হায়দরাবাদ, 19 অগস্ট: ভিসা থাকা সত্ত্বেও গত কয়েকদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে 500 জন ভারতীয় পড়ুয়াকে ৷ ফলে ভিসা পেয়ে যে সমস্ত ভারতীয়রা কাঙ্খিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভরতি হওয়ার আনন্দে মার্কিন মুলুকে পা রেখেছিলেন, তাঁদের অনেককে ফিরে আসতে হয়েছে স্বদেশে ৷ তাও একেবারে বিমানবন্দর থেকেই ৷
বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকান কনস্যুলেট সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, ভিসা অনুমোদন হওয়া মানেই পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সার্টিফিকেট নয় ৷ ছাত্রছাত্রীদের জমা দেওয়া শংসাপত্র ভুল প্রমাণিত হলে যেকোনও সময় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে ।
অনেককে সোশাল মিডিয়া পোস্ট ও চ্যাট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের ভিত্তিতে ভারতে ফের পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ ফলে উদ্বিগ্ন ভারতীয় অভিভাবকরা ৷ অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাঁদের যাওয়ার কথা, সেই সমস্ত পড়ুয়াদের অভিভাবকরাই এখন এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত ৷
যদি তুমি ইংরেজিতে কথা বলতে না পারো: বিমানবন্দরে নামার শিক্ষার্থীদের এফ-1 ভিসা এবং বোর্ডিং পাস পরীক্ষা করেন অভিবাসন দফতরের আধিকারিকরা ৷ এটাকে বলে 'পোর্ট অফ এন্ট্রি' ৷ সকলকে নয়, কিন্তু কিছু শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় ৷ যেমন...আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে যাচ্ছেন ? কোন কোর্সে যোগ দিতে হবে ? আপনি কোথায় বাস করেন ? আমেরিকান কনস্যুলেটের সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, এই ধরনের সহজ প্রশ্ন যাঁরা ইংরেজিতে সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারেন না, তাঁদের ইংরেজির প্রাথমিক জ্ঞান নেই বলে ধরে নেওয়া হয়৷ তাঁদেরই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৷
যদি কোনও চ্যাট বা পোস্ট থাকে: হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট এবং ইমেল এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য শত শত শিক্ষার্থীর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । অভিবাসন কর্মকর্তারা সন্দেহভাজন কাউকে জিজ্ঞাসা করার জন্য সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট ও চ্যাট দেখেন । উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, কেউ কি প্রথম দিন থেকে পার্ট টাইম কাজ করতে চান ? ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফি বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ কীভাবে দেখাতে হবে ? এর জন্য কনসাল্টেন্সিকে কত টাকা দিতে হবে ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধুদের সঙ্গে এই ধরনের বিষয়ে কথাবার্তা যাঁদের হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট বা সোশাল মিডিয়া পোস্টে পাওয়া যাচ্ছে, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে ৷ তাছাড়া কেউ যদি সোশাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক পোস্ট করেন, তাহলে তাঁকেও বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷
যদি জাল শংসাপত্র থাকে: এই বছর অভূতপূর্ব সংখ্যক ভারতীয় ছাত্র আমেরিকায় পড়তে যাচ্ছেন । গত বছর 1.90 লাখ গিয়েছিলেন ৷ এই বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত 91 হাজার পড়ুয়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন । এই সময়ে কম ছাত্রছাত্রী যান মার্কিন মুলুকে ৷ সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া যান অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে ৷ এই সময়ের সংখ্যা ধরলে বছর শেষে আমেরিকায় পড়তে যাওয়া ভারতীয়ের সংখ্যা 2.50 থেকে 2.70 লক্ষ হবে ৷
হায়দরাবাদের একটি কনসালটেন্সি সংস্থার ম্যানেজার বেঙ্কট রাঘবরেড্ডি বলেন, ''বিশেষ করে তেলেগু রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া যাচ্ছেন । মার্কিন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি 21 জনকে একসঙ্গে ফেরত পাঠিয়েছে মিথ্যা শংসাপত্র থাকার কারণে ৷ প্রতি বছর অন্তত 200 পড়ুয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ তবে এবার সব মিলিয়ে প্রায় 500 পড়ুয়াকে ফেরানো হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে ৷ কিন্তু একসঙ্গে 21 জনকে ফেরত পাঠানোর পরই এত আলোচনা শুরু হয়েছে ৷’’