পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

CBSE 10th Topper: অনাথ করেছে কোভিড, শোকেও অবিচল সিবিএসই দশমের টপার

সিবিএসই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় 99.8 শতাংশ নম্বর পেয়ে ভোপালের টপার (CBSE 10th Topper) হয়েছে বনীশা পাঠক (Vanisha Pathak) ৷ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই কোভিড (Covid 19) কেড়ে নেয় তার বাবা-মায়ের প্রাণ ৷

vanisha-pathak-whose-parents-died-in-covid-scored-99-dot-8-percent-marks-in-cbse-10th-exam-in-bhopal
অনাথ করেছে কোভিড, শোকেও অবিচল কন্যা সিবিএসই দশমের টপার

By

Published : Aug 5, 2021, 5:21 PM IST

ভোপাল, 5 অগস্ট : সিবিএসই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় (CBSE 10th Exam Result) 99.8 শতাংশ নম্বর পেয়েছে ভোপালের বনীশা পাঠক (Vanisha Pathak) ৷ ইংরেজি, সংস্কৃত, বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানে সে 100-র মধ্যে 100 নম্বর পেয়েছে ৷ অঙ্কে পেয়েছে 97 ৷ পড়াশোনায় বরাবরই ভালো বছর 16-র মেয়েটি ৷ তবে তার সাফল্যের এই সিঁড়ি যথেষ্ট অমসৃণ ৷ তাতে জড়িয়ে এক রাশ যন্ত্রণা ৷ কারণ কন্যার এই বিরাট সাফল্যের দিনে পাশে নেই তার বাবা-মা ৷ বনীশা যখন পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখনই করোনা ভাইরাস (Coronavirus) কেড়ে নিয়েছে তার মাথার উপরের ছাতাটাকে ৷ শোকের আবহেও থেমে যায়নি মেয়ের চলার গতি ৷ কারণ তার লক্ষ্য ছিল, বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ ৷

বনীশার মা সীমা পাঠক ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা আর বাবা জীতেন্দ্র পাঠক আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন ৷ গত এপ্রিল মাসে তাঁরা দু‘জনেই কোভিডে (Covid 19) আক্রান্ত হন ৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দু‘জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় ৷ হাসপাতাল থেকেই ভিডিয়ো কলে প্রতিনিয়ত মেয়েকে সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন তাঁরা ৷ বনীশার কথায়, "মায়ের সঙ্গে শেষ যখন কথা হয়, তখন তাঁর অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না ৷ তবে তিনি বলেছিলেন, তুমি পড়াশোনায় ফোকাস করো ৷ নিজের উপর আস্থা রাখো ৷ খুব শিগগিরই আমরা বাড়ি ফিরে আসব ৷" তবে কথা রাখতে পারেননি তিনি ৷

আরও পড়ুন:সামান্য বেড়ে দৈনিক সংক্রমণ 42 হাজারেই

বনীশার বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, যে কোনও সময়ে নেমে আসতে চরম অন্ধকার ৷ কোভিড অনাথ করে দিতে পারে তাঁর সন্তানদের ৷ তবে কোনও অবস্থাতেই যাতে মেয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ঘাটতি না-পড়ে, তা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য ছিল তাঁর ৷ তাই তো তিনি মেয়েকে বলেছিলেন, জীবনে ভাল সময় আসে, আবার চলে যায় ৷ খারাপ সময়ও আসে, সেটাও চলে যায় ৷ জীবন কখনও থেমে থাকে না ৷ যেন মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখতে পেয়েই মেয়েকে শক্তি জুগিয়েছিলেন জীতেন্দ্রবাবু ৷

আরও পড়ুন :CBSE RESULT : সিবিএসই রেজাল্টে পাশের হারে রেকর্ড, টুইটে শুভেচ্ছা মোদির

বাবার এই কথাগুলিই আজ বনীশার জীবনের বেদবাক্য ৷ বাবা-মায়ের এই মোটিভেশনই তাঁকে চরম শোকের দিনে অবিচল হতে শিখিয়েছে ৷ ছোট্ট কিশোরীকে এক লহমায় অনেকটা বড় করে দিয়েছে পরিস্থিতি ৷ তাই তো জীবনের এত বড় একটা দিনে বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে গলা কেঁপে উঠলেও চোখের জল সে ধরে রাখতে শিখেছে ৷ কারণ সে জানে, ছোট্ট ভাইয়ের অভিভাবক এখন সে-ই ৷ বনীশার কথায়, "ছোট ভাইটার দিকে তাকিয়ে ঠিক করলাম, আমায় ওর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে ৷ ও যাতে ওর দিদিকে দেখে উৎসাহিত হতে পারে, জীবনে এগিয়ে যেতে পারে ৷ বাবা-মায়ের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারে ৷"

আরও পড়ুন:ঘোষিত হল সিবিএসই দশম শ্রেণির ফল, পাশের হার 99.04 শতাংশ

শুধু বনীশা নয়, কঠিন বাস্তব বড় করে দিয়েছে বনীশার ভাইকেও ৷ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তাই দিদির সাফল্যের দিনে সবসময় তার পাশে থেকেছে ৷ বলেছে, "বাবা-মা যখন চলে গেলেন, তখন আমি চেষ্টা করেছি দিদির সামনে যাতে কেঁদে না-ফেলি ৷ তাহলে আরও কষ্টে ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে ৷" সেটা অবশ্য হতেও দেয়নি বনীশা ৷ বাবা-মায়ের মোটিভেশন ও ভাইয়ের সাহচর্যকে সঙ্গী করে সে শোকের মধ্যেও অবিচল থেকে নিজেকে পড়াশোনায় ডুবিয়ে রেখেছে ৷ ফলও এসেছে হাতেনাতে ৷

এখন তার লক্ষ্য বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ করা ৷ আইআইটি জেইই-তে ক্র্যাক করতে চায় বনীশা ৷ ভাইয়ের পাশাপাশি সবার কাছে সে হয়ে উঠতে চায় একটা দৃষ্টান্ত ৷ কোভিড অনাথ করেছে বহু ছেলেমেয়েকে ৷ অনিশ্চিত করে দিয়েছে অনেকের ভবিষ্যৎ ৷ তাদের জন্য বনীশার বার্তা, "যে পরিস্থিতিই আসুক, তাকে নিজের উপর প্রভাব ফেলতে দিও না ৷ একাগ্র চিত্তে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাও ৷ সাফল্য আসবেই ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details