কোভিড-19 প্যানডেমিকের জেরে স্কুলগুলির আচমকা বন্ধ করে দেওয়ায় শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থার উপরই প্রভাব পড়েনি, শিশুদের পুষ্টির নিয়মনীতিও প্রভাবিত হয়েছে । জাতীয় মিড ডে মিল প্রকল্প (যা MDM) নামেও পরিচিত, বিশ্বের বৃহত্তম স্কুল-আহার কর্মসূচি, যার প্রচলনই হয়েছিল স্কুলে শিশু-পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার বাড়াতে এবং দেশের সরকারি স্কুলগুলিতে পাঠরত 11.59 কোটি শিশুকে দিনে অন্তত একটি ‘পুষ্টিকর’ আহার সরবারহ করা নিশ্চিত করতে । পড়ুয়াদের পরিবারকে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা বা খাদ্য নিরাপত্তা ভাতা সরাসরি দেওয়ার বিধি যেখানে রাজ্যগুলি দ্রুত অধিগ্রহণ করেছে, সেখানেই সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় প্রকৃত পুষ্টি প্রদানের বিষয়টি যথাযথের সীমা থেকে বহু দূরেই রয়েছে । এই সমস্যার কিছুটার জন্য দায়ী প্রকল্প পরিকল্পনা এবং রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তহবিল প্রেরণের ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত নানা ধরনের জটিলতা । এই ধরনের চ্যালেঞ্জ প্যানডেমিকের আগেও ছিল তবে বর্তমানে আরও বেড়েছে। দ্রুত এর নিষ্পত্তি না হলে আমরা এক সংকটের মধে্যই অন্য এক সংকটে জড়িয়ে পড়ব। কেন, তার বর্ণনা রইল ।
2020-র মার্চের গোড়ায়, ভারতের শীর্ষ আদালত, স্কুল বন্ধের ফলে MDM-এর অ-সরবরাহে বিপদের আশঙ্কার কথা চিহ্নিত করেছিল । পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল, বিপন্ন জনজাতি, বিশেষ করে শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা হয় । আদালত জানিয়েছিল, এই নির্দেশের লক্ষ্য অপুষ্টির ফলে হওয়া দীর্ঘমেয়াদী সংকট থেকে নিরাপদ থাকা । এর পরই দ্রুত, শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে রাজ্যগুলির উদ্দেশে্য একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে বলা হয় শিশুপড়ুয়াদের বাড়িতে যেন হয় ‘রান্না করা, গরম মিড—ডে মিলের খাবার’ পাঠিয়ে দেওয়া হয় অথবা তাদের ‘খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ভাতা’ পাঠিয়ে দেওয়া হয় ।
একজোট হয়ে রাজ্যগুলি জানায়, হয় বিহারের মতো ‘ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’ (অ্যাকাউন্টে নগদ পাঠিয়ে দেওয়া) দরকার বা রাজস্থান, তেলেঙ্গানার মতো খাদ্যশস্য পাঠানো অথবা FSA প্রেরণ, যার মধে্য খাদ্যশস্য-ডাল-তেল প্রভৃতি থাকবে । এমনকী, সার্বিক গুণসম্পন্ন আহার যেমন দুধ, ডিম প্রভৃতি খাবার কেরলের মতো রাজে্য দেওয়া হয়েছিল । এই ধরনের উদে্যাগকে আর্থিক মদত দিতে, অতিরিক্ত অনুমোদনও চাওয়া হয়েছিল যাতে গ্রীষ্মের মাসগুলিতেও MDM প্রদান করা নিশ্চিত হয়, অ—প্যানডেমিক সময়ে সাধারণত যা গ্রীষ্মের ছুটিতে স্কুলগুলিতে দেওয়া হয় না ।
অথচ এতসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, প্রচুর শিশু সে সব পাচ্ছে না, যা তাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করা হয়েছিল । পাঁচ রাজে্যর (ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় এবং উত্তরপ্রদেশ) 1158 জন অভিভাবকদের উপর মে-জুন মাসে চালানো অক্সফ্যামের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এদের অন্তত এক তৃতীয়াংশ (35 শতাংশ) শিশুরা MDM পাচ্ছে না । এই অনুপাত উত্তরপ্রদেশে অনেকটাই বেশি, 92 শতাংশ । অন্যান্য সমীক্ষায় আবার শিশুদের MDM পাওয়ার অনুপাত আরও কম ।
কেন? এর সম্ভাব্য কারণ জানতে হলে খতিয়ে দেখতে হবে, এই প্রকল্প কোন কোন বাধার মুখে পড়েছে ? এছাড়াও বাজেট, তহবিল হস্তান্তর এবং কারা প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে, সেই সংক্রান্ত তথ্যও বিশ্লেষণ করে দেখা সহায়ক হতে পারে । MDM হল কেন্দ্র সরকার পরিচালিত প্রকল্প যার অর্থ কেন্দ্র এবং রাজে্যর হাতে থাকলে তহবিল গঠনের ভার । MDM-এর আওতায় (এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বুঝতে এই ব্রিফ ডাউনলোড করুন ) কেন্দ্র তহবিলের 60 শতাংশ প্রদান করে সেই সব নানা ধরনের কাজের জন্য, যা প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার যেমন রান্নার খরচ, রাঁধুনি তথা সহায়কদের জন্য সাম্মানিক অর্থ এবং পরিকাঠামো খরচ (রান্নার সরঞ্জাম প্রভৃতি) । তাছাড়াও খাদ্যশস্যের মোট খরচও এটিই বহন করে ।
2020-2021 অর্থবর্ষের গোড়ায়, কেন্দ্রীয় সরকার 11,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, যা পরে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে 12,600 কোটি টাকা করা হয় । এই অতিরিক্ত 1,600 কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ গ্রীষ্মের মাসগুলিতে MDM সরবরাহের জন্য করা হয়েছিল ।
কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলিকে তহবিল সরবরাহের বিষয়টি অবশ্য দরকারের তুলনায় কম ছিল এবং এতে দেরিও হয়েছিল । আমরা এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন, 2020) রান্নার খরচ নির্বাহের জন্য জরুরি অর্থবরাদ্দের সঙ্গে (পার ইউনিট রান্নার খরচের সঙ্গে দিনের সংখ্যা গুণ করে প্রাপ্ত হিসেব) কেন্দ্রের তরফে দেওয়া প্রকৃত আর্থিক অনুদানের তুলনা করেছি । ফলাফল বলছে, যতটা দরকার, তার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম অর্থ দেওয়া হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, রাজস্থানে প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য রান্নার খরচ 173 কোটি টাকা ধরা হয়েছিল কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে মাত্র 90 কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল । একইরকমভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশে দরকারের তুলনায় 60 শতাংশ কম অর্থ প্রদান করা হয়েছে ।