সাগর, 13 ডিসেম্বর: মধ্যপ্রদেশের মসনদে বসেছেন মোহন যাদব ৷ বিজেপি যখন সোমবার তাঁকে মুখ্য়মন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়, তখন সকলেই বিস্মিত হয়েছিলেন ৷ অনেকেরই ধারণা ছিল ছত্তীশগড় ও রাজস্থানে নতুন মুখ আনার কথা ভাবলেও মধ্যপ্রদেশে সেই পথে হাঁটবে না বিজেপি ৷ বরং ওই রাজ্যে তো বটেই, সারা দেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় (সাড়ে 16 বছর) থাকার রেকর্ড করা শিবরাজ সিং চৌহানের উপরি ভরসা রাখবে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷
ফলে শিবরাজকে সরিয়ে দেওয়া এযাবৎকালে বিজেপির জন্য সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল ৷ কারণ, শিবরাজ সিং চৌহান, যিনি মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে মামাজি হিসেবে পরিচিত, তিনি পাঁচবারের সাংসদ ৷ মধ্যপ্রদেশে চারবারের মুখ্যমন্ত্রী ৷ সব মিলিয়ে সাড়ে 16 বছর ওই পদে ছিলেন ৷ ‘বিমারু’ রাজ্য়েগুলির মধ্য়ে একসময় অন্যতম ছিল মধ্যপ্রদেশ ৷ সেই রাজ্যকে 13 লক্ষ 22 হাজার টাকার জিডিপি-তে পৌঁছে দিয়েছেন ৷
স্বাভাবিকভাবে এই সিদ্ধান্ত সকলের কাছেই বিস্ময়কর ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনেক হিসেব কষেই মোহন যাদবের প্রতি আস্থা রেখেছেন ৷ তাছাড়া শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, রাজস্থান ও ছত্তীশগড়েও নতুন মুখ বেছেছেন মুখ্যমন্ত্রী পদে ৷ এই নিয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক জগদীপ সিং বাইসের বক্তব্য, তিন রাজ্যে তিন নতুন মুখ এনে ঝুঁকি অবশ্য নিয়েছে বিজেপি ৷ কিন্তু এর নেপথ্যে বিজেপির দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ছবি স্পষ্ট হয়েছে ৷
তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসলে 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা বেশি করে মাথায় রেখেছেন ৷ উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে যাদব ভোটব্যাংক হাতে রাখতেই মোহন যাদব শীর্ষপদে বসেছেন । বিজেপি মনে করছে, এই সিদ্ধান্তের জেরে তারা এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করছে ৷ একদিকে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি, অন্যদিকে বিহারে জেডিইউ ও আরজেডি-কে দুর্বল করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি ৷
উত্তরপ্রদেশে যাদবরা বরাবর সমাজবাদী পার্টির উপরে আস্থা রাখে ৷ সেখানে যাদব ভোট প্রায় 10 শতাংশ ৷ ওই রাজ্যের অন্তত 50টি জেলায় যাদব ভোটব্যাংক বড় ভূমিকা নেয় ৷ 2022 সালে হওয়া উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে যাদব ভোটের 85 শতাংশ অখিলেশ যাদবের দল ঘরে তুলেছে ৷ বিহারে আবার যাদব ভোটব্যাংককে উত্তরপ্রদেশের থেকেও শক্তিশালী মনে করা হয় ৷ সম্প্রতি বিহার সরকার যে জাতিগণনা করেছে, সেখানে দেখা গিয়েছে ওবিসি-দের মধ্যে যাদবদের সংখ্যাই বেশি ৷ বিহারে যাদব ভোট রয়েছে 14 শতাংশ ৷ তাই এই দুই রাজ্যে বিজেপি যাদবদের মন জিততে মরিয়া ৷ তারই প্রভাব পড়েছে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৷