, সেখানে অজস্র কর, সেস, অতিরিক্ত রয়্যালটি রেট (বিশ্বে সর্বাধিক), পরিবহণ খরচ, সুদ ইত্যাদির জেরে দাম বেড়ে টন প্রতি 420 ডলারে পৌঁছে যায় । যখন নিজস্ব খনি থাকা ইস্পাত কারখানাগুলোরই এই অবস্থা, সেখানে ভিএসপি-র মতো সংস্থার বিষয়টা সহজেই অনুমেয় ।

2017 সালের মে মাসে মোদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, যে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ইস্পাত সরকারি কারখানা থেকেই নেওয়া হবে । এধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও কীভাবে তারা একটা নবরত্ন ইস্পাত কারখানার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে? অভিযোগ উঠছে যে নিজস্ব খনি থাকা বেসরকারি ইস্পাত কারখানাগুলো একটা অসাধু চক্র চালাচ্ছে, যাতে ইস্পাতের দাম বাড়ানো যায় । প্রতিযোগিতা কমিশন এইসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে । বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানা একটা কামধেনুর মতো, যার ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে । আগলে রাখার বদলে তাকে বিক্রি করে দিলে সেটা হবে জাতীয় স্বার্থের ওপর একটা বড় আঘাত । হিন্দুস্থান জিঙ্ক লিমিটেডের বেসরকারিকরণের পরিণতি দেখার পর, তেলেগু জনতা আর বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানার বেসরকারিকরণ মেনে নিতে রাজি নয় ।

For All Latest Updates

TAGGED:

ABOUT THE AUTHOR

...view details